বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তিনি মাদ্রাসায় পড়েননি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

A-Muslim-man-praying-alone copyআলী আজম : পেশায় সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার। পূর্বে থেকেই তার সাথে হালকা-পাতলা পরিচয় রয়েছে। তবে বেশি সম্পর্ক নেই। মাঝেমধ্যে রাস্তাঘাটে সাক্ষাৎ হয়। সালাম, মুসাফাহার পর টুকটাক কথাবার্তাও হয়। তবে তখন তাকে দেখতে স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের মতই মনে হতো। আচার-ব্যবহারে নম্র-ভদ্র হলেও মুখে দাড়ি গায়ে জুব্বা, মাথায় টুপি কিংবা পাগড়ি কিছুই কখনো দেখিনি। তবে তার সদা হাসসুজ্জল চেহারা অমায়িক আচরণ আমাকে রীতিমত মুগ্ধ করতো।

মাঝখানে বেশকিছুদিন তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। গতকাল যখন রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, ঠিক তখনই একটি সিএনজি সামনে এসে দাঁড়ালো। আমিও এদিক-ওদিক না দেখে ঝটপট উঠে পড়লাম। গাড়ি যখন চলছিলো তখন বারবার আমি ড্রাইভারের দিকে তাকাচ্ছিলাম। কেমন যেন তাকে চেনাচেনা মনে হচ্ছিলো। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না তিনি কে, তার সাথে আমার পূর্বে থেকে পরিচয় রয়েছে কিনা।

এভাবে চলতে চলতে গঠাৎ মনে পড়লো এই ড্রাইভার তো সেই ভাই, যার সাথে আমার বছর দু'য়েক পূর্বেই পরিচয় হয়েছিলো। কিন্তু তখন তার লেবাস-পোশাক ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। যার সাথে তার এখনকার পোশাকের ছিটেফোঁটাও মিল নেই। আমি গভীর ভাবনায় হারিয়ে গেলাম। মাথায় পাগড়ি, মুখে দাড়ি, গায়ে জুব্বা অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভিং করছে এ ভাই। অথচ এই ভাইয়ের গায়ে পূর্বেতো এসব পোশাক দেখিনি। প্যান্ট এবং সার্টই দেখেছি। হঠাৎ তার মধ্যে এই পরিবর্তন আসলো কী করে? সেই কথা ভাবছিলাম বারবার।

ভাবতে ভাবতে উত্তর পেলাম তিনি তাবলীগে সময় লাগিয়েছেন। এবং তাবলীগের মেহনতই এই ভাইয়ের মধ্যে আকস্মিক পরিবর্তন এনেছে। তিনি হুজুর নন, মাদ্রাসায় পড়েননি, অথচ আজ তাকে দেখতে হুজুরই মনে হয়েছিলে। মনে হয়েছিলো তিনি মাদ্রাসারই ছাত্র। তার হঠাৎ পরিবর্তন আমাকে যতটা ভাবায়নি, তারচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে এই পোশাকে তাকে ড্রাইভিং করতে দেখে। মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি, গায়ে জুব্বা তাকে অসম্ভব সৌন্দর্য দান করেছে। তার চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। এই হলো দাওয়াতে তাবলীগের কারিশমা।

আজ আমাদের মধ্যে অনেক মাদ্রাসা পড়ুয়ারাও ক্ষেত্র বিশেষে লেবাস-পোষাক সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলে। সামান্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলে নিজের অস্তিত্বের উপর চরম চপেটাঘাত করে। নিরাপত্তার অজুহাত তুলে দাড়ি কেটে ফেলে। সুন্নতি পোশাক পরিবর্তন করে প্যান্ট সার্ট পরতেও সামান্য দ্বিধাবোধ করে না। সামান্য বিনোদনের জন্য বিনোদন কেন্দ্রে গিয়ে নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিতে একবারও ভেবে দেখে না যে তা তার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান। কাজের দোহাই দিয়ে ফরজ নামাজ তরক করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না!

অথচ কিছুকিছু ভাইকে সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও দ্বীনের জন্য নিজের অসামান্য কোরবানি দিতে দেখে খুশিতে মন ভরে যায়। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক। দাড়ি-টুপির উপর আসছে অবর্ণনীয় আঘাত। রাজপথ দাড়ি-টুপিওয়ালাদের জন্য সম্পূর্ণ অনিরাপদ। অফিস-আদালতেও একইরকম অবস্থা। এরমধ্যেও যখন কাউকে নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে দেখি, তখন খুবই ভালো লাগে। তাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া আসে।

আসলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, চেষ্টা করলেই সর্বাবস্থায় দ্বীনের উপর অটল থাকা যায়। তবে দ্বীনের জন্য কিছু কোরবানি তো দিতেই হবে। মায়ের কোলে নিরাপদে ইবাদত করার নাম তো ইসলাম নয়। ইসলাম হলো সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে দ্বীনের উপর সর্বাবস্থায় অটল থাকা। কওমী মাদ্রাসার পাশাপাশি তাবলীগ সর্বাবস্থায় দ্বীনের উপর অটল থাকার সবক দেয়। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমান দান করুন, আমীন।

 

আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ