সায়মা সুলতানা: ‘বৃটিশরা চেয়েছিল মুসলমানরা যেন মসজিদ ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকে, তারা যেন কখনো অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে ৷ আর বৃটিশদের সেই উদ্দশ্যকে সফল করেছে তাবলীগ ৷’
ফেসবুকে পরিচিত আমার এক নাতনি উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছে। অনেক বুদ্ধিমতী এই নাতনির বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধাকে আমি সম্মান করি। সম্মানের সাথেই বলছি, উনার এ মন্তব্য সত্যের সাথে প্রহসন মাত্র। তাবলিগ জামায়াত কি ও কেন এটা যদি আমার নাতনির জানা থাকতো তবে এমন কথা ও বলতে পারতো না। আসুন, ইতিহাসের বাতিঘরের দিকে একবার চোখ বোলানো যাক। দেখি ইতিহাস কী বলে।
বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামকে ইতিহাসবিদগণ চারটি পর্বে ভাগ করেছেন।
প্রথম পর্বে রয়েছে শাহ আবদুল আজীজ দেহলভী রঃ এর ফতুয়া, ফরায়েজি আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক বালাকোট যুদ্ধ।
২য় পর্বে রয়েছে ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লব, শামেলীর লড়াই।
৩য় পর্বে রয়েছে রেশমি রোমাল আন্দোলন ও ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন।
চুড়ান্ত পর্বে রয়েছে হিন্দু মুসলিম ঐক্য পরিষদ গঠন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্বের নেতৃত্ব দান করেছেন শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী।
শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী এর প্রতিষ্ঠিত, হোসাইন আহমদ মাদানী কর্তৃক পরিচালিত ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ নামের রাজনৈতিক সংঘঠনটিই উপমহাদেশ থেকে বৃটিশদের স্বমূলে উৎখ্যাত করে।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের এক সভায় হোসাইন আহমদ মাদানী এই প্রস্তাব রাখে যে ‘মাওলানা ইলিয়াস তো আমাদেরই আপনজন। কাজেই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের তাবলীগী বিভাগটি তাঁর উপরই ছেড়ে দেওয়া হোক।’
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সকলেই এ প্রস্তাব সমর্থন করে জমিয়তের দাওয়াতি কার্যক্রম মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর হাতে ছেড়ে দেন এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতারা তাকে সাহায্য করেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যা বৃটিশদের উৎখাতের জন্যই প্রতিষ্ঠিত, সে সংঘঠনের একটি শাখা বৃটিশদের তৈরি, আমার নাতনির এমন অযৌক্তিক কথা কিভাবে মেনে নেই?
শুধু কি তাই? আজকের এই তাবলীগ জামায়াতের সর্বপ্রথম চিল্লার ২০০ জন ভাইদের বিদায়ী হেদায়েত দিয়েছিলেন মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী স্বয়ং নিজে। সে ভাষনে মাদানী বলেছিলেন, ‘তোমরা যে কাজের পদক্ষেপ গ্রহন করছ, তার ফলে বাতিল খতম হয়ে যাবে, ভারতবর্ষ হতে বৃটিশদের শাষন শোষনের অবসান ঘটবে। লাল কিল্লার উপরে যে ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা উড়ছে, সে পতাকা পড়ে যাবে।’
আসলেও বাস্তবে তাই ঘটেছিলো। বৃটিশদের শোষনের অবসান হয়েছে। তো কিভাবে মেনে নেই তাবলীগ বৃটিশদের তৈরি? এটা কি ইতিহাস বিকৃতি নয়? এটা কি সত্যের সাথে প্রহসন নয়?
হাকীমুল উম্মত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. তাবলীগের সম্পর্কে পূর্ণ অবগত হয়ে বলেছিলেন, ‘মাওলানা ইলিয়াস সাহেব তো মাশাআল্লাহ হতাশার মাঝে আশার সঞ্চার করেছেন।’
এর কিছুদিন পর তাবলীগের একক জামাত 'থানাভবন' আসে। থানবী জামায়াতের সাথীদের কিছু হাদীয়া প্রদান করে। তারা সেই হাদিয়া সযত্নে এনে ইলিয়াস রহঃ এর হাতে দিলেন। তখন ইলিয়াস রহঃ বলেন 'আজ এই দাওয়াতী কাজের উপর যখন থানভীর মত ব্যক্তিত্বের সিলমোহর লেগে গেছে, কাজেই এই দাওয়াতী কাজ সমগ্র পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করবে ইনশাল্লাহ।’
বস্তুত তাই হয়েছে, পৃথিবীর আনাচে কানাচে আজ তাবলীগ পৌছে গেছে। কোন মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি, শত প্রতিবন্ধকতা কোন কিছুই একে রোধ করতে পারেনি, পারবেও না ইনশাল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর