আমিনুর রহমান তাজ: গুলশানে বিদেশীদের উপর জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আগামী ৩ মাসের (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) যেকোন সময়ে বিদেশীদের লক্ষ্য করে এই হামলা পরিচালিত হতে পারে। গত সপ্তাহে স্পেশাল ব্রাঞ্চ এ সংক্রান্তে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। ওই রিপোর্টে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
রিপোর্টটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদর দফতরে পৌঁছানোর পর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে হামলা আশঙ্কার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশের কর্মকর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা এই হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা জানান, আগামী তিন মাসের যেকোন সময়ে ডিপ্লোম্যাটিক জোনে অবস্থিত দূতাবাসের কর্মচারী ও বিদেশী নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলাটি পরিচালিত হতে পারে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ওই হামলায় পুলিশ কর্মকর্তা জঙ্গিসহ ২৯ জন বিদেশী নাগরিক প্রাণ হারান। হলি আর্টিজানে হামলার পর সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নড়েচড়ে বসে। জোরদার করা হয় ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নিরাপত্তা। এ মুহূর্তে গুলশানে পুলিশের ১৫টি চেকপোষ্ট রয়েছে। পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টের সাড়ে ৪শ’ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ৭০ জন, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির ১শ’ সদস্য পালাক্রমে গুলশানে নিরাপত্তা ডিউটিতে নিয়োজিত রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ১৫৯ জন ফিল্ড ওয়াচার নজরদারি করছে ডিপ্লোম্যাটিক জোনকে ঘিরে। এরমধ্যে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ৭ জন, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার ৮৪ জন, সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের ২৩ জন, এসবি’র সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন শাখার ৪৫ জন ফিল্ড ওয়াচার সক্রিয় রয়েছে। এরা সকলেই গুলশানে জঙ্গি তৎপরতা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে আগাম তথ্য সংগ্রহ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাড়ে ৪শ’ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে গুলশানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও গুলশানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তষ্ট নন খোদ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারাই। বিদেশীরাও আস্থা পাচ্ছেন না এই নিরাপত্তায়। অভিযোগ রয়েছে, চেকপোষ্টগুলোতে ডিউটি ঠিকমত হচ্ছে না। বেশিরভাগ সময় নিয়োজিত চেকপোষ্টের পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোনেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। অনেকে ফেসবুকও চালান। অন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও কেউ এই নির্দেশের তোয়াক্কা করছে না। এর পাশাপাশি মোবাইল ডিউটিতে থাকা পুলিশ ঠিকমত ডিউটি করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে নিয়মিত মিটিংয়ে পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা প্রায়ই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তা সত্ত্বেও পুলিশের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। কয়েকজনকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপারে শো-কজও করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর সাধারণ মানুষ ও বিদেশী নাগরিকদের মন থেকে আতঙ্ক এখনো মুছে যায়নি। সন্ধ্যা নামলেই গুলশানে সাধারণ লোকজনসহ বিদেশীদের চলাচল কমে যায়। দোকানপাট ও রেস্তোঁরাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। খুব প্রয়োজন ছাড়া বিদেশীরা সন্ধ্যার পর খুব একটা বাইরে বের হন না। বিদেশীদের জন্য নির্ধারিত ক্লাবগুলোতেই তারা সময় কাটান। এরকম ১০১টি ক্লাব রয়েছে গুলশানে। তবে ক্লাবে তাদের অবস্থানটাও খুব সীমিত সময়ের জন্য। রাত ঘনিয়ে আসার আগেই তারা স্ব স্ব আবাসে ফিরে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আমাদেরসময় ডট কমকে জানান, ‘গুলশান নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথা সব সময়ের জন্য রয়েছে’। তিনি বলেন, যতটা সম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। এরপরও যদি কোন হামলার আশংকা গোয়েন্দা রিপোর্টে পাই সেগুলো গুরুত্বসহকারে আমরা খতিয়ে দেখি’।
সূত্র: আমাদের সময়
এফএফ