শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি নিজের হাতে আইন তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে'

প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে রাসূল সা. এর ভবিষ্যদ্বাণী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

prakitikড. এ এইচ এম সোলায়মান : আমাদের এ পৃথিবী মহাশূন্যে ভাসমান অন্যান্য গ্রহের মতো একটি গ্রহ। দৃষ্টিতে পড়ার মতো এর কোনো খুঁটি বা পিলার নেই। এর চার দিকেই বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছে। এ পৃথিবীর পরিধি হচ্ছে ২৫ হাজার মাইল এবং আয়তন ২০ কোটি ১৯ লাখ বর্গমাইল। এটি দেখতে অনেকটা কমলা লেবুর মতো চ্যাপ্টা গোলাকার। এর চেয়ে বহু বড় গ্রহ-নক্ষত্র মহাশূন্যে ভাসমান রয়েছে।

মানুষের এ সুন্দর পৃথিবীতে প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসলীলার কারণেই সাধিত হয় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, প্লাবন, মহামারী, ভূমিকম্প ইত্যাদি। একে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে থাকি। এসব বিপর্যয় কেন সংঘটিত হয়? এসব ভয়াবহ বিপদের কারণ কী? মহানবী সা: কর্তৃক প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণীতেই এর জবাব পরিলক্ষিত হয়। 

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন এবং পাপ-পুণ্যের পথ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কেউ যদি স্বেচ্ছায় পাপের পথে পা বাড়ায়, তাহলে আল্লাহর রীতি এই যে, তিনি তাকে সেই উপায়-উপকরণ ব্যবহার করার সুযোগ করে দেন। কাজেই মানুষের অবাধ্যতা ও গুনাহের কারণেই যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে, সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখন আমার উম্মতের মধ্যে নিন্মে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হবে তখন তাদের ওপর প্রাকৃতিক বিপর্যয় নাজিল হবে। রাসূল সা:কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল। এ বৈশিষ্ট্যগুলো কী? তিনি বলেন-

১. যখন গনিমতের সম্পদ রাষ্ট্রীয়করণ করা হবে।

২. রাষ্ট্রীয় আমানতকে গনিমত মনে করা হবে।

৩. জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে।

৪. পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের আনুগত্য করতে শুরু করবে।

৫. ব্যক্তি তার মায়ের অবাধ্য হবে।

৬. বন্ধুর সাথে সদাচরণ করবে অথচ পিতামাতার সাথে অসদাচরণ করবে।

৭. মসজিদে উচ্চঃস্বরে কথা বলা হবে।

৮. সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকেরা নেতা হবে।

৯. কোনো ব্যক্তিকে তার অপকর্মের ভয়ে সম্মান করা হবে।

১০. মদপান করা হবে। রেশমি পোশাক পরিধান করা হবে।

১১. গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বৃদ্ধি পাবে।

১২. শেষের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে; তখন তারা যেন গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়া বা ভূমিধস সংঘটিত হওয়া বা চেহারা বিকৃতি হওয়ার অপেক্ষা করে’ (তিরমিজি-৪/৯৪)।

মূলত মানবজাতির অকর্মই সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মূল কারণ। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের সতর্ক করে বলেন, ‘আপনি বলুন, তিনিই তোমাদের ওপর ঊর্ধ্ব দিক থেকে অথবা তোমাদের গায়ের নিচ থেকে কোনো শাস্তি প্রেরণ করতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে ও এক দলকে অপর দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম’ (সূরা আনআাম ৬৪-৬৫)।

আলোচ্য ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব প্রমাণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেগুলোকে পৃথিবীবাসী সুনামি, সিডর, আইলা, ক্যাঁরিনা, নার্গিস ইত্যাদি নামে পরিচিত করেছে। মুসলমানেরা আল্লাহর দ্বীন যথাযথ পালন না করার কারণে তাদের বিভিন্ন দেশ ও দলে বিভক্ত হওয়াও এ ভবিষ্যদ্বাণীর জ্বলন্ত প্রমাণ। তাদের মধ্যে ধর্মহীনতা পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে অমুসলিম দেশের দ্বারা আক্রান্ত হওয়াও এর বাস্তব উদাহরণ।

উপরিউক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা পরিলক্ষিত হওয়ার পরও আমাদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সা: আমাদেরকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহ তায়ালা কিতাবধারীদের সম্পর্কে বলেন, ‘যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করত, আর যা তাদের ওপর তাদের মালিকের কাছ থেকে এখন নাজিল করা হচ্ছে (কুরআন) তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই রিজিক পেত তাদের মাথার ওপরের (আসমান) থেকে এবং তাদের পায়ের নিচের (জমিন) থেকেও’ (সূরা মায়িদা : ৬৬)।

আর রাসূল সা:-এর হাদিস থেকে জানা যায়, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা: বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের ওপর থেকে (আসমান থেকে) আজাব পাঠাতে সক্ষম নাজিল হলো, তখন রাসূল সা: বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি অথবা যখন তোমাদের পায়ের নিচ (জমিন) থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম নাজিল হলো, তখন রাসূল সা: বললেন, আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (বুখারি-৫/১৯৩)।

হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা: সূর্যগ্রহণ দেখলে বলতেন- ‘যদি তুমি এ রকম কিছু দেখে থাকো, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ করো। তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো’ (বুখারি-২/৩০, মুসলিম-২/৬২৮)।

অতএব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের উচিত আল্লাহর নিকট তাওবা করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সঙ্কল্প করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চাওয়া, মহান আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ সা: প্রদর্শিত পথ ও মতে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

লেখক : প্রিন্সিপাল, সিলেট ক্যাডেট মাদরাসা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ