আওয়ার ইসলাম : কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি অনেক দিনের। সম্প্রতি কওমি স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের পরে এ নিয়ে এখন কওমি অঙ্গনে তুমুল আলোচনা চলছে। গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত উলামা সম্মেলনে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবি উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাই একমত হোন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হোন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো।’
প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসবাণীকে স্বাগত জানিয়েছে বেশির ভাগ কওমি মাদরাসা, আলেম ও শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর এ বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁও ইকরা মিলনায়তনে আলেমরা এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই বৈঠক থেকে ‘কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়। স্বীকৃতির পক্ষে জনমত তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় আহবায়ক কমিটিও গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মুফতি আবুল কাসেমকে আহবায়ক ও মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদকে সদস্য সচিব করে মজলিসে আমেলা ও শূরার দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কওমি সনদের সরকারী স্বীকৃতির দাবিটি যখন প্রথম ওঠে তখন এর প্রচুর বিরোধিতা ছিলো। কিন্তু কালক্রমে কঠোর বিরোধীরাও এখন সরকারী স্বীকৃতির গুরুত্ব অনুভব করছেন। কওমি শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশের বেশি এখন কওমি সনদের স্বীকৃতির পক্ষে। আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে এমনটিই জানালেন জমিয়তুল উলামার সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেন, কিছু মানুষ শুধু রাজনৈতিক কারণে এখন স্বীকৃতির বিরোধিতা করছেন। অথচ তারাই গত বিএনপি আমলে স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করেছেন।’ কওমি সনদের সরকারী স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা কমিশন একটি সুপারিশ পেশ করেছে। সেটা মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।’
২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতির জানানো হয়েছিলো। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা আসলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়। আলেম ওলামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ২০১২ সালে একটি কমিশনও গঠন করে দেয় সরকার। কিন্তু বিভিন্ন বাঁধার মুখে পড়ে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি বারবার বিলম্বিত হচ্ছে।
এই বিলম্বের পেছনে সরকারের ভেতরের কিছু মহলের কারসাজির পাশাপাশি কওমি মাদরাসাগুলোর বোর্ড ও কর্ণধারদের দলাদলি, রাজনীতিও অনেকাংশে দায়ী। কওমি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে দেখা গেছে তাদের বড় অংশ স্বীকৃতি নিয়ে এই দলাদলি, রাজনীতি এবং এই কারণে বারবার স্বীকৃতির উদ্যোগটি ঝুলে যাওয়ার ব্যাপারটিকে দারুণ ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণার চোখে দেখছেন। গত বছর তাকমিল সমাপনকারী মাওলানা নাইম ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্মক্ষেত্রে এসে স্বীকৃতির অভাবে আমরা পদে পদে সমস্যায় পড়ছি আর অন্যদিকে আমাদের অভিভাবকরা এটা নিয়ে দলাদলি করছেন। জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ থেকে তাকমিল সমাপনকারী আবু বকর সিদ্দীক বলেন, এক শিক্ষাব্যবস্থায় গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আমাকে আরেক শিক্ষাব্যবস্থায় গ্রাজুয়েশনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সেটা হতে আরও পাঁচ বছর। অথচ এদিকে স্বীকৃত সার্টিফিকেটের অভাবে আমার দেশের বাইরে যাওয়া আটকে আছে।
এফএফ