প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ
সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সুবাধে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেছি। কিন্তু পবিত্র হজের জন্য মক্কা-মদিনায় নিজের টাকায় গিয়েছি। আমি মক্কা-মদিনায় যে শান্তি পেয়েছি তা বিশ্বের অন্যকোনো দেশে পাইনি। আমার জীবনে দুইবার হজ করতে পেরেছি। একবার ঢাবির ভিসি থাকাকালে, দ্বিতীয়বার ২০০৫ সালে।
প্রথমবার যখন হজে যাই তখন আমার মনে খুব আনন্দ ছিলো। যে আনন্দ অন্যকোনো দেশে যাওয়ার সময় অনুভূত হয়নি। আমি নবীজির দেশে নতুন হওয়াতে রাস্তাঘাট, ভ্রমণস্পট এবং হজের বিষয়াদি ভালো করে বুঝতাম না। আমাদের মুয়াল্লিম ছিলেন বেইলি রোড মসজিদের খতিব সাহেব। তিনি আমাকে হজ পালন শেষে একটি গাড়ি নিয়ে মক্কা-মদিনার দর্শনীয়
স্থানগুলো দেখাতে নিয়ে গেলেন। এক পর্যায়ে গেলাম জাবালে নূরে। যেখানে দাঁড়িয়ে নবীজি মক্কাবাসীকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিয়েছিলেন, আহ্বান করেছিলেন সত্যের পথে। আমি শখেরবশে পাহাড়ের চূড়ায় উঠি। কিন্তু উঠার পথে কাফেলাকে হারিয়ে ফেলি। এক পর্যায়ে পরিচিত কাউকে দেখতে না পেয়ে জোরে আওয়াজ দিয়ে খতিব সাহেবকে ডাক দিলাম। আমি তাকে দেখছি, অনেক পেছনে পড়ে গেছেন এবং অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন। তাই ডাক দিতে লাগলাম। দেখলাম আমার আওয়াজ বাতাসের সাথে বাড়ি খেয়ে পুনরায় আমার দিকেই ফিরে আসছে। মানে খতিব সাহেব আমার ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন না । তবে তখন আমি মনোবল হারাইনি। কারণ আমাদের হোটেল আমার চেনা ছিলো।
এতো জোরে ডেকেও যখন কারো দৃষ্টি আমার দিকে আকর্ষণ করাতে পারলাম না, তখন চিন্তা করলাম, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আওয়াজ কত উঁচুই না ছিলো! তিনি এখানে দাঁড়িয়ে মানুষকে দীনের পথে আহ্বান করেছেন। অথচ কোনো কৃত্রিম যন্ত্র ছিলো না। আল্লাহর দেয়া মনুষ্য শক্তি নিয়ে তিনি আহ্বান করেছিলেন। আসলে এসব আল্লাহর কুদরত। সর্বোপরি মক্কা-মদিনায় নবী ও সাহাবাদের দর্শনীয় স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখে আমার ঈমান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা আমি নিজেই উপলব্দি করতে পেরেছি।
শ্রুতিলিখন; আমিনইকবাল/মোস্তফা ওয়াদুদ। রাহমানী পয়গাম