আব্দুল্লাহ বিন রফিক
জীবনে সফল হতে কে না চায়? কিন্তু তাই বলে কি সবাই সফল হতে পারে? জীবনের এই চলার পথে বেদনা বিধুর ও বন্ধুর সম পথ তো আমাদের মারাতেই হয়। আবার জীবনে এমন ঘটনাও কিন্তু কম নয় যাতে আমরা নিজেরাই নিজেদের স্ববিরোধী রূপে আত্মপ্রকাশ করি।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের চারপাশে এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি আছে যা মানুষের সফলতার পথে বড় অন্তরায়।
আজ এখানে জীবনযুদ্ধে পরাজিত,ব্যর্থ বা পোড় খাওয়া ব্যক্তিদের এমন কিছু বাজে স্বভাব উল্লেখ করবো যেগুলো একজন মানুষের ভেতর থাকলে অন্তত সফলতা তাকে কোনোদিন হাতছানি দিবে না।
সবসময় বৈধতা তালাশ করা
আপনার ভুল প্রকাশ পেয়ে গেছে সবার আগে গুরুত্বসহ কারণটা অনুসন্ধান করুন। ব্যর্থতা ঢাকতে বৈধতার অজুহাত দেওয়ার অভ্যেস থাকলে আজই এই বাজে অভ্যেসটা পরিহার করুন। নতুবা এই একটা কারণই আপনার জীবনযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সবচে’ বড় হাতিয়ার বনে যেতে পারে। তাই জীবনচক্রের এই বাহনে খুব কেয়ারফুল। সাবধান। নিজের অভ্যেসটা ভালোকরে যাচাই করে নিবেন।
এক গবেষণা মতে, নিজের ভুলগুলোকে বৈধতার বাতাবরণ দিয়ে ঢাকতে যাওয়ার প্রবণতা অন্যের দৃষ্টিতে আপনার বিশ্বস্ততাকে যেমন খাটো করে তেমনি ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্যের ওপর কালিমা লেগে যেতে এক লহমায়। পাশাপাশি নিজস্ব মনোজগতে অকারণ গর্ববোধ বিস্তারের সুখস্মৃতিতে ভাসছেন যা সত্যি আপনাকে একদম তলানিতে নিয়ে ঠেকাবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি মনোযোগ না দেওয়া
আপনার সুস্থতা যদি আপনার সফলতার কারণ ভেবে থাকে তাহলে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিষ্ঠাবান সফলরা নিজের সত্ত্বার প্রতি দৃষ্টি রাখতে ভুল করে না কখনো। পরাজিপরাজিত ও পোড় খাওয়া কপালের মানুষ প্রচুর মেহনত করে বটে তবে স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়ায় এর জন্য বড় ধরণের মূল্য চুকাতে হয় তাদের।
কোনো কাজ অপূর্ণ রেখে দেওয়া
সফলতা হচ্ছে দৃপ্ত প্রত্যয় আর নিরন্তরতার সমার্থক। যদি সদা আপনার নির্দিষ্ট প্রকল্প ও প্ল্যান আরো কোনো ভালো কাজের জন্য রেখে দেন তাহলে সবশেষে আপনার ভাগ্যে হতাশা ছাড়া আর কিছু্ই জুটবে না।
সমালোচনা সহ্য করা
আমার সমালোচনা হবে কেউ তা পছন্দ করে না। প্রকৃতপক্ষে একে যদি গঠন ও নির্মাণের দৃষ্টিতে শিক্ষণীয় হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাহলে জীবনে সফলতার পথ প্রশস্ত হতে পারে।
নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করা
পরাজিত ও হীনমন্য ব্যক্তিরা স্রোতের মাঝে হারিয়ে যায়। আর সফল ব্যক্তিগণ হাজারো মানুষের ভিড়ে চমকাতে থাকেন।
নেতিবাচক বস্তু উপেক্ষা করা
নেতিবাচক চিন্তা সংক্রমণের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক গবেষণায় দেখা যায়, যদি আপনার আশেপাশে নেতিবাচক চিন্তার কোনো মানুষ থাকে তখন তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতেও ক্রমান্বয়ে ছড়াতে শুরু করবে।
অন্যদের ভরসায় থাকা
এটা খুব ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন, আপনার হাত ধরে জীবনের জটিলতা পার করে দিতে কেউ এগিয়ে আসবে না। যদি আপনি নিজস্ব লক্ষ্যে অটল থাকেন এবং তা সাধন করতে চান তাহলে নিজস্ব চেষ্টায় আপনাকে সর্বোচ্চ উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
অন্যকে খাটো করা
প্রতিযোগিতায় কোনো অন্যায় নেই। অধিকাংশরাই ভিড় ঠেলে সামনে উঠে আসতে চায়। এএকটি কথা যা আপনার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ, নিজস্ব মনোযোগ আপন সত্ত্বার সর্বোচ্চ উন্নতির প্রতি আপনাকে নিবদ্ধ রাখতে হবে। অণঅন্যকে কখনো খাটো চোখে দেখবেন না। অন্যের যোগ্যতাকে আপনি যদি শ্রদ্ধা জানাতে না পারেন তাহলে নিজের যোগ্যতাকে আপনি কিভাবে সম্মান করবেন?
কথাবার্তায় দূর্বলতা
সবার সাথে খুব আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা নিয়ে চলফেরা করতে হবে। এভাবে সবার সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে কথাবার্তার অনুশীলন করতে থাকলে কথা-বার্তা ও আলাপ-আচেরণের দূর্বলতা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। আর এটা সফলতার জন্য খুব জরুরী।
হেলায় খেলায় সময় নষ্ট করা
হেলায় খেলায় সময় নষ্ট করার এই বাজে অভ্যাস জীবনের উন্নতির পথে সবচে’ বড় অন্তরায়। আপনাকে এর থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। জীবনে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে সময়ের মূল্যের তুলনায় পৃথিবীর আর সবকিছুই ছিলো গৌণ।
আস্থার স্বল্পতা
চোখে চোখ না রাখা। অবাঞ্চিত হাত-পা নড়াচড়া এবং বাজে বডি ল্যাঙগুয়েজের কিছু লক্ষণ আছে যা আস্থার স্বল্পতা প্রকাশ করে। আর ব্যর্থ ও পরাজিত ব্যাক্তিদের মাঝে এটা সচরাচর দেখা যায়।
নিজকে ভিন্ন ও আলাদা রাখা
নিজকে ভিন্ন ও আলাদা রাখা নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করার শামিল। এটা কোনোভাবে সুস্থ চিন্তাধারার দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে না। সবার সাথে মিলেমিশ কাজ করার যোগ্যতা না থাকলে অনেক যোগ্য হয়েও গ্রহণযোগ্য কিছু করা যায় না।
হীনমন্যতায় ভোগা
যদি আপনার মনে হয়, কোনো কাজ করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয় তাহলে প্রকৃতপক্ষে আপনি হীনমন্যতায় ভুগছেন। যার কারণে আপনি নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা যথাযথ কাজে লাগাতে পারছেন না।
সূত্র: ডন নিউজ অবলম্বনে