জহির আল হেরা
দিল্লির চিড়িয়াখানার সাথেই অবস্থিত মুঘল আমলের বিখ্যাত কীর্তি পুরানি কেল্লা৷ ১৫ রুপির টিকেট নিয়ে আমরা ভেতরে গেলাম৷ তখন আছরের নামাজের সময় হয়েগিয়েছিলো৷ প্ৰধান ফটকের বাঁ পাশের মনোরম সবুজ মাঠে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলাম৷ সালাম ফিরিয়ে দেখলাম কিছু মানুষ আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি৷ কয়েকজন বিদেশি ছবিও তুলছে৷ তারা হয়তো ভাবছে, ঘুরতে এসেও ধর্মীয় বিধান পালনে এতো গুরত্ব দিতে হয়?
মাঠ থেকে বেরিয়ে এগোলাম সামনের দিকে৷ রাস্তার দু'ধারে সারি সারি ফুলগাছ৷ আছে ছোট ছোট ঝাউ গাছ৷ বিশাল মাঠগুলো এমন করে ফুলে সজ্জিত করা হয়েছে যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়৷ ডানে মোড় নিয়ে এগোলাম আরো৷ হাতের বাঁয়ে দেখা মিললো পুরনো আমলের শাহী কূপ৷ এখন পানি আছে তবে ব্যবহার নিষেধ৷ আরেকটু ডানে দেখলাম সুরম্য একটি বুরুজ৷ অত্যন্ত সুন্দর কারুকাজে সজ্জিত৷
একটু বামে মোড় নিলে দেখা গেলো একটি মসজিদ৷ অনেকটা দিল্লি শাহী জামে মসজিদের আদলে নির্মিত৷ অজুর জন্য সামনে রয়েছে একটি হাউজ৷ বর্তামানে মসজিদটি কেবলই ভ্রমণ-স্পট৷ আজান, নামাজ হয় না৷ মসজিদের উত্তর দেয়ালের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে যমুনা নদি৷ এদিকের দেয়ালের অনেক অংশই ভেঙে পড়েছে৷
মসজিদের উত্তর-পূর্ব দিকে হাঁটলাম মিনিট পাঁচেক৷ দেখা মিললো একটি আন্ডারগ্রাউন ভবনের৷ ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিললো না৷ আরেকটু এগোতেই দেখা গেলো 'নাইট শো'র প্রস্তুতি চলছে৷ প্রতি দিনই নাকি এখানে নাচ-গানের আসর বসে৷ অন্য দিকে মোড় নিলাম৷ কেল্লার দেয়াল ঘেঁষা বেশ ক'টি দালানঘর৷ কিছু ব্যবহৃত কিছু পরিত্যাক্ত৷ পরিচ্ছিন্নকর্মীরা সেখানেই থাকে৷ বিদ্যুত-পানিসহ আছে সব সুবিধে৷
বেরিয়ে পড়তে পা বাড়ালাম৷ মাঠের প্রাকৃতিক সবুজ বিছানায় গল্প আড্ডায় মেতে উঠেছে প্রেমিক যুগলরা৷ অবনত চোখে এগোতে লাগলাম৷ 'মাওলানা! জারা রুকিয়ে…' পেছন থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো৷ থমকে দাঁড়ালম৷ ঘাড় ফিরে তাকাতেই দুটি জুটিকে দেখা গেলো৷ ইশারায় কাছে ডাকলো৷ গেলাম৷ 'আপকা সেলফি স্টীক থুড়ি দেরকে লিয়ে হাম লে সাকতে হেঁ?' এতোক্ষণে বুঝে আসলো আমাকে ডাকার উদ্দেশ্য৷ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম৷
উচ্চ আওয়াজে গার্ডদের বাঁশির শব্দ শোনা গেলো৷ সময় শেষ৷ দ্রুত বেরিয়ে পড়তে হবে৷ একটু পরেই বন্ধ হয়ে যাবে কেল্লা৷ এগিয়ে গেলাম গেটের দিকে৷ তখন সূয্যি মামা আজকের মতো বিদেয় নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো…
নির্মাণ ইতিহাস
দ্বিতীয় মুঘল বাদশাহ সম্রাট হুমায়ূন 'দীনপানাহ' নামে একটি শহর নির্মাণ করার ইচ্ছে করেছিলেন৷ সে উদ্দেশ্যেই ১৫৩৩ সনে যমুনা নদির তীরে একটি কেল্লা নির্মাণ করেন৷ মাত্র এক বছরের মধ্যে চার দিকের দেয়াল নির্মাণ শেষ হয়৷ প্রতিটি দেয়াল ২০মিটার উঁচু এবং ৪ মিটার চওড়া৷ কেল্লার আয়তন প্রায় ১.৯ কিলোমিটার৷ দেয়ালের প্রতি কোণে রয়ছে একটি করে সুরম্য বুরুজ৷ প্রাধান গেটের উপর আছে চারটি বুরুজ৷
পরবর্তি দু'তিন বছরের মধ্যে ভেতের অন্যান্য ভবনের কাজ সমাপ্ত হয়৷ ১৫৪০সালে তৎকালীন আফগান শাসক শের শাহ দিল্লি আক্রমণ করে৷ হুমায়ূনকে পরাজিত করে সে কেল্লা দখলে নেয়৷ পরবর্তীতে ১৫৫৫ সালে হুমায়ূন আবার ক্ষমতা ফিরে পান৷ কিন্তু এর কয়েক মাস পরেই তিনি ইনতেকাল করেন৷ কথিত আছে শের শাহ হুমায়ূনকে এই কেল্লার দেয়ালোর উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়েছিলো৷ সে কারণেই হুমায়ূনের মৃত্যু হয়৷ পরবর্তীতে দখলদার ব্রিটিশ সরকার কেল্লায় আক্রণ করে কেল্লার বিভিন্ন অংশ গুড়িয়ে দিয়েছিলো৷ এখন সেভাবেই আছে৷
এআর