রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৫ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নারী জীবনের ভুল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

our-islam-nari-copyমুফতি দিদার শফিক

ভুল বিশ্বাস, কুসংস্কার ও সামাজিক প্রথাকে বাছ-বিচার না করে গুরুত্বের সাথে আমলে নেওয়ার ফলে নারী জীবনে শুরু হয় ভুলের ছড়াছড়ি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়   শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে ভুলে-ভুলেই কেটে যায় নারী জীবন। ধর্ম অসমর্থিত, নিছক ভুল বিশ্বাস থেকে সৃষ্ট নারী জীবনের এমন কিছু ভুল তুলে ধরা হল। যা পালনীয় নয়, বর্জনীয়।

‘এখন সন্তান নেব না’ : একটি মারাত্মক ভুল কথা
জন্মনিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রী অস্থায়ী কোন গর্ভরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করাকে কোন কোন দম্পত্তি ‘এখন সন্তান নেব না’ বলে ব্যক্ত করে থাকে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হল শরিয়তসম্মত কোন কারণ ছাড়া গর্ভরোধক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা বৈধ নয়। আকিদা নড়বড়ে হলে, দারিদ্র্যের  ভয়ে বা সন্তান নেওয়া-না-নেওয়া নিজেদের ইচ্ছাধীন বলে বিশ্বাস করলে এ জাতীয় কথায়  মারাত্মক ভুল ও গোনাহ হবে। কারণ গর্ভ সঞ্চারের বিষয়টি স্বামী-স্ত্রীর হাতে নয়। পুরো ব্যাপারটিই আল্লাহর হাতে নিয়ন্ত্রিত। তিনি চাইলেই সন্তান হয়, না-চাইলে হয় না। অনেক দম্পত্তি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করেও গর্ভরোধে ব্যর্থ হয়ে নতুন অতিথির সংবাদ পায়। আবার অনেকে খুব চেষ্টা-তাদবির করেও সন্তানের মুখ দেখতে পায় না। এটাই বাস্তবতা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ নভোমন্ডল ও ভূম-লের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়ে দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা ছেলে দান করেন। অথবা তাদেরকে ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। [ সুরা: শূরা: ৮৯-৫০] কেউ যদি অস্থায়ী কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেই থাকে তাহলে তা বলে বেড়ানো উচিত নয়। এখন সন্তান নেব না এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

নিম্নোক্ত কারণে অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ কার বৈধ। ১. বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা রাখে না স্ত্রী এই পর্যায়ের দুর্বল হলে। ২. গর্ভ ধারণের কারণে বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকলে এবং দুধের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে অসমর্থ হলে। ৩. স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে বনিবনা না-হওয়াজনিত অমিলের কারণে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ইচ্ছা থাকলে। ৪. সন্তান নিলে বিজ্ঞ ডাক্তারের  মতানুযায়ী মায়ের প্রাণহানি বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে। ৫. মা ( স্ত্রী) বংশগত কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে তা সন্তানের মাঝেও সংক্রমিত  হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকলে। এর কোন একটি কারণ পাওয়া গেলে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে। [ সহি বুখারি: ৫০৭৩,উমদাতুল কারি: ১৪/১৪,ফাতহুল বারি: ৯/২২, রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৮৮]

নতুন বউয়ের পা ধোয়ানো-প্রথা বর্জনীয়
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম প্রবেশের পূর্বে নতুন বউয়ের পা ধোয়ানো একটি হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি। অনেক মুসলিম পরিবারেও এ প্রথা যথারীতি পালিত হয়। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই।  বউ বা পরিবারের জন্য পা ধোয়া সংস্কৃতি কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। মূলত বউয়ের সাথে থাকা অকল্যাণ ও অশুচিতাকে দূর করার ভাবনা থেকেই এ সংস্কৃতির সৃষ্টি। এতে নতুন  বউ অভিনন্দিত হয় না,বরং পরোক্ষভাবে নিন্দিত হয়। তাকে কুলক্ষুণে, অশুচি ও অপয়া ভাবা হয়। যা একজন মুমেন নারীর জন্য অপমানজনক। পায়ে ধুলোবালি থাকলে পা ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করবে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু প্রথা বা সংস্কৃতি উদযাপন নারীর জন্য নিঃসন্দেহে লাঞ্ছনা ও অপমানের বিষয়। একজন বোদ্ধা সচেতন ধার্মিক নারীর জন্য এ প্রথা মানসিক পীড়াও বটে। ইসলাম ধর্মেও এর কোন ভিত্তি নেই। নতুন বউয়ের পা ধোয়া সংস্কৃতি পরিত্যাজ্য।

রাতে ঝুটা পানি বাইরে ফেলায় কোন ক্ষতি নেই
রাতে ঝুটা পানি , খাবারের উচ্ছিষ্ট বা পানি জাতীয় কিছু ঘরের বাইরে ফেলাকে মহিলারা সাধারণত অমঙ্গলজনক ভেবে থাকেন। তারা মনে করেন এতে ঘরের সুখ-শান্তি ও সৌভাগ্য বিদায় নেয়। রাতে ঝুটা পানি ঘরের বাইরে ফেললে তা পরিবারের মৃত মুরব্বিদের গায়ে পড়ে বলেও অনেকের বিশ্বাস। তারা মনে করেন মৃত মুরব্বিদের রূহ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। উপর্যুক্ত সকল ধারণা ও বিশ্বাস ভুল। ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই। মৃত মুরব্বিদের রূহ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করার ধারণা তো মারাত্মক বিশ্বাসগত ত্রুটি। ঘরে ঝুটা পানি বা খাদ্যের অবশিষ্টাংশ জমিয়ে রাখলে পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এভাবে দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরির কোন যৌক্তিকতা নেই। জমিয়ে না রেখে ঝুটা পানি রাতে ফেলে দেওয়াতে কোন সমস্যা নেই।

পুরুষের জুমা শেষ হলে মহিলার জোহর পড়ার সময় হওয়ার ধারণা ভুল
কোন কোন অঞ্চলে পুরুষরা মসজিদে জুমা পড়ে বের হলে মহিলারা জোহর নামাজ পড়ার প্রচলন আছে । তারা মনে করেন পুরুষের জুমা পড়া শেষ হলেই মহিলাদের জোহর নামাজ পড়ার সময় শুরু হয়। এটা ভুল। সঠিক কথা হল -  নামাজের ওয়াক্ত শুরু হলে পুরুষ-মহিলা উভয়েই আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়তে পারে। মহিলাদের জুমার দিন জোহর পড়ার জন্য পুরুষের জুমা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকার কোন প্রয়োজন নেই। শুরু ওয়াক্তেই জোহর পড়তে পারবে।

স্বামীবিগতা নারীর দ্বিতীয় বিয়ে প্রথম স্বামীর মিরাস প্রাপ্তিতে বাধা নয়
কোন কোন সমাজে প্রচলন আছে, স্বামী মারা যাওযার পর স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর মিরাস ( প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি  থেকে অংশ) পাবে না। এটা ভুল মাসয়ালা। ভুল ধারণা। নারীদের ঠকানোর জাহেলি যুগের প্রতারনা। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হোক বা না হোক স্ত্রী স্বামীর মিরাস পাবে। বিধবা নারীর (প্রয়োজনে ,কোন শরয়ি ওজর না থাকলে) বিয়ের ব্যবস্থা করা এবং তাকে তার স্বামীর মিরাস বুঝিয়ে দেওয়া পরিবারের দায়িত্ব। নারীজীবন যন্ত্রণায় কাটুক ইসলাম তা কখনই চায়নি। তাই স্বয়ং মুহাম্মদ সা.নিজ জীবনে বিধবা বিয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্বামী বিয়োগে স্ত্রীর সহমরণযাত্রা;সতীদাহপ্রথা  বা বৈধব্য জীবন যাপনের প্রথা হিন্দু ধর্মে আছে। ইসলামে এর কোন অবকাশ নেই।

লেখক: শিক্ষক , জামেয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার , ঢাকা-১২১১

 

এফএফ

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ