শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

ভারতে নবীদের কবরে এক সকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম ; দেওবন্দ থেকে

india_nabi

সারহিন্দ সফরের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো নবীদের কবর জেয়ারত৷ সকাল সোয়া ছ'টায় বেরুলাম নবীদের কবর জেয়ারতের উদ্দেশ্যে৷ মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ.-এর দরবার থেকে ২২ কিলেমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ‘বারাস’ নামক স্থানে, ন’জন নবীর কবর রয়েছে৷ আওয়ার ইসলামের অ্যাসাইনম্যান্টও ছিল, কবরগুলো নিয়ে যেন ভালো করে লিখি।

তিনশ' রুপিতে একটা সিএনজি রিজার্ভ নিলাম৷ ওখানে যাওয়ার সরাসরি গাড়ির রাস্তা নেই৷ সিএনজি মহা সড়ক ছেড়ে সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললো৷ মাঝে মাঝে থামিয়ে রাস্তা ঠিক আছে কি না জেনে নিচ্ছিলো৷ বুঝলাম, সে এই পথে নতুন আসছে৷ প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা চলার পর আমরা পৌঁছলাম বারাস-এ৷ ড্রাইভারকে চা নাশতা খেতে বলে আমরা কবরগাহের দিকে পা বাড়ালাম৷ টিলার মতো উঁচু জায়গা৷ চারদিক বাউণ্ডারি ঘেরা৷ প্রধান ফটক পেরুলাম৷ মাদরাসার ছোট ছোট শিশু নজরে পড়লো৷ নিজেদের ক্লাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাদের সাথে মোসাফাহা করলো৷ এগোলাম আরো৷ পাথরে বাঁধাই করা লম্বা একটা সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে৷ সিঁড়ির শেষ মাথার গেটে লেখা রয়েছে, ‘কুবুরে আম্বিয়া আলাইহিস সালাম।’

কবরগুলো কমপক্ষে ছয় হাজার বছর পুরনো৷ হজরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ.কে এলহামের মাধ্যমে জানানো হয়, সিরহিন্দের বারাস নামক জায়গায় নবীদের কবর রয়েছে, তুমি এগুলো সংরক্ষণ করো৷ তিনিই প্রথম এ কবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ তিনি স্বীয় খাস খলিফাদের বলেছিলেন, নবীদের সাথে আমার স্বপ্নযোগে সাক্ষাত হয়েছে এবং আমার সুকুনে কলব হাসিল হয়েছে৷

রুহানি পরশে…

লম্বা লম্বা মোট নয়টি কবর৷ একটি বাদে সবগুলো প্রায় ৭ গজ লম্বা৷ একসাথে পাশাপাশি চারটি, একটু দূরে দু’টি, আর দু’টি আলাদা এবং একটি এক কোণে৷ তবে সব কবরই বাউণ্ডারির ভেতরে৷ ঘুরে ঘুরে প্রত্যকটা কবর পৃথকভাবে জেয়ারত করলাম৷ সাধ্যমতো সুরা কালাম পড়ে ইসালে সওয়াব করলাম৷ অন্তরে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হলো৷ আমার পঙ্কিল হৃদয়ে কি নবীদের রুহানি পরশ লাভ করা সম্ভব? কয়েকজন যুবক (মডার্ণ মুসলিম!) কে কবরে পাশের ফুল গাছের নিচে বসে গল্প করতে দেখা গেলো৷ একজন তালিম দেয়ার সুরে, নিজের মতো করে, নবীদের বিভিন্ন কাহিনি শোনাচ্ছিলো বাকিদের৷ হাসি-ঠাট্টাও চলছে৷ বিষয়টা আমার ভালো লাগলো না৷ বেরিয়ে এলাম মাকবারা থেকে৷

বস্তবেই কি এগুলো নবীদের কবর?

india_nabi2মাকবারার পশ্চিম দিকে রয়েছে ‘মসজিদে আম্বিয়া৷’ মসজিদে আম্বিয়ার সামনে স্থনীয় এক মুরুব্বিকে পেলাম৷ কবরগুলো যে নবীদের এ ব্যাপারে তার মন্তব্য জানতে চাইলাম৷ তিনি পাঞ্জাবি ও হিন্দি মিলিয়ে বলে চললেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকেই আমরা জেনে আসছি এগুলো নবীদের কবর৷ কবরগুলো কমপক্ষে ছয় হাজার বছর পুরনো৷ হজরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ.কে এলহামের মাধ্যমে জানানো হয়, সিরহিন্দের বারাস নামক জায়গায় নবীদের কবর রয়েছে, তুমি এগুলো সংরক্ষণ করো৷ তিনিই প্রথম এ কবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ তিনি স্বীয় খাস খলিফাদের বলেছিলেন, নবীদের সাথে আমার স্বপ্নযোগে সাক্ষাত হয়েছে এবং আমার সুকুনে কলব হাসিল হয়েছে৷ আমি তাদের কবর থেকে নূর বের হয়ে আসমানের দিকে যেতে দেখেছি৷ তার ওফাতের পরও অনেক বুযুর্গ ব্যক্তি এ কবরগুলো জেয়ারত করেছেন৷ হজরত শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ., হজরত ইউসুফ কান্ধলভী রহ.সহ অনেকেই এখানে জেয়ারতে এসেছিলেন৷ হজরত হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. কবরগুলো নিয়ে মোরাকাবা করে বলেছিলেন, আমার মন সাক্ষী দেয় যে এগুলো নবীরই কবর, আমার অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়েছে৷’

লোকটি একটু দম নিয়ে আবার শুরু করলেন, ‘মাওলানা! আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, পুরো হিন্দুস্তানে বড় বড় বুযুর্গদের যতো কবর রয়েছে দু’একটি বাদে সবখানেই বিদয়াতি কর্মকাণ্ড চালু আছে৷ অবাক ব্যাপার হলো, যিনি আজীবন শিরক, বিদয়াত, রুসুমাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, সেই শায়খ আহমদ সিরহিন্দি রহ.-এর কবরেও বিদয়াত চালু রয়েছে! কিন্ত এখানে আগেও কোনো বিদয়াত ছিলো না, এখনও নেই৷ এতেও বোঝা যায় যে এগুলো নবীদের কবর৷’

এলাকায় মুসলিম জনবসতি কত ভাগ?

১৯৪৭ সনের ভয়াবহ দাঙ্গার আগে এখানে কেবল মুসলিম জনবসতিই ছিলো৷ শিখ বা হিন্দু ছিলো না বললেই চলে৷ '৪৭ সনে দেশ বিভাগের সময় শিখ ও হিন্দু জমিদররা এ এলাকায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়৷ মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, জমি-জমা দখল করে নেয়৷ এরপরও যারা বেঁচে ছিলো তাদের পাকিস্তানে হিজরত করতে বাধ্য করা হয়৷ ফলে একসময় এলাকটি মুসলিমশূন্য হয়ে পড়ে৷ পরে ১৯৯০/৯৫ এর দিকে কিছু কিছু মুসলিম বসতি স্থাপিত হতে থাকে৷’

এ এলাকায় নবীদের কোনো নিদর্শন আছে?

নবীদের বেশ কিছু নির্শন ছিলো৷ ’৪৭ এর সময় তা মিটিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ওরা নবীদের কবরে হাত লাগাতে সাহস করেনি বলেই কবরগুলো অক্ষত আছে৷ এ গ্রামে নবীদের সময়ের চারটি মসজিদ ছিলো৷ তার তিনটি বর্তমানে শিখ ও হিন্দুদের দখলে৷ ওরা সেগুলোকে মন্দিরে পরিণত করেছে! একটি মসজিদ স্থনীয় মুসলমানরা আবাদ করতে সক্ষম হয়েছে৷’

'৪৭ সনে দেশ বিভাগের সময় শিখ ও হিন্দু জমিদররা এ এলাকায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায়৷ মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, জমি-জমা দখল করে নেয়৷ এরপরও যারা বেঁচে ছিলো তাদের পাকিস্তানে হিজরত করতে বাধ্য করা হয়৷ ফলে একসময় এলাকটি মুসলিমশূন্য হয়ে পড়ে৷

বর্মানেও কি আপনারা অত্যাচারিত?

‘না, বর্তমানে আমরা মোটমুটি ভালো আছি৷ তবে ধর্মীয় ক্ষত্রে খুব একটা স্বাধীন নই৷’ লোকটিকে বেশ জ্ঞানী মনে হলো৷ ইতিহাসের অনেক গোপন কথাই তিনি আমাদের শোনালেন৷

হাতে সময় কম ছিলো বলে তার থেকে বিদেয় নিতে হলো৷ প্রধান ফটকের দিকে এগোবার সময় ওখানকার কারী সাহেবের সঙ্গে দেখা হলো৷ তিনি ‘দারুল উলুম দেওবন্দে’র ফারেগ৷ কুশল বিনিময় হলো৷ চা-নাশতার ব্যবস্থা করতে চাইলেন৷ আমাদের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছি ওজর পেশ করলাম৷ সংক্ষিপ্ত কথাবার্তায় তিনি জানালেন, বর্তমানে এ কবরস্থানের সংরক্ষণ ও উন্নয়েনের দায়িত্ব নিয়েছেন জম্বু’র এক দ্বীনদার ব্যবসায়ী৷ তার নাম হাজি মুহাম্মাদ নিযামুদ্দিন কোটলাবি৷ তার প্রচেষ্টায় এখানে মক্তব ও হিফজ বিভাগ চালু হয়েছে৷

কারী সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামেনের দিকে পা বাড়ালাম৷ আমাদের গাড়ি এগিয়ে চললো সারহিন্দ দরবারের দিকে…

লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ