বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ ।। ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১৩ রমজান ১৪৪৬


মানুষের আনন্দের কথকতা ও কুরবানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

kakan-rezaকাকন রেজা

ক’দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ‘ভিডিও ক্লিপ’ খুব জনপ্রিয় তথা ‘ভার্চ্যুয়াল’ জগতে ‘ভাইরাল’ হয়েছিল। ক্লিপটিতে এক যুবক নিজে হোটেলে খেতে যাবার সময় হোটেলের সামনে একটি বাচ্চা ও তার মাকে সাহায্য চাইতে দেখে। অবশেষে সেই যুবক হোটেলে নিয়ে সেই বাচ্চা ও তার মাকে পেটপুরে খাইয়ে দেয়। তার এই মানসিকতা তথা মানবতাকে সম্মান জানিয়ে হোটেলের ম্যানেজারও খাবার বিল নেয়া থেকে বিরত থাকে।

ঢাকায় একটি সংগঠন রয়েছে যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে না দিতে অনুরোধ করেন এবং তাদের জানাতে বলেন যাতে সেই খাবারে কিছু দরিদ্র মানুষের একবেলার ভালো খাবার হয়। সংগঠনটির নাম ভুলে গেছি। কিন্তু সেই সংগঠন এবং সেই ভিডিও ক্লিপের ধারণা যাদের মস্তিষ্ক প্রসুত তাদের সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। মানুষকে ছোট ছোট এমন মানবিক আনন্দ দেয়াই মানবতা, মানুষের প্রতি মানবিক কর্তব্য। অনেকে একে আনন্দ বলাতে বিস্মিত হতে পারেন। কষ্টের বিপরীত শব্দটিই ‘আনন্দ’। আর পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় কষ্ট পৃথিবীতে আর কী আছে! এত গেলো ছোট আনন্দ দেয়ার কথা। আর এরচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে আনন্দ দেয়ার কথাই এখন বলছি।

আমাদের দেশের কতজন মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন এমন বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্ক রয়েছে সম্প্রতি পাওয়া নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তকমা নিয়েও। আমি সে বিতর্কে যাচ্ছি না, কিন্তু আমাদের চারিদিকে চোখ মেলে তাকালে দেখতে পাবো অসংখ্য ক্ষুধার্ত মুখ। সকালে ‘সুখি’ প্রাতভ্রমণে বের হবেন, দেখবেন দশ বছরের একটি বাচ্চা আপনার সামনে দিয়ে বস্তা কাঁধে নিয়ে হেটে যাচ্ছে, আর সামনের ময়লার স্তুপ থেকে তুলে নিচ্ছে ময়লা কাগজের টুকরো। সকালে তার নাওয়া খাওয়া হয়তো কিচ্ছু হয়নি।

দুপুরে অফিস থেকে বেরুবেন, দেখবেন বাচ্চা কোলে করুণ মুখের একজন মা আপনার সাহায্য প্রার্থী। ছুটির বিকেলে নিজ সন্তানকে নিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমে ‘আনন্দিত ফ্যান্টাসি’ সেরে বাচ্চার হাতে একটি দামি আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবেন দেখবেন, গেটের পার্শ্বে আপনার বাচ্চার বয়সী আরেকটি বাচ্চার চকচকে চোখ চেয়ে আছে আপনার বাচ্চার হাতে ধরা আইসক্রিমটির দিকে।

একদিন একটু কষ্ট করে একটি এতিমখানায় যান। পনেরো দিনে কিংবা মাসে একবার গরুর গোশতের ভুনা খিঁচুরি। আর সেই দিনটির আশায় বসে থাকে সেখানে বসবাসরত অনেকগুলো বাচ্চা। এই একটি দিনের ভালো খাওয়া তাদের কাছে কতটুকু প্রত্যাশিত ‘প্রতিদিনের ভালো খাওয়ার সুবিধাপ্রাপ্ত’ আপনি হয়তো বুঝবেন না। কিন্তু মাসের ওই দিনটি ওই বাচ্চাদের কাছে ঈদের দিনের কাছাকাছি আনন্দের।

এই যে ‘ঈদের দিন’ শব্দটি, এই শব্দটি যুক্ত থাকে প্রতিটি আনন্দের সাথে, প্রতিটি অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির সাথে। আমরা কথায় কথায় বলি ‘এক্কেবারে ঈদ লাগছে’। একদিনের ভালো খাওয়া মানে ঈদের আনন্দ। একটি অপ্রত্যাশিত ভালো জামা মানে ঈদের আনন্দ। গরিবি জীবনে একটু ভালো কিছু মানেই ঈদ। আর আল্লাহতায়ালা সম্ভবত ভালো জিনিষের আনন্দ বুঝাতেই ঈদের দিন দুটি দিয়েছেন।

ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহা এই দিনটির সাথে যুক্ত রয়েছে তিনটি শব্দ ফিতরা, যাকাত, কুরবানি। ‘যাদের আছে’ তাদের কাছ থেকে ‘যাদের নাই’ তাদের পাওয়ার দিন এই দুই ঈদ। যাদের আছে তারা এই পাওয়ার বিষয়টির মর্ম খুব একটা বুঝতে পারবেন না। তাদের বুঝতে হলে মানবিক বোধটা জাগ্রত করতে হবে, একটু কষ্ট করে মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, একটু পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু যারা অর্থে বিত্তে সামর্থ্যবান তাদের বেশির ভাগই কেন যেন এই কষ্টটুকু করতে চান না।

একদিন একটু কষ্ট করে একটি এতিমখানায় যান। পনেরো দিনে কিংবা মাসে একবার গরুর গোশতের ভুনা খিঁচুরি। আর সেই দিনটির আশায় বসে থাকে সেখানে বসবাসরত অনেকগুলো বাচ্চা। এই একটি দিনের ভালো খাওয়া তাদের কাছে কতটুকু প্রত্যাশিত ‘প্রতিদিনের ভালো খাওয়ার সুবিধাপ্রাপ্ত’ আপনি হয়তো বুঝবেন না। কিন্তু মাসের ওই দিনটি ওই বাচ্চাদের কাছে ঈদের দিনের কাছাকাছি আনন্দের।

সামর্থ্যবান অন্যের কষ্ট বোঝার চেয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণে বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কুরবানির গরু কে কতো দামে কিনতে পারেন তার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। যেখানে ইসলাম অনুযায়ী যাকাত দিতে হয় অর্থে সেখানে সামর্থ্যবানরা ‘কোয়ান্টিটি’তে বেশি ‘কোয়ালিটি’তে কম এমন শাড়ি লুঙ্গির বিতরণ প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর তাদের এই ‘অসভ্য’ প্রতিযোগিতায় ধর্ম আর মানবতা উভয়েই বিপর্যস্ত হয়, বিপদগ্রস্ত হয়।

Indian Muslim boys take a goat for sacrifice after offering prayers on Eid al-Adha in Hyderabad, India, Wednesday, Nov. 17, 2010.

ধর্ম নিয়ে এমন বালখিল্যতা ধর্মকেই অপমানিত করে, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এখানে মানবিকতা পেলেন কোথায়? কুরবানির নামে অবাধ পশু হত্যা তো অমানবিক, ধর্মের নামে কত পশু সারা বিশ্বে নিধন হয় তার ধারণা কী আপনার আছে? ধর্মের নামে পশু নিধন (?) কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়! এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে এবং এর জবাব দেয়াও খুব কঠিন কাজ নয়।

কোন নিগূঢ় তত্ত্ব আলোচনা নয়, সোজা জবাব। মানুষ যখন সভ্যতার স্বাদ পায়নি তখন কাঁচা গোশত খেয়ে তাদের জীবনধারণ করতে হয়েছে। আগুন আবিষ্কৃত হবার পর পুড়িয়ে খেয়ে। তখন ধর্ম আসেনি কিন্তু মানুষকে উদরপূর্তির জন্য পশু হত্যা করতে হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতিদিন কত পশু মানুষের খাদ্যের জন্য হত্যা করা হচ্ছে তার হিসাব কী কারো কাছে আছে! বছরে একদিনের কুরবানিতে সব পশু শেষ হয়ে যাবে? আর পশু হত্যা কী শুধু মুসলিম উৎসবেই হয়? এসব ভেবে দেখার মতো মেধা থাকলে এমন বোকার মতন প্রশ্নের উৎপত্তি হতো না।

বোকার মতন প্রশ্ন নয় বরং কুরবানির পর দরিদ্র মানুষের আনন্দিত চোখগুলোর তাকান, যাদের কাছে ঈদ মানেই বছরে একটা দিন প্রত্যাশিত পেটপুরে খাওয়া। দেখুন একটি পশু থেকে প্রাপ্ত গোশতের একটি অংশ দরিদ্র মানুষকে দেয়ার পর তাদের চোখে তারার মতো ফুটে উঠা আনন্দের দ্যুতি। পরিবার পরিজন নিয়ে পেটপুরে খাওয়ার একটি আনন্দময় সময় তাদের চোখকে এমন দ্যুতিময় করে তোলে।

এই ‘পশু হত্যা’ মানে নিষ্ঠুরতা নয়। মানুষের খাদ্য তালিকায় থাকা পশুদের হত্যা করা হয় মানুষের জন্যই। একশ্রেণির মানুষ আছেন যারা গোশত খান না, মাছ খান না। অর্থাৎ তারা প্রাণী হত্যা করেন না। কিন্তু তারা তো নিরামিষ খান। গাছেরও তো প্রাণ আছে এমন তর্কে না হয় নাই গেলাম। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং তার প্রাপ্তি নির্ভর করে উদ্ভিদের উপরেই। সুতরাং প্রাণী হত্যা নিষ্ঠুরতা এমন হাস্যকর যুক্তির বিপরীতে যুক্তি দিতে ‘প্রাণী হত্যা নিষ্ঠুরতা’ এমন বিষয়টিই হাস্যকর হয়ে উঠে।

মানুষ যখন সভ্যতার স্বাদ পায়নি তখন কাঁচা গোশত খেয়ে তাদের জীবনধারণ করতে হয়েছে। আগুন আবিষ্কৃত হবার পর পুড়িয়ে খেয়ে। তখন ধর্ম আসেনি কিন্তু মানুষকে উদরপূর্তির জন্য পশু হত্যা করতে হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতিদিন কত পশু মানুষের খাদ্যের জন্য হত্যা করা হচ্ছে তার হিসাব কী কারো কাছে আছে! বছরে একদিনের কুরবানিতে সব পশু শেষ হয়ে যাবে?

ইসলামে কুরবানি কী এবং কেন তা নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে, ধর্ম বিষয়ের বিজ্ঞজনেরা এ নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। আমি ধর্মের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাইনি এবং যাব না। তবে যারা অহেতুক পশু হত্যা বিষয়ে কথা বলেন এবং নিরামিষ ভোজে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চান তাদের জন্য একটি কুরআনের আয়াত রয়েছে এরকম, ‘যখন সে প্রস্থান করে, তখন সে বিশ্বজুড়ে অনিষ্ট করে এবং শস্যক্ষেত্র ও জীব জন্তুর বংশ নিপাতের চেষ্টা করে। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। সুরা বাকারা, আয়াত, ২০৫’

আল্লাহতায়ালা অপ্রয়োজনীয় কারণে উদ্ভিদ এবং জীবজন্তুর বংশ নিপাতের চেষ্টা পছন্দ করেন না তা তিনি তাঁর কুরআনের মাধ্যমেই মানুষকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন এবং এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

qurbani

আল্লাহতায়ালা খাদ্য হিসাবে মানুষের জন্য দিয়েছেন উদ্ভিদ ও প্রাণী। তবে সব উদ্ভিদ ও প্রাণীই মানুষের খাদ্য নয়। আল্লাহতায়ালা শুধু খাদ্যের জন্যই নয় মানুষের অন্যান্য প্রয়োজনেও উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি করেছেন। তাই হালাল ও হারামের মাধ্যমে ভাগ করে দিয়েছেন তিনি কোনটা খাবার উপযোগী কোনটা নয়। অথচ কুকুর মানুষের খাদ্য নয় তারপরেও পৃথিবীতে কুকুর খাওয়া হয়। ইসলামে হারাম শূকর যা খেলে রক্তবাহী শিরা বন্ধ হয়ে যায় চর্বি জমে, মানুষের কষ্ট অবধারিত হয়ে উঠে, তাও মানুষ খায়। ঘোড়া এবং বিষাক্ত সাপও খাদ্য হয় কিন্তু এগুলো নিয়ে কথা হয় না, কথা হয় গরু নিয়ে, কুরবানী নিয়ে। অথচ দরিদ্র মানুষের পেটপুরে ভালো খাবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট আনন্দ জড়িত রয়েছে যার সাথে। বিচিত্র সব সমীকরণ! এমন সমীকরণে বিস্মিত হয় বোধহয় সৃষ্টিকর্তাও।

আল্লাহতায়ালা কুরবানি সম্পর্কে বলেছেন, ‘কুরবানির জন্তুকে আমি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।’ এ কথাটি আমি নিছক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে যদি দেখি বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে একটু আনন্দ দেয়ার বিষয় হিসাবে, একটি ভালো থাকার দিন হিসাবে। তাহলে ফেলে দেয়া খাবার বাঁচিয়ে কিছু অসহায় মানুষের উদরপূর্তির আনন্দে দেয়াতে অনেকের প্রশংসা পেলে কুরবানির ত্যাগের মাধ্যমে অনেক মানুষকে আনন্দিত করার প্রশংসা কেন পাওয়া যাবে না!

রাসুল সা. বলেন, ‘সামর্থ থাকতে যারা কুরবানি করে না তারা যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। ইবনে মাজা’

ইসলামে ঈদের নামাজ হলো একটি মানব সম্মেলন, যেখানে বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ‘মঞ্চ’ নেই, গদিআটা ‘প্রধান’ বা ‘বিশেষ’ অতিথির চেয়ার নেই। যেখানে ‘দেশের প্রধান’ থেকে শুরু করে ‘দেশের শেষ’ সবাই কাঁধে কাঁধ রেখে একসাথে দাঁড়াতে পারেন। বুকে বুক মেলাতে পারেন। মানবতার এমন মহামিলন ক্ষেত্র আর কোথায় আছে? আর এমন একটি সম্মেলনে অংশ নেয়ার শর্ত হিসাবে রাসুল বলেন কুরবানির কথা। যারা নিজের সামর্থ্য থাকতেও কুরবানি দেয়নি অর্থাৎ মানুষকে ভালো খাবার দেবার শর্তটুকু পূরণ করেনি, মানুষকে আনন্দ দেয়ার শর্তটুকু পূরণ করেনি তারা যেন সেই মানবতার সম্মেলনে না আসে। যারা মানুষকে খাবার দেয় না, আনন্দ দিতে পারে না তারা, যারা একটু সময়ের জন্যও, একটা দিনের জন্যও মানুষকে মানবেতর জীবনের বাইরে একটি ভালো দিন উপহার দিতে পারে না তারা কোনভাবেই এমন মহৎ মানবতার সম্মেলনে অংশগ্রহনের যোগ্যতা রাখে না।
এর চেয়ে বড় মানবতার বার্তা আর কী হতে পারে। যারা পশু হত্যায় ব্যথিত হন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি ইসলাম বলে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সনাতনীরাও বলেন, মানুষ অমৃতের সন্তান। আর যারা ‘মানবতা’র জন্য কাজ করেন তাদের বলি, ‘মানবতা’ শব্দটির উৎপত্তি কিন্তু ‘মানব’ থেকেই, পশু থেকে আসলে হতো ‘পাশবতা’। আপনার যদি ‘মানবতা’কে ‘পাশবতা’য় প্রতিস্থাপন করতে চান করতে পারেন।

অথচ কুকুর মানুষের খাদ্য নয় তারপরেও পৃথিবীতে কুকুর খাওয়া হয়। ইসলামে হারাম শূকর যা খেলে রক্তবাহী শিরা বন্ধ হয়ে যায় চর্বি জমে, মানুষের কষ্ট অবধারিত হয়ে উঠে, তাও মানুষ খায়। ঘোড়া এবং বিষাক্ত সাপও খাদ্য হয় কিন্তু এগুলো নিয়ে কথা হয় না, কথা হয় গরু নিয়ে, কুরবানী নিয়ে। অথচ দরিদ্র মানুষের পেটপুরে ভালো খাবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট আনন্দ জড়িত রয়েছে যার সাথে। বিচিত্র সব সমীকরণ! এমন সমীকরণে বিস্মিত হয় বোধহয় সৃষ্টিকর্তাও।

আল্লাহতায়ালা সুরা হজের ৩৭ আয়াতে কুরবানি সম্পর্কে বলেন, ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।

আল্লাহতায়ালা মূলত দেখতে চান, মানুষ হিসাবে প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য তারা কী করেছে। প্রশ্ন করতে পারেন আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়ে, বলতে পারেন মানুষের জন্য নয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কুরবানি। আল্লাহতায়ালা বারবার বলেছেন মানুষের সন্তুষ্টিই তাঁর সন্তুষ্টি। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা আল্লাহ সন্তুষ্টি, ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি, অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর সন্তষ্টি, মানুষের জন্য প্রয়োজনী দ্রব্য, পণ্য, জীবজন্তু, উদ্ভিদ গুল্মরাজি রক্ষা করা আল্লাহর সন্তুষ্টি।

সুতরাং কুরবানিতে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি মানেই মানুষের সন্তুষ্টি, এতটুকু বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানের দরকার নেই। আর যারা বোঝেন না অথবা চেষ্টা করেন না তাদের ‘জ্ঞান’ নেই তবে ‘গরিমা’টুকু আছে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে’। নিদর্শন আল্লাহতায়ালা জ্ঞানীদের জন্যই রেখেছেন ‘গরিমা’ আক্রান্তদের জন্য নয়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ