আব্দুল্লাহ আল মাসউদ : বাঙলাদেশে জন্ম নেওয়াটা সাইয়েদ আমীমুল ইহসান সাহেবের জন্য দুর্ভাগ্যের। জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের খতিব হিসেবে দায়িত্বপালন করা এই খ্যাতনামা আলেম আরবি আর উর্দুতে রচনা করেছিলেন প্রচুর গ্রন্থ। তার সেসব গ্রন্থের কিছু কিছু ছাপা হলেও অধিকাংশই পড়ে আছে পাণ্ডলিপি আকারে। কোন কোনটা পোকায় খেয়ে এখন বিলুপ্তির পথে।
তার রচিত গ্রন্থ মিশরের আলআযহারের মতো বিশ্ব বিখ্যাত বিদ্যাপীঠে পাঠদান করা হত এক সময়। তার লেখা 'কাওয়াইদুল ফিকহ' গ্রন্থটির প্রতি এখনও মুফতিরা নির্ভরশীল অনেক ক্ষেত্রেই। এছাড়াও তাফসির, উসুলে তাফসির, তাজবিদ, হাদিস, উসুলে হাদিস, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, সিরাত, ইলমে কালাম, তাসাওয়ুফ, ফতোয়া, ইতিহাস, জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। যার খুব অল্প সংখ্যকই প্রকাশিত হয়েছে। এর বিস্তারিত তালিকা পাবেন তার ১৬ পৃষ্ঠার সাবাত 'মিন্নাতুল বারিতে'। এর একটা কপি আমার কাছে আছে আলহামদুলিল্লাহ।
তার রচিত এসব গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলীর অনেকগুলো হয়ত ইতোমধ্যে পোকা খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আর কিছু অবহেলা আর অনাদরে পড়ে আছে। একজন লেখক কতোটা মমতা আর সময়-শ্রম ব্যায় করেন একটা গ্রন্থের পেছনে তা কেবল তারাই বুঝবেন যাদের গ্রন্থরচনার অভিজ্ঞতা আছে। আর সেগুলো যদি হয় গবেষণামূলক তবে তো কথাই নেই।
উসুলে হাদিস বিষয়ে তার রচিত ‘মিজানুল আখবার’ গ্রন্থটি একটা সময় সরকারি মাদরাসায় পড়ানো হতো। এখন হয় কিনা জানি না। এছাড়া তার হাদিস বিষয়ক গ্রন্থ ‘ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার’ ফিকহে হানাফির খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। শেষোক্তটির টীকাসহ অনুবাদ প্রকাশ করেছেন প্রয়াত আলেম ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ.
তার রচিত অধিকাংশ গ্রন্থই আরবি বা উর্দু ভাষায়। এগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। এর থেকে বাছাই করা কিছু বই বাঙলায় অনুবাদ করে এদেশের মানুষের সামনে উপস্থাপনও সময়ের দাবী।
তার জন্ম যদি বাঙলাদেশে না হয়ে ভারত-পাকিস্তান বা আরবে হতো তবে আজ তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করতেন। তার সুনাম আর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তো বিশ্বময়। অথচ আজ আমরা তার নামই জানি না। তার রচিত গ্রন্থাবলী তো বহুত দূর কি বাত।
আসলে দুর্ভাগ্যটা তার না আমাদের, যারা আমরা তার মূল্যায়ন করতে পারিনি!
এফএফ