বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে তরুণ আলেমদের ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

koyme_123487 copy

ফারুক ফেরদৌস : কওমি সনদের সরকারী স্বীকৃতির দাবি অনেক দিনের। স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি সনদের স্বীকৃতি দরকার এ নিয়ে কওমি অঙ্গনে এখন কোনো দ্বিমত নেই বললেই চলে। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতির জানানো হয়েছিলো। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা আসলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়। আলেম ওলামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ২০১২ সালে একটি কমিশনও গঠন করে দেয় সরকার। কিন্তু বিভিন্ন বাঁধার মুখে পড়ে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি বারবার বিলম্বিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত উলামা সম্মেলনে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে কওমী সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়নের দাবি উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাই একমত হোন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হোন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতির বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ার ইসলাম  কথা বলেছে তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন চিন্তাশীল আলেমের সাথে। কেউ কেউ কিছু শর্ত যোগ করলেও সবাই স্বীকৃতির পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেছেন।

11222119_1037564349598824_1585553809788211414_nফরিদাবাদ জামিয়া থেকে তাকমিল সমাপনকারী এবং বর্তমানে সেখানেই ইফতা বিভাগে অধ্যয়নরত মাওলানা জুবায়ের মহিউদ্দীনের মতে সমাজে একজন আলেমের সামাজিক স্বীকৃতির ব্যাপারে সব মাদ্রাসাই সাধ্যমত চেষ্টা করে। তাই সামাজিক স্বীকৃতির পাশাপাশি লিখিত স্বীকৃতিটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া দ্বিমুখী আচরণ।

স্বীকৃতিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজ থেকে কওমী মাদ্রাসাকে একটা সময় পুরোপুরি আলাদা বা বিচ্যুত করে দিতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগী হয়ে দেশ ও দশের জন্য কল্যাণজনক কাজে এগিয়ে আসতে হলেও কাগজ কলমের স্বীকৃতির প্রয়োজন।’

স্বীকৃতি দিতে অহেতুক বিলম্ব কওমি আলেম সমাজকে দিন দিন সরকারের প্রতি বিদ্বেষী করে তুলবে বলেও মনে করেন তিনি।

জামিয়া রহমানিয়া থেকে তাকমিল সমাপনকারী মাওলানা নেহাল মুহাম্মদ আলেমদের ইসলাম প্রচার ও সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে সমাজের 12993397_1142165712501951_6317166889541255199_n
মূলধারার সাথে মিশে যাওয়ার জন্যই কওমি সনদের স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন । বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত এই তরুণ আলেম বলেন, ‘কওমি আলেমরা নিজেদের কে সমাজের বাইরের একটা অংশ ভাবছে, নিজেদের আলাদা করে দেখতে শিখছে -এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

13902563_334703850194030_7299688724553492690_nলালবাগ জামেয়ায় ইফতা বিভাগে অধ্যয়নরত মাওলানা আশরাফ মাহদি অবশ্য স্বীকৃতিকে প্রয়োজনীয় মনে করলেও স্বীকৃতির চেয়ে যোগ্যতার অভাবটাকেই বড় করে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ছাত্রদের যে ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য যোগ্য বানায় সেখানে কওমি শিক্ষার্থীরা কাজ কতটুকু করতে পারলেন সেটাই তার যোগ্যতার প্রমাণ দেয়।’

সাধারণভাবে কওমি শিক্ষার্থীরা সেই যোগ্যতা যথাযথভাবে অর্জন করতে পারছেন না বলে মনে করেন তিনি।

অনেক সময় যোগ্যতার অভাব ঢাকার জন্য স্বীকৃতিকে অজুহাত হিসেবে সামনে রাখা হয় মন্তব্য করে এই তরুণ আলেম বলেন, ‘কওমী মাদরাসার সমস্যাটা আরো গভীরে। এখানে সমস্যাটা শুধুমাত্র স্বীকৃতির না।’

12985450_985210508241674_3171959924554785570_nবিশ্বায়নের যুগে বিশ্বনবীর বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্যেই কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রয়োজন বলে মনে করেন জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল ফালাহ থেকে তাকমিল সমাপনকারী, বর্তমানে সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক জাবের। তিনি বলেন, ‘বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কওমি সনদের স্বীকৃতিটা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।’

একজন মাদ্রাসা ছাত্র নৈতিক ও আদর্শিকভাবে অনেক সৎ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্যও স্বীকৃতি প্রয়োজন।’

তবে তিনি মনে করেন, স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি বা এটা নিয়ে যেন কোন ধরণের রাজনীতি না হয় এই দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে।

এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ