মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী
ইসলামের পঞ্চস্থম্ভের একটি হজ্ব। মহান আল্লাহর প্রেম ও ভালবাসা প্রকাশের চূড়ান্ত নমুনা। ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মাওলার স্বান্নিধ্য লাভের যে আকাংখা তৈরি হয় তার বাস্তব প্রতিফলন । মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্ঠি করে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে তার আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। মানবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তির দাসত্ব পরিহার করে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে জীবন উৎসর্গ করাই সৃষ্ঠিকুলের দায়িত্ব। সেজন্য তিনি আমাদের উপর বিভিন্ন বিধিবিধান অত্যন্ত কার্যক্রম ও যুতসইভাবে অবতীর্ণ করেছেন। এবাদত বন্দেগীর মধ্যে যদিও হেকমত বা রহস্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে নেই। প্রভুর সমুদয় বিধি-নিষেধের মধ্যে নিখুত ও যুক্তিসংগত কৌশল বিদ্যমান রয়েছে।
মানব সন্তানের মধ্যে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টিগত ভাবেই বিদ্যমান। নিজের বড়ত্ব ও আমিত্ব প্রদর্শনের অভ্যাসটি মানবদেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রোথিত। এটি মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক। একে সমুলে উৎখাত করে খোদার মহব্বত ও আজমত অন্তরে সৃষ্ঠি করতে পারলেই মানুষ হয় সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত। অহংকারবোধ সৃষ্ঠি হয় দু'টি কারনে। একটি অর্থবল অপরটি বাহুবল। বাহুবল বা নফসের অহংবোধ দুরীকরণে নামাজের বিধান অবতীর্ণ করেছেন। নামাজের মাধ্যমে বান্দাহ যখন স্রষ্টার সামনে মাথানত করে। নিজের সবচাইতে সম্মানী বস্তু কপাল মাঠিতে রেখে সিজদা করে। তখন তার আত্মগরিমা ও অহংকারবোধ চলে যেতে থাকে। বছরে একমাস রোজা রাখার মাধ্যমে সেই নফসের কুপ্রবৃত্তিকে কন্ট্রোল করার শিক্ষা দেয়া হয়। জৈবিক চাহিদার মৃত্যুঘটিয়ে তাকে আল্লাহমুখী করা হয়।
এভাবে মানুষ নিজের অহংকারবোধ ও কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে রবের নৈকট্যলাভ করতে থাকে। অর্থবল বা সম্পদের অহংকার মিটিয়ে দিতে যাকাতের বিধান অবতীর্ণ করেন। সম্পত্তির কারনে অহংকার করোনা এটি আল্লাহ প্রদত্ত। যাকে চান তিনি তাকে দান করেন। একজন ঈমানদার যখন তার বাহুবল ও অর্থবল বিসর্জন দিয়ে প্রভুর স্বান্নিধ্যে চলে যায় তখনই সে প্রভুর সাথে মিলনের উদগ্রীব হয়ে উঠে। সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে নিজের চক্ষু শীতল করতে চায়। হজ্বের বিধান নাযিলের মাধ্যমে সেই মোলাকাতের সুবর্ণ সুযোগ তিনি করে দিলেন। তাইতো আহকামে হজ্ব আদায়কালীন মানুষকে সবধরনের জাগতিক বস্তুকে পরিহার করতে হয়। রবের মোলাকাতের জন্য দেওয়ানা হয়ে মুমিনরা লাব্বাইক লাব্বাইক বলতে বলতে তার দরবারে হাজির হয়। ভালবাসার চুড়ান্ত নমুনা প্রকাশের মাধ্যমে মুমিন নিজেকে নিষ্পাপ নিষ্কলুষ করে আপন নীড়ে ফিরে আসে।
লেখক : ভাইস চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।