রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৫ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মিছিলে এত মানুষ! মননে কই?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমিন ইকবাল

amin-iqbal-copyআরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলছে। জাতিগত দ্বন্দ্বে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে স্থানীয় বৌদ্ধরাÑ যাদের ধর্মে লেখা ‘জীব হত্যা মহাপাপ!’ দাঙ্গা থামানোর বুলি আওড়িয়ে নিরীহ মুসলমানদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত দেড় মাসে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের অমানবিক অত্যাচারে ১৩০ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। তবে, লন্ডন থেকে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম রাখাইন রাজ্যের অবস্থাকে নরকের সঙ্গে তুলনা করে বলছেন, সেখানে দেড় মাস ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে সাড়ে তিনশ’ জন নিহত হয়েছে।

সন্তানের সামনে মাকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটে বেড়াচ্ছে। আরাকানের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নির্যাতিত মানুষের কান্না; বুকের রক্তে লাল হচ্ছে মুসলিম পল্লী।

বিশ্ব মানবতার ফর্মাল বাজারে রোহিঙ্গাদের কান্না শোনার কেউ নেই! মানবিক বৌদ্ধরা শীতের ওম নিতে কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমচ্ছেন! মুসলিম বিশ্ব ব্যস্ত শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব নিয়ে। কেউ নিজের কুরসি হারানো ভয়ে মুখে লাগাম টানলেও কেউ ব্যস্ত ইসরায়েলের আগুন নেভানোর কাজে। অথচ, এই ইসরায়েলের হাত লাখো ফিলিস্তিনিদের তাজা রক্তে আগুনের চেয়েও লাল হয়ে আছে!

বিশ্ব সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটে ছাড়ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। কিন্তু যাবে কোথায়? কে দেবে একটু আশ্রয়? অনেকটা অনিশ্চিত জীবনে পা বাড়াচ্ছেন তারা; তবু যদি পাষণ্ডদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়! নিজের ঈমান-বিশ্বাস নিয়ে আরও কটা দিন বেঁচে থাকা যায়! বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সফুরা নাকে এক রোহিঙ্গা মা বলেছেন, ‘যদি বাংলাদেশে মারা যাই কেউ অন্তত জানাযা পড়বে!।

আরাকানের পার্শ্ববর্তী দেশ মুসলমানদের। জাতি ভাইদের। নবী মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই।’ হয়তো এই আশায় রোহিঙ্গারা ছুটে আসছে বাংলাদেশের দিকে। ভাঙা তরী নিয়ে কোনোরকম পাড়ি দিচ্ছে নাফ নদী। তবে, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না; নিরাপত্তার অজুহাতে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকজন ঢুকতে পারলেও বড় অংশ রোহিঙ্গা তীরে ভিড়তে পারছে না। নদীর ওপাড়ে খুনি, এপাড়ে অস্ত্র হাতে নিরাপত্তাবাহিনী। কোথায় যাবে নির্যাতিত মুসলিমরা?

ভাঙা তরী, নড়োবড়ে নৌকো! সামান্য বাতাসেই ডুবে যাওয়ার উপক্রম। সঙ্গে খাবার নেই; নেই শীতের পোশাক। কুয়াশা ভেজা শীতল রাতে হঠাৎই তলিয়ে যাচ্ছে ভাঙা তরী। নদীতে ভাসছে মানবতা! সাঁতার না জানা রোহিঙ্গাদের লাশ ভেসে উঠছে পরদিন সকালে। খাবারের অভাবে কঙ্কাল হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু। যারা বাংলাদেশে ঢুকতে পেরেছেÑ তাদেরও দিন কাটছে শঙ্কায়। ঘর নেই, বাড়ি নেই, খাবার নেই, নেই পরিধানের পোশাকও। এই অবস্থায় কিভাবে দিন কাটাচ্ছে টেকনাফ এলাকায় আশ্রিত শরণার্থী রোহিঙ্গারাÑ এমন খবর ক’জন রাখি?

রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিন মিছিল হচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মানববন্ধন হচ্ছে। মানববন্ধন-মিছিলে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মুসলমান। সেই বাইতুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। শহীদ মিনারে ‘স্টপ’ লেখা ফেষ্টুন হাতে মানবতার সারি। মিছিলে গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিচ্ছি; ভাষণ দিচ্ছি রক্তের বদলা নেয়ার হুঙ্কার ছেড়ে। মিছিল শেষে ব্যানার গুছিয়ে বাড়ি ফিরছি। ঠিক আগের মতোই খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমুচ্ছি।

আমরা মিছিল নিয়ে ব্যস্ত! ওদিকে টেকনাফে না খেয়ে মরছে শরণার্থী মুসলিমরা। রাতে খোলা আকাশের নিচে কনকনে কাঁপছে বৃদ্ধরা, অনাহারী শিশুরা। পাচ্ছে না উপযুক্ত চিকিৎসাও। এদিকে, আরও একটি মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা! হয় আফসোস, মিছিলে এত মানুষ! মননে কই?

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ