আওয়ার ইসলাম : মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা। সরিয়ে নেওয়া হবে নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার। সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বাড়ি নিয়েও।
এ ছাড়া চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র এবং শাহ আজিজুর রহমান, সবুর খান, মশিউর রহমান জাদু মিয়াসহ সাতটি রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কবরও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে রক্ষিত স্থপতি লুই ইসাডোর কানের তৈরি করা জাতীয় সংসদের ৮৫৩টি মূল নকশা বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ ভবনে এসে পৌঁছে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং স্থাপত্য অধিদফতর মূল নকশা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সরকারকে একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপর গণপূর্ত অধিদফতর প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, শুধু জিয়াউর রহমানের কবর নয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে লুই কানের নকশার বাইরের সব স্থাপনা দুই মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে। ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ ৮ জন রাজনৈতিক নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলানগরে আছে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরো ৭টি স্থাপনা।
মূল নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পাশাপাশি শেরেবাংলানগরে নতুন সচিবালয় হওয়ার কথা। জানা গেছে, লুই কানের মূল নকশা না থাকায় সংসদ ভবন এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম আটকে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে এগুলোর সন্ধান মেলে। এরপর লুই কানের উত্তরসূরিদের কাছ থেকে নকশা সংগ্রহের বিষয়ে সম্মতি নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এগুলো আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নকশাটি করেন তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের জন্য শেরেবাংলানগরে সচিবালয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেসব নকশায় মসজিদ ছিল, মাঝে বাগান ছিল, চন্দ্রিমা উদ্যানের কাছে একটি বড় সড়ক ছিল, এর সামনে লেক ছিল, এরপর সংসদ ভবন ছিল। প্রথম ধাপে ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের নকশা করা হয়। এর সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের পরিকল্পনা করা হয়। বাকি জায়গায় সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতাল ও সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার কথা। কিন্তু নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে মধ্যবর্তী এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মাজার ও কবরস্থান। সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর আয়তনের চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝে বিশাল এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার কমপ্লেক্স। আর সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে পাঁচ বিঘার বেশি জায়গায় করা হয়েছে ‘জাতীয় কবরস্থান’। সেখানে সবুর খান, শাহ আজিজ, মশিউর রহমানসহ সাতজনকে সমাহিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া নকশা উপেক্ষা করে আসাদ গেটের উল্টো দিকে সংসদ ভবনের জায়গায় স্থাপন করা হয় পেট্রল পাম্প। বিএনপি সরকার মূল সংসদ ভবনের পাশে খোলা সবুজ চত্বরে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ করে। সংসদ ভবনের পূর্ব প্রান্তে খেজুর বাগান সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বর্তমানে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল এমআরটি লাইন ৬-এর রুট রয়েছে। ষড়যন্ত্র জনগণ মানবে না— ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার সচেতনভাবে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চায়।
এ জন্য তার কবর সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। দেশের জনগণ এ ধরনের হঠকারী কাজ কখনই মেনে নেবে না। গতকাল সকালে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ফখরুল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল।
এ সময় সংগঠনের সভাপতি শামা ওবায়েদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, লুই আই কানের মূল নকশা আনার মূল উদ্দেশ্য জিয়াউর রহমানের কবর সরানো। সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধের মূলনায়কদের বিশেষ করে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জিয়াউর রহমানের নাম বাংলাদেশের মাটি থেকে মুছে ফেলতে। কিন্তু তা কোনো দিন সম্ভব হবে না। কারণ জিয়াউর রহমানের নাম দেশের সব মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তাই পদক কেড়ে নিয়ে বা তার কবর সরিয়ে দেওয়ার মতো হঠকারী কাজ দেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনি
আআ