হাসান মুহাম্মদ জামিল: গত পরশু একঝাঁক তরুণ আলেমের সাথে গিয়েছিলাম ঝিনাইদহে; ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহি.-এর স্মৃতিধন্য আস সুন্নাহ ট্রাস্ট পরিদর্শনে। তাঁর কর্মময় জীবনের স্মৃতিগুলো দেখে তাঁকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে!
একজন মানুষের কতোটুকু ইখলাস থাকলে কর্মপদ্ধতি এমন হতে পারে-কাছ থেকে না দেখলে বুঝা কঠিন। দ্বীনের জন্য যে কোনো সঠিক পদ্ধতি গ্রহণে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যদিও তিনি সে ধারার মানুষ নন, তথাপিও প্রান্তিকতার উর্দ্ধে উঠে এ মানুষটি প্রমাণ করেছিলেন “আমি কাজ করি দ্বীনের জন্য”।
ছোট্ট একটি উদাহরণ না টানলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে না। তিনি ছিলেন আলিয়া আর ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী একজন স্কলার। শিক্ষকতা করতেন ইউনিভার্সিটিতে।দীর্ঘসময় রিয়াদে অবস্থানের ফলে সালাফী আকিদায় হয়েছেন প্রভাবিত। কিন্তু উম্মতের দরদী এ মানুষটি লোভনীয় সব প্রস্তাব উপেক্ষা করে যখন শুরু করলেন নিজ অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম, তিনি বুঝলেন তার বাড়ির আলিয়া মাদ্রাসাটি এ খেদমতের জন্যে যথেষ্ট নয়, কারণ ইতোমধ্যেই খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে গোটা ঝিনাইদহে। উম্মতের জন্য ব্যাকুল মানুষটি অস্থির হয়ে উঠলেন-কী করবেন ভেবে!
স্থানীয় ক্বওমী আলেমদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন মাদ্রাসাটিকে ক্বওমী করার। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্বওমী আলেমদের দিয়ে মাদানী নিসাব চালু করলেন। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারী এবং ভণ্ডপীরদের দৌরাত্ম্য থেকে জাতীকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন ছিল হাদীস এবং দা’ওয়াহ বিভাগের। কিন্তু কোথায় পাবেন বিশেষজ্ঞ উস্তাদ!?
ছড়িয়ে পড়লো তাঁর খেদমতের সুফল ঝিনাইদহসহ আশেপাশের সব জেলাতে। শায়েখের ইখলাসের সুফল ভোগ করছে গোটা অঞ্চল। আমি এসব হিস্টরি শুনে পুলকিত হলাম, হতাশ হলাম নিজের মানসিকতা নিয়ে!
বত্রিশ বছর থেকে তাঁর পাশে থাকে আস সুন্নাহ ট্রাস্টের সেক্রেটারি আব্দুর রাহমান ভাইয়ের অশ্রুশিক্ত বর্ণনা শুনছিলাম আর কাঁদছিলাম প্রায় সবাই; হায় কি মানুষ হারালাম!!! বাতেলের বিরুদ্ধে তাঁর সফলতা এবং কর্মযজ্ঞ দেখে আমি নতুন করে সংসয়ে পড়ে গেলাম- দুর্ঘটনাটা কি শুধুই দুর্ঘটনা ছিলো নাকি পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়া!?
তাঁর কর্মক্ষেত্র কুষ্টিয়া ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম, এরাবিক, হাদীস এবং ফেকাহ ও আইনের চেয়ারম্যানসহ সকল শিক্ষকদের অনুভূতি শুনে কেবল সাহাবীদের (রা.) কথাই ভাবছিলাম; আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃত সাহাবীর জন্য দোয়া করতেন, চমৎকার সে দোয়াগুলো শুনে জীবিত সাহাবীরা আফসোস করতো আহা এ মৃত্যুই তো ভালো ছিলো!
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহি.এর কর্মময় সফল জীবন এবং সর্বশ্রেণীর ভালোবাসা আর অশ্রু দেখে ভাবছিলাম আমি, – হায় আমার এ বেঁচে থাকার চেয়ে অমন মৃত্যুই কতো উত্তম!!!
মা’বূদ, শায়েখ রাহি.র সকল খেদমতকে কবুল করো!!!
ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া