বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন: টিএসসিতে শহীদ পরিবারের আর্তনাদ দ্বীনিয়াতের প্রধান মাওলানা সালমানের জন্য দোয়া চাইলো পরিবার রংপুরে জুম্মাপাড়া মাদরাসার ২ দিন ব্যাপী তাফসির মাহফিল আগামীকাল ন্যায়পরায়ণ-আল্লাহভীরু শাসক ছাড়া শান্তির আশা করা যায় না: চরমোনাই পীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শরীআহ চেয়ারম্যান হলেন মাওলানা মাহফজুল হক সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চাই: অ্যাটর্নি জেনারেল আসছেন না মাওলানা সাদ; আগের নিয়মেই চলবে কাকরাইল ও ইজতেমার মাঠ কাল বাদ ফজর বসুন্ধরা মারকাজে বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে

নভেম্বরে শিশুহত্যা ১৭, ধর্ষণ ৫৬

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

khunআওয়ার ইসলাম: নভেম্বর মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র উঠে আসে। এ মাসে শিশু নির্যাতন ও হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। এছাড়াও নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, আত্মহত্যা, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নভেম্বর মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:
ধর্ষণ: নভেম্বর মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৬ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২৪ জন, ২০ জন নারী, ৯ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে, ৩ নভেম্বর রংপুর নগরীর নার্র্সিং ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রীকে গণর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ভোলায় নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয় ২১ জন নারী।

আত্মহত্যাঃ নভেম্বর মাসে আত্মহত্যা করে ৬৫ জন । এদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ৪০ জন নারী। শরীয়তপুরে বল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করে এক স্কুলছাত্রী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোশাক কিনতে না পারার কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

শিশু হত্যাঃ নভেম্বর মাসে ১৭ শিশুকে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হয় ২২ জন শিশু। লালমনিরহাটে কমলা চুরির অভিযোগে দ্বিতীয় শ্রেণির এক মাদ্রাসা শিশু শিক্ষার্থীকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছে এক ব্যক্তি। পটুয়াখালীতে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে নিজ সন্তানকে হত্যা করে এক পিতা।

যৌতুকঃ নভেম্বর মাসে যৌতুকের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে ৭ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ৪ জন। যৌতুকের কারণে রাজধানীতে হুসনা নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে, মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে গৃহবধূর স্বামী। টাঙ্গাইলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেশমা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পাষ- স্বামী।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে নভেম্বর মাসে নিহত হন ২৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন, নারী ৬ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৭ জন নারী, আহত হয় ৭ জন। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এই সব মৃত্যু সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে।

সামাজিক অসন্তোষঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নভেম্বরে নিহত হয়েছেন ১৫জন ! আহত হয়েছেন ৬৬২ জন। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে এক ব্যাক্তি নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি-জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

খুনঃ নভেম্বর মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ১০০ জন ও আহত হয় ৯৫ জন। কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও তার গাড়ি চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃৃত্তরা। পাবনায় রফিকুল নামে এক যুবলীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাঃ নভেম্বর মাসে ২ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহতের সংখ্যা ৪ জন, আহত হয় ১ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২১৬ ও আহত ২৮৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছে ২০৩ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪,আহত হয় ১৪ জন। বোমা বিস্ফোরণে আহত ৪ জন। ক্রসফায়ারে নিহত হয় ১২ জন। এদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৬ জন ও র‌্যাবের হাতে ৬ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৪ জন, আহত হয় ৪ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৭জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গণগ্রেফতার করা হয় ১৩২জনকে। এ মাসে নিখোঁজ হয় ১৭ জন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার, সামাজিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ