আওয়ার ইসলাম:
রিকু আমির: ‘একাই থাকবেন নাকি’?
‘জ্বি, আমি ব্যাচেলর’।
‘তাহলে তো সিঙ্গেল সিট হলেই চলে। হ্যাঁ, খালি আছে। এক সিটের মাসিক ভাড়া চার হাজার টাকা’।
‘আচ্ছা বুঝলাম, তো গ্যাস, পানি, কারেন্টের বিল?’
‘আপনার কী ল্যাপটপ আছে’।
‘হুম, একটা ল্যাপটপ আরেকটা ডেস্কটপ’।
‘তাহলে ল্যাপটপের জন্য মাসে দিতে হবে ৫০০, ডেস্কটপের জন্য ৭০০’।
‘ফ্যান আছে তো নাকি?’
‘হুম, একটা সিলিং ফ্যান, আরেকটা টেবিল ফ্যান’।
‘তাহলে সিলিং ফ্যানের জন্য মাসে ৫০০, টেবিল ফ্যানের জন্য ২০০’।
এসব কথোপকথোন রাজধানীর এক বাসার ম্যানেজার রাজু ও ভাড়া নিতে ইচ্ছুক চাকুরিজীবী ইমতিয়াজ আহমাদের মধ্যকার। পান্থপথ সিগন্যালের কাছে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকের সংলগ্ন গলিতে অবস্থিত এই বাসা নং ৭২।
সবকিছু যেমন তেমন বিদ্যুৎ বিল ‘পরিশোধনামা’ শুনে চমকে উঠেন ইমতিয়াজ। এসময় আমাদের সময় ডটকমও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এ ঘটনা সোমবার রাত ৮টার দিকের।
বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে ম্যানেজার রাজু ও ইমতিয়াজের মধ্যে আরও কথা চলছিল। ইমতিয়াজ খুব কৌতুহলী সুরে বলে ওঠেন, আমার তো ইস্ত্রিও আছে।
কম্পিউটার কম্পোজ করা সবুজ রঙের কাগজে ছাপানো একটি তালিকা দেখে রাজু বলেন, ‘‘একটু রাখেন, দেখে নিই। ইস্ত্রি-ইস্ত্রি, কইরে ইস্ত্রিৃ..হ্যাঁ, পাইছি, এই যে দেখেন, এজন্য আপনাকে মাসে দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। আপনার কী গেস্ট আসবে?’’
ইমতিয়াজের উত্তর, ‘হ্যাঁ, সেটা তো থাকবেই, মাঝে মধ্যে ভাই-ব্রাদাররা তো আসবেই’।
‘শোনেন, আপনাকে প্রতি গেস্টের জন্য ১০০টাকা করে দিতে হবে। অর্থাৎ গেস্ট যদি ১ রাত থাকেন, তবে ১০০, ২ রাত হলে ২০০, এরকম আরকি’।
‘কেন, এরকম কেন ভাই’?
‘কেন এরকম হবে না ভাই, বুঝেন্না, গেস্ট আসলে বাড়তি পানি খরচ হবে, বিদ্যুৎ যাবে। এসব হিসাব করলেতো আরও বেশি নেয়া উচিৎ। আমরা তো সামান্য নিচ্ছি। ১০০ টাকা কোনো ব্যাপার হলো নাকি? শোনেন, ঢাকা শহরে বহুত বাসা আছে। আমাদের এখানে সব ধরণের সুবিধা আছে। সিকিউরিটি তো কড়া। এই যে দেখেন এই দারোয়ানটা সব সময় থাকে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে পারে না। আর ওইযে বিদেশি কুত্তাটা (অ্যালসেশিয়ান শেফার্ড) দেখছেন। দেখছেন, কী চেহারা, হেব্বি পাহারা দেয়। পালানোর উপায় নাই এখন যেই হোক, আর চাকরিজীবিদের জন্য আমারা কনসিডার করি। রাত করে বাসায় আসলেও দারোয়ান গেট খুলে দিবে’।
ইমতিয়াজ শুনতে শুনতে হাঁফিয়ে উঠছিলেন। দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে বলেন, ‘খাবার-দাবারের ব্যবস্থা কী’।
রাজু ঠোঁটের ডগায় থাকা মুখস্ত কথা বের হয়। চটচট করে বলতে থাকেন, ‘দুটো ব্যবস্থাই আছে। আপনি চাইলে রান্না করে খেতে পারবেন, চাইলে আমাদের ক্যান্টিনেও খেতে পারবেন।’
‘ক্যান্টিন-কুন্টিনের খাওন ভাল লাগে না ভাই, আমি রান্না করেই খাব’।
‘সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিতে হবে আড়াইশ টাকা।’
ইমতিয়াজ ক্যান্টিন দেখতে চাইলে রাজু সেখানে নিয়ে যান। সঙ্গে যায় আমাদের সময় ডটকমও। ভবনটির গেট দিয়ে প্রবেশ করলে ডান দিকেই সেই ক্যান্টিন।
ডান হাত দিয়ে রাজু ক্যান্টিন দেখিয়ে বলেন, ‘এখানে সব উন্নত মানের খাবার। বাসির গুষ্টিও নাই। কী চান আপনে। ছোট মাছ-বড় মাছ, শুঁটকি, গরু-খাসি, দুধ-ডিম, ভাজি, তরকারি, নিরামিশ, কয়েক পদের ভর্তা, সবই আছে. .. ..’
ইমতিয়াজ বলেন, প্রতি বেলার খাবার কতো পড়ে।
উত্তর দেয়ায় অপেক্ষায় থাকা রাজু চটজলদি বলে উঠেন, ‘৫০টাকা। আমরা যেই ধরণের খাবার দিই। হওয়ার কথা কমপক্ষে ১০০’।
এরপর ইমতিয়াজ উৎসাহ হারিয়ে চলে আসেন গেটের কাছে। রাজু বলেন, ‘কী ভাই, রুম দেখবেন না’।
ব্যঙ্গ করে ইমতিয়াজ বলেন, ‘আগে আপনারে দেখে নিই, পরে আপনের মালিককেও দেখব। কীভাবে এতো চাপা মারলেন, আমি পুরা টাস্কি খাইয়া গেলাম। এমন কথাবার্তা জীবনেও শুনি নাই।’
এরপর ইমতিয়াজ বাড়ির আঙিনা ত্যাগ করেন। সঙ্গে আমাদের সময় ডটকমের প্রতিবেদকও বেরিয়ে পড়ে।
একটি প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংকার ইমতিয়াজ অট্টহাসি দিয়ে বলেন, ‘ভাই, আমার জীবন সার্থক। এমন একটা বাসায় আসছিলাম ভাড়া নেওয়ার জন্য। চার্জের চাপ শুনে আমি চিড়া হইয়া গেলাম’
এরপর আমাদের সময় ডটকম ম্যানেজার রাজুর সঙ্গে কথা বলে ছাত্র পরিচয় দিয়ে। রাজু বলেন, ‘কোথায় পড়েন’।
‘জ্বী, তেজগাঁও কলেজে, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।’
‘শোনেন আমাদের এখানে সব ধরণের ছাত্র আছে। কোচিং করতে আসা ছাত্র থেকে শুরু করে, বিসিএস পর্যন্ত, সবই আছে। ছাত্রদের আমরা এক রেটে রাখি। ৫০০০ টাকা মাসে। এর মধ্যেই সিটভাড়া, খাওয়াসহ সব। তবে ল্যাপটপ ইস্ত্রি চালালে, গেস্ট আসলে বাড়তি খরচ দিতে হবে, আলাদা রান্না করলে গ্যাস বিল দিতে হবে। আপনি তো শুনছেনই’’
এরপর আমাদের সময় ডটকম প্রতিবেদক সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে এতোসব চার্জ আরোপ ও আদায়ের বিষয়ে ম্যানেজার রাজুকে প্রশ্ন করলে তিনি কিছুটা ইতস্ততাবোধ করেন।
কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে সাদা চেক শার্ট, বেল্টসহ কালো নরম্যাল প্যান্টের সঙ্গে ইন করা ও চামড়ার স্যান্ডেল পড়া রাজু বলে উঠেন, ‘সব মালিকের ইচ্ছা’
সূত্র: আমাদের সময় ডট কম
এবিআর