আতাউর রহমান খসরু, আলেম ও সাংবাদিক
নামাজে মন বসছে না কিছুতেই? দিন কেটে যায় মাস চলে যায় কিন্তু কুরআন তেলাওয়াতের ইচ্ছে জাগে না মনে? পান-সিগারেট আড্ডায় উড়ে যায় হাজার টাকা কিন্তু অসহায় পথিক, অভুক্ত ভিখারি দেখলে মেজাজ বিগড়ে যায়? অন্যায় ও পাপ করে করে জীবন ক্লান্ত তবুও দমে না পশুমন? পশুত্বের বশে স্বস্তি নেই কিছুতেই? সুখের সব উপকরণ থাকার পরও মনে হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে অসুখী আমি?
ভাববেন না, এ শুধু আপনার অবস্থা। এ রোগ আমার, আপনার, আমাদের সবার। এ আমাদের ঈমানের সাধারণ চিত্র। প্রতিদিন পাপের পদভারে মরে যাচ্ছে আমাদের সুস্থ্য জীবনবোধ। থেমে যাচ্ছে ঈমানের আলোক প্রবাহ। পাপের খড়ায় মরু হয়ে যাচ্ছে জীবন নদীর দুপাড়। আমরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছি জাগতিক জীবনের সুখ ও স্বস্তি থেকে, তেমন ফিরে যাচ্ছি প্রভুর দরবারে খালি হাতে। অথচ আমরা কতো নির্বিকার! আমাদের অন্ধ মোহ আর বিপথগামিতা দেখে দয়ালু প্রভু আমাদের বলছেন, ‘কোথায় যাচ্ছো তোমরা!?’ ফিরে এসো আমার আনুগত্যের শীতল ছায়ায়, অনুগ্রহের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে। আমি তোমার পথ চেয়ে আছি। তোমার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত আমি। তুমি প্রস্তুত তো আমার ভালোবাসায় সিক্ত হতে?
আসুন! ঈমানের স্বাদ নিন!! ফিরে আসুন জীবনের সবুজ উপত্যকায়। অপার্থিব সুখ, সীমাহীন স্বস্তি ও গভীর আস্থা-ভালোবাসায় আনন্দময় করুন জীবনকে। হ্যা, ঈমানের স্বাদেই কেবল জীবন প্রফুল্ল হতে পারে, প্রশান্তি পেতে পারে মন। কিন্তু ঈমানের স্বাদই বা কী? আর কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব? ইমাম নববি রহ. বলেন ‘ঈমানের স্বাদ হলো, আল্লাহর আনুগত্যে প্রশান্তি পাওয়া, আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টি লাভে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা এবং পৃথিবীর সবকিছুর উপর তাকে অগ্রাধিকার দেয়া। আল্লাহ ও রাসুল সা. এর আদেশ-নিষেধ পরিপালনের মাধ্যমে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা।’
[আবুল আ’লা মুহাম্মদ আবদুর রহমান মুবারকপুরি রহ., তুহফাতুল আহওয়াজি, খ--৭, পৃষ্ঠা-৩১২]
আর তা অর্জনের পথ হলো, আল্লাহ ও তার রাসুল সা. এর প্রেমের সঞ্জীবনী পানে মনকে সুস্থ্য-সবল করে তোলা। ত্যাগ ও আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর রঙে রঙিন করা। জীবনে ও মননে আল্লাহ ও রাসুল সা. কে ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্থান দিতে পারলেই কেবল আমাদের মোহমুক্তি ঘটবে, আমরা মুক্তি পাবো কলুষিত জীবনের যন্ত্রণা থেকে। লাভ করবো ঈমানের স্বাদ, অভাবনীয় সুখ ও সমৃদ্ধি। জাগতিক মোহ-ই পাপের আকর। আর পাপে বিপর্যস্ত হয় মন ও জীবন। ঈমানের রঙে মন রাঙালে, আল্লাহর নির্দেশে জীবন চালালে, পৃথিবীর কোনো মোহ আচ্ছন্ন করবে না আমাদের, কোনো বিপদে কাঁপবে না হৃদয়। হতাশা আসবে না কিছুতেই। আমরা হবো, আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট, জীবনের প্রাপ্তিতে পরিতৃপ্ত। হবো সত্যপথের প্রত্যয়ী পথিক; নিজের জন্য এবং সমগ্র সৃষ্টির জন্য উষ্ণহৃদয় ও নিবেদিতপ্রাণ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন ‘যার মাঝে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়, আল্লাহ ও তার রাসুল পৃথিবীর সবকিছু থেকে তার নিকট প্রিয় হবে, সে শুধু আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসবে এবং সে কুফরির দিকে ফিরে যাওয়া এমন অপছন্দ করবে, যেমন অপছন্দ করে আগুনে পুড়তে।’ [সহি মুসলিম : ৬৭]
অন্য হাদিসে বলেন ‘সে ঈমানের স্বাদ পাবে যে আল্লাহকে প্রভু হিসেবে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদকে নবী ও রাসুল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।’ [সুনানে তিরমিজি : ২৬২৩]
ঈমানের স্বাদ নিন!! পাল্টে দিন নিত্যজীবন। বিশ্বাস করুন, পাল্টে যাবে আপনার জীবনবোধ, আবেগ-অনুভূতি; পাল্টে যাবে চেনাজানা পৃথিবীটাই। ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহ. বলেন ‘যারা ঈমানের স্বাদ পায়, তারা অন্য মানুষে পরিণত হয়। তারা আল্লাহতে আনন্দ পায়, আল্লাহতেই সন্তুষ্ট থাকে আর তার আনুগত্যেই শীতল করে চোখ। পৃথিবীর কোনো প্রাপ্তি, কোনো সুখ তার তুল্য হতে পারে না। এ তৃপ্তির কোনো উপমা নেই। তাদের অবস্থা জান্নাতবাসীর মতো জীবনের প্রতি যাদের কোনো অভিযোগ নেই।’ [সূত্র ইন্টারনেট]
তাদের অভিযোগ থাকে না মৃত্যুর প্রতিও। তারা জীবনের প্রতি নিরুদ্বেগ, মৃত্যুর প্রতি নিস্পৃহ। ঈমানের স্বাদ পেয়েছিলেন হজরত ইবরাহিম আ.। তাইতো দ্বিধা করেন নি জনমানবহীন বিরাণ ভূমিতে স্ত্রী-পুত্রকে রেখে আসতে, হৃদয় কাঁপে নি লেলিহান অগ্নিশিখা দেখেও। ঈমানের স্বাদ পেয়েছিলেন হজরত সুমাইয়া ও খুবাইব রা.। ফলে হাসিমুখে আলিঙ্গণ করেন মৃত্যুকে। কী অপার্থিব সুখে তৃপ্ত ছিলেন তারা! কোথায় পেয়েছিলন সীমাহীন নির্ভরতা? হে আল্লাহ! আমাদের সত্যিকার ঈমান দিন। ঈমানের স্বাদে পরিতৃপ্ত করুন আমাদের জীবন ও মন।
এ সুখ, এ তৃপ্তি, ভালোবাসার এ পরশ পেতে যদি আপনার ইচ্ছে হয়, তবে আপনাকে কিছু বিষয়ের অনুশীলন করতে হবে। প্রস্তুত করতে হবে নিজেকে স্বর্গীয় সুধা পানের জন্য। শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন ‘ঈমানের স্বাদ পেতে হলে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হোন। নিষ্ঠার সঙ্গে তার ইবাদত করুন। তার বড়ত্ব ও দয়ার কথা স্মরণ করুন। স্মরুণ করুন, মৃত্যু, পরকাল, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা। সর্বপোরি পরিহার করুন, পাপের পঙ্কিল পথ।’ [সূত্র ইন্টারনেট] আমাদের তাওফিক দিন, ইয়া রব্বাল আলামিন!!
আআ