শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

যুগের প্রবর্তক ও প্রেরণার বাতিঘর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

khan_babarজহির উদ্দিন বাবর : আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত এমন আলেমের সংখ্যা বাংলাদেশে নিতান্তই কম। হাতেগোনা এমন আলেমদের একজন ছিলেন হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। গত ২৫ জুন তিনি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে। তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভা ও খেদমতের গণ্ডি অনেক বিস্তৃত। নানামুখী খেদমতের কারণে তিনি ছিলেন দেশ-বিদেশে পরিচিত। তবে আমি মনে করি তাঁর সব পরিচয় ছাপিয়ে শীর্ষ পরিচিতিটি হলো আলেম সাংবাদিক ও সম্পাদক। সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা দুটি শব্দের সঙ্গে যখন আলেমদের কোনো পরিচয়ই ছিল না তখন আলেম সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে সর্বপ্রথমে তাঁর নাম ওঠে আসতো। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর পরে এদেশে ইসলামী পঠন-পাঠন সামগ্রীর যোগানদানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা মাওলানা খানের। ইসলামী ‘পঠন-পাঠন’ সামগ্রী কথাটি তাঁর মুখ থেকেই প্রথমে শুনি। এদেশের মুসলমানদের দ্বীন শেখার কোনো উপকরণ যখন ছিল না, মকছুদুল মুমিনীন আর নেয়ামুল কোরআন যখন ছিল প্রধান অবলম্বন সেই যুগে মাওলানা খান বিশুদ্ধ আকিদার পাঠযোগ্য উপকরণ যোগানে নিরলস শ্রম দিয়েছেন।

এক কথায় বলা যায়, তিনি একটি যুগের প্রবর্তক। সেই ষাট ও সত্তরের দশকে যখন আলেমদের লেখালেখির চর্চা তো দূরের কথা বাংলা লেখা ও চর্চাকে অপরাধ মনে করতো সে যুগে একজন খান অবিরত সংগ্রাম করেছেন চলমান স্রোতের বিরুদ্ধে। একজীবনের সংগ্রাম ও সাধনার কাঙ্ক্ষিত ফল তিনি পেয়েছেন। কণ্টকাকীর্ণ, অমসৃণ যে পথে তিনি যাত্রা করেছিলেন পরবর্তী সময়ে এসে তাঁর সঙ্গে অভিযাত্রী হয়েছেন আরও অনেকেই। মাঝপথে যোগ দেয়া কারো কারো কাজের গতি হয়ত আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক। কিন্তু একটি নতুন যুগের প্রবর্তক হিসেবে চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.।

দেশ-বিদেশে, ইসলামী-সাধারণ সব অঙ্গনে ইসলামী পত্রিকার কথা বললেই ওঠে আসে মাসিক মদীনার নাম। মাওলানা খানের আর কোনো পরিচয় যদি নাও থাকতো তবুও একমাত্র মাসিক মদীনার সম্পাদক হিসেবেই তিনি অনেক বরেণ্য ও সমাদৃত হতেন। ইসলামিক অঙ্গন থেকে আজ অর্ধশতাধিক নিয়মিত-অনিয়মিত সাময়িকী ও ম্যাগাজিন বের হচ্ছে। টাকা থাকলে যে কেউ আজ সম্পাদক হয়ে পত্রিকা বের করতে পারছেন। কিন্তু মাওলানা খান যখন মাসিক মদীনার জন্ম দেন তখন বিষয়টি এতোটা সহজ ছিল না। তাঁকে অনেক বেশি সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়েছে মাসিক মদীনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে। তিনি যে যোগ্যতা ও মেধার অধিকারী, ইচ্ছে করলে অনেক আরামের জীবনযাপন করতে পারতেন চাকরগিরি করে। অর্থের পেছনে ছুটলেও আজ তাঁর অঢেল সম্পদ থাকতো। কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য একটি নতুন যুগের এবং নতুন ধারার সূচনা করতে গিয়ে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি নিজের জীবনের পুরোটা ব্যয় করেছেন একটি দ্বীনি ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠা ও প্রচারে। বাহ্যত মনে হতে পারে তিনি একটি মাত্র মাসিক পত্রিকার জন্যই জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিলেন। কিন্তু মূলত শুধু মাসিক মদীনা নয়, সারা দেশ থেকে আজ ইসলামী ধারার যত পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী ও বই-পুস্তক বের হচ্ছে আমি মনে করি এর পেছনে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের পরোক্ষ ভূমিকা আছে। আজকে ইসলামী অঙ্গনে যারাই একটু-আধটু লিখছেন সবাই কোনো না কোনোভাবে মাওলানা খানের দ্বারা প্রেরণা পেয়েছেন।

মাওলানা খান শুধু যে নিজেই লিখেছেন এবং পাঠযোগ্য ইসলামী উপকরণ যোগান দিয়েছেন তাই নয়, তিনি নিজ হাতে গড়েছেন অসংখ্য মানুষ। আজকে ইসলামী ধারায় যাদের কলম সরব রয়েছে তাদের অনেককেই মাওলানা খান পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। লেখালেখি চর্চা ও বিকাশে ক্ষেত্রে তরুণদের উন্নতির জন্য বরাবরই তাঁকে ভাবতে দেখেছি। যে কয়বার তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁর ভেতরে একটি জ্বলন অনুভব করেছি। যার মধ্যে মেধার স্ফূরণ দেখেছেন তাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছেন। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি নিজে কাজ করার চেয়ে করানোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। তাঁর আবাদ করা অঙ্গনটি পুরোপুরি আবাদ হোক, এ অঙ্গনের বিচরণটা আরও মসৃণ হোক এটাই তিনি চেয়েছেন জীবনভর। শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ার পরও শেষ বয়সে তিনি কলম হাতছাড়া করেননি।

দেশ ও জাতির জন্য একটি নতুন যুগের এবং নতুন ধারার সূচনা করতে গিয়ে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি নিজের জীবনের পুরোটা ব্যয় করেছেন একটি দ্বীনি ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠা ও প্রচারে। বাহ্যত মনে হতে পারে তিনি একটি মাত্র মাসিক পত্রিকার জন্যই জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিলেন। কিন্তু মূলত শুধু মাসিক মদীনা নয়, সারা দেশ থেকে আজ ইসলামী ধারার যত পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী ও বই-পুস্তক বের হচ্ছে আমি মনে করি এর পেছনে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের পরোক্ষ ভূমিকা আছে।

মহীরুহতুল্য এই মনীষী চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। একজীবনে মাওলানা খান রহ. নিজেকে উজার করে দেশ, জাতি ও উম্মাহকে দিয়ে গেছেন। বিনিময়ে আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। ‘অকৃতজ্ঞ’ এই জাতির কাছে মুহিউদ্দীন খানদের মতো মহামনীষীদের পাওয়ার তেমন কিছু নেই। কারণ তাঁরা জীবনভর কাজ করেন যার সন্তুষ্টির জন্য সেটাই তাদের কাছে মূখ্য। পার্থিক খ্যাতি, বাজারি স্বীকৃতি আর করপোরেট প্রচার-প্রচারণায় তাঁরা অপাঙক্তেয়। কলমের ময়দানে যে সংগ্রাম জীবনভর করে গেছেন মাওলানা খান তা কবুল হলে আর কোনোকিছুই তাঁর দরকার নেই। দুআ করি, আল্লাহ তাঁর জীবনের খেদমতগুলো কবুল করে নিন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী প্রজন্মকে চলার তাওফিক দিন।

[বছর চারেক আগে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে নিয়ে একটি স্মারক প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। সেই স্মারকের জন্য তৈরি করা লেখাটি এবার কিছুটা পরিবর্তন করা হলো]

লেখক : আলেম, কলামিস্ট ও সাংবাদিক। সাধারণ সম্পাদক, ইসলামী লেখক ফোরাম বাংলাদেশ

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ