সাবের চৌধুরী
প্রত্মতাত্মিক নিদর্শন দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় সর্বপ্রথম ফিলিস্তিনে ‘নিতুফিয়্যুন’ এবং এর আরো পরে আরেকটি জাতি বাস করতো। তাদের ব্যাপারে কিছুই জানা যায় না।
৩২০০ থেকে ২০০০ খৃ. পূর্বাব্দে আরব উপদ্বীপ থেকে হিজরত করে এসেছিলো ‘কেনানি গোত্র’। তাদের বিভিন্ন শাখা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে। তারা প্রচুর সংখ্যক শহর গড়ে তোলে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল য়াবুস (কুদস/ জেরুজালেম)। প্রতিটি শহর ছিল আলাদা রাজ্যের মত। এ কালকে বলা হয় নগর কেন্দ্রিক রাজ্যের কাল। ইতিহাসে ফিলিস্তিন এলাকাকে কেনান দেশ বলেও উল্লেখ করা হয়।
ভূমধ্য সাগর এলাকা থেকে এসে আরেকটি জাতি বাস করতো ফিলিস্তিনের বিলিস্ত নামক এলাকায়। ফলে এদের বলা হত বিলিস্তিনি এবং সে অঞ্চলকে বলা হত বিলিস্তিন। সেখান থেকে এসেছে বর্তমান ফিলিস্তিন শব্দটি।
প্রায় ১৯০০ খৃ.পূ এর দিকে ইরাক থেকে ভাতিজা লূত আ. কে সাথে নিয়ে ফিলিস্তিনে এসে ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসী কেনানিদের সাথে বসবাস করেন। এখানেই তার ঘরে জন্ম নেন ইসমাঈল ও ইসহাক আ.। ইবরাহীম আ. বেঁচে ছিলেন ১৭০ বছর। তাঁরে ছেলে ইসহাক আ. এর ঘরে জন্ম নেন ইয়া‘কুব (ইসরাঈল) আ. প্রায় ১৭৫০ খৃ.পূ সালে। ইয়া‘কুব (ইসরাঈল) আ. এর ছিল ১২ ছেলে। এদের মধ্যে একজন হলেন হযরত ইউসূফ আ.। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ইউসূফ আ. যখন মিশরের অধিপতি হন তখন পিতা ইয়া‘কুবসহ পুরো পরিবারকে মিশরে নিয়ে যান। এ গোষ্ঠিটিই পরবর্তীতে য়া‘কুব আ. এর নামানুসারে বনী ইসরাইল ও তাঁর চতুর্থ ছেলে য়াহুদার নামানুসারে ইহুদী জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমের তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ফেরাউনদের কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়।
১২৫০ খৃ.পূ. মিশরে হযরত মুসা আ. এর আত্মপ্রকাশ। তিনি বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করে ফিলিস্তিনের দিকে রওয়ানা হন। ধাওয়া করতে গিয়ে ফেরাউন ও তার দলবল সমূদ্রে ডুবে মারা যায়। মুসা আ. তাদের নিয়ে সিনাই এলাকায় আসেন। এখানে তারা গরু পুজায় লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন হঠকারিতার কারণে তীহ ময়দানে ৪০ বছর উদ্ভ্রান্তের মত বন্দি থাকে। মুসা আ. এর ইন্তেকাল হয়। ৪০ বছর শেষে নবী ইউশা ইবনে নুন আ. বনী ইসরাইলকে নিয়ে ফিলিস্তিনের আরিহা নগরীতে আসেন ১১৯০খৃ.পূ সালে এবং কেনানীদের একটি অংশ আমালেকা সম্প্রদাযের সাথে জিহাদ করে এ নগর বিজয় করেন। তার পরবর্তি যুগ ১৫০ বছরের সর্দারদের কালো যুগ। এক পর্যায়ে আবার আমালেকারা তাদের তাবুত সহ ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেয়। নির্যাতন চালায়।
এরপর কেনানী বংশীয় বাদশা তালুতের নেতৃত্বে বনী ইসরাইল আমালেকাদের সাথে যুদ্ধ করতে যায় ১০২৫ সালে। সে যুদ্ধে ১৬ বছর বয়সী যুবক দাউদ আমালেকাদের বাদশা জালুতকে হত্যা করলে আমালেকা সে যুদ্ধে পরাজিত হয়।
খৃ.পূর্ব ১০০৪ সালে তালুত মারা গেলে বনী ইসরাইলের নেতৃত্ব দেন হযরত দাউদ আ.। তার নেতৃত্বে খৃ.পূর্ব ৯৯৫ সালের দিকে ইহুদীদের ছোট একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এদিকে কেনানীরা তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে ফিলিস্তিনের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান ছিল। খৃ.পূর্ব ৯৬৩ সনে দাউদ আ.-এর ইন্তেকাল। স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর ছেলে সুলাইমান আ.। তিনি মসজিদে আকসাকে পুনঃনির্মাণ করেন। ইহুদীরা মিথ্যাভাবে দাবি করে, তিনি হাইকাল (বিশেষ ইবাদতখানা) নির্মাণ করেছিলেন। তার রাজত্বকাল ৯২৩ খৃ. পূ. পর্যন্ত। এরপর বাইরে থেকে নানা শক্তি এসে ফিলিস্তিন দখল করে নিয়েছে। ৭৩০খৃ. পূ. তে ইরাকের অসুরীয়রা। ৫৯৭ সনে বাবেলীয়ানরা। ৫৮৬ তে ইহুদীদের উপর বাবেলীয়ান রাজা বুখতে নসরের আক্রমণ ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাবেলীয়দের পর ৫৩৯ আসে পারস্য রাজা দ্বিতীয় হুর্স। ৩৩২ সনে ইতিহাসখ্যাত গ্রিক রাজা আলেকজান্ডার। ৩২৩এ আনবাতরা। ১৬৭তে গ্রীকদের একটি অংশ সালুকী সম্প্রদায় আবার দখল করে।
এরপর ৬৩সনে রোমানরা জেরুজালেম দখল করে। ১৫ খৃ.পূ. সনে কুদসে মারইয়াম আ. এর জন্ম। এবং ঈসা আ. এর জন্মের ৩ মাস আগে যাকারিয়া আ. এর ছেলে ইয়াহয়া আ. এর জন্ম হয়।
এদের মধ্যে হুর্স ও সালুকিরা ছাড়া আর কেউ ইহুদীদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখায় নি; সবাই মৌলিকভাবে ইহুদীদের উপরই হত্যা ও লুণ্ঠণ করে তাদেরকে এ দেশ থেকে উচ্ছেদ করে।
*এর পরের পর্বে দেখুন বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস।
*তথ্য সূত্র এ আলোচনার শেষ পর্বে উল্লেখ করা হবে।
আরআর