মাহ্দী খান অয়ন : শাহরিয়া দুষ্ট আর চঞ্চল একটি ছেলে। বুদ্ধিমান। বয়স ৭/৮ বছরের আশেপাশে। ছোট্ট মন। নিষ্পাপ। ইশারাতেই বুঝে ফেলে অনেক কিছু। হাসে। ফিক ফিক! খুব মিষ্টি করে। এবারই এসেছে ঢাকায়। প্রথম। বগুড়া থেকে। প্রিয় চাচ্চুর সাথে। অকারণে নয়, কারণে। লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে। তাও আবার সাধারণ কোনো লেখাপড়া নয়। অসাধারণ লেখাপড়া। আসমানি লেখাপড়া। আসমানি ইলম! নববী ইলম! হেরা পর্বতের ইলম! এ মহান ইলম শেখার জন্যই শাহরিয়ার এতো ত্যাগ - তিতিক্ষা। ছেড়ে এসেছে বাবা - মা, ভাই - বোন, খেলার মাঠ, পুকুর ঘাট। আরো কতো কী! ভর্তি হয়েছে ঢাকার একটি মাদরাসায়। মক্তবে। শাহরিয়া বাড়ি থেকে এসেছে ঠিকই, কিন্তু ওর অবুঝ মনটা পড়ে আছে সে স্বপ্নময় ভালো লাগার স্থানগুলোতে। পরানটা শুধু পুড়তেই থাকে। সে পোড়া আর থামে না। থামতেই চায় না। তাই চাচ্চুর কাছেই পড়ে থাকে। বেশীরভাগ সময়। বিকেল হলেই বসে জানালার পাশে। বা্ইরে তাকিয়ে থাকে। দেখে ফ্লাইওভার আর তার উপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়ী। মনে মনে ভাবে, গাড়ীগুলো ওঠে কোন্ দিক দিয়ে?খোঁজে। কিন্তু, পায়না।
ওর চাচ্চু হলেন আমাদের শ্রদ্ধাস্পদ শিক্ষক মুফতী সামিউল ইসলাম সাহেব (দা. বা.)। খুব বড়ো মাপের আলেম। দ্বীনের দাঈ। মহৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। খুব অমায়িক। অতুলনীয়। অসাধারণ একজন শিক্ষক। হুজুর যেখানেই যান, সাথে করে নিয়ে যান শাহরিয়াকে। শাহরিয়া বাড়ি থেকে এসেছে দু' সপ্তাহ হলো। বাবা - মা, ভাই - বোনকে দেখার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে অবুঝ মনটা। আর ভালো লাগছে না ওর। প্রায়ই কাঁদে। অঝোরে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে। খুব করে ধরেছে চাচ্চুকে। আবদার একটাই, "বাড়ি নিয়ে যাও! যেতেই হবে!" নাছোড়বান্দা। চাচ্চু নিরুপায়। রাজি হলেন। শাহরিয়া তো মহাখুশী। ওর খুশী যেনো আর ধরে না।
বাসে উঠেছে। বসেছে। পাশে চাচ্চু। দু' জনই চুপ। হঠাৎ শাহরিয়া বলে উঠলো, "চাচ্চু! বাড়ি যেয়ে কী কী করা যাবে না?" চাচ্চু শুনে তো অবাক। ছোট্ট মনে এতো বড়ো প্রশ্ন? যা জানানোর প্রয়োজন ছিলো অভিভাবক হিসেবে আমার, সে কিনা শাহরিয়া নিজেই জেনে নিতে চাচ্ছে! অথচ, ওর উপর তো ইসলামী শরীয়তের বিধি - বিধান এখনো আরোপিত হয়নি! তখন চাচ্চু বললেন:- "বাড়িতে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে। কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। ছোট বোনের সাথে ঝগড়া করা যাবে না। বড়োদের কথা মানতে হবে। আর টিভি দেখা যাবে না।" এসব শুনে শাহরিয়া বললো:- "চাচ্চু! টম এণ্ড জেরিও দেখা যাবে না?" চাচ্চু বললেন:- "না।" শাহরিয়া বললো:- "ঠিক আছে।" আচ্ছা!
এখন যদি এ ছোট্ট ছেলেটি বাড়িতে গিয়ে টিভি না দেখে, তাহলে নিঃসন্দেহে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর এর প্রভাব পড়বে। সবাই চিন্তা করবে, যে ছেলেটি সারাদিন টিভি দেখতো, সে কিনা টিভি দেখে না! আবার নামাজ পড়ে মসজিদে গিয়ে! ওর এমন পরিবর্তন কিভাবে হলো?! ছোট্ট ছেলেটির এ নেক আমলগুলোই হতে পারে ওর পরিবারের জন্যে হেদায়াতের উছিলাহ্। অসম্ভব কিছু নয়। বাকী জগত নিয়ন্তা মহান আল্লাহর ইচ্ছা। কোরআন - হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী প্রতিটি শিশুই জন্মগ্রহণ করে মহান আল্লাহ্ তা'আলার মনোনীত ধর্ম ইসলামের উপর। কিন্তু, পরিবেশ - সমাজ তার জন্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। একটি শিশু ধ্বংস - বিনাশের পেছনে সবচেয়ে বড়ো অবদান রাখে শিশুটির মা - বাবা। তখন সে হারায় সত্য - সঠিক বিশ্বাস - আকীদা। ইসলামী ভাব ধারার সকল চিন্তা - চেতনা। কলুষিত হয় শিশুর নিষ্কলুষ, নিষ্পাপ, কোমল হৃদয়। আসলে, প্রতিটি শিশুকে যদি আল্লাহর দেয়া তার আপন স্বভাব জাতের উপর ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে তারা বেড়ে উঠবে ইসলামী আকীদা ও সততার উপর। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের উপর। আর এ শিশুরাই একদিন হয়ে উঠবে সুশীল প্রজন্ম বিনির্মাণের সুদক্ষ কারিগর। তারা হবে উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী। পথহারা উম্মাহর সঠিক পথ প্রদর্শক। আল্লাহ্ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক সমঝ - বুঝ দান করুক। আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সাদ্দাম মার্কট, তুষারধারা আবসিক এলাকা, সেক্টর :- ০১, তুষারধারা হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যাম্পাস ২, ( ৩য় তলার ডান পাশ), কদমতলী, ঢাকা - ১৩৬২
এফএফ