ফারুক ফেরদৌস : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এর প্রণিত লক্ষাধিক আলেমের সাক্ষর সম্বলিত জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়াটির ব্যাপারে আলেমদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানের সাথে প্রায় সবাই একমত হলেও যার হাত ধরে ফতোয়াটি এসেছে তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের মনে। কেউ আবার বলছেন জঙ্গিবাদের প্রকৃত সংজ্ঞাটি আগে নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। কেউ কেউ ফতোয়াটি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কিছুই বলতে নারাজ।
জঙ্গিবিরোধী ফতোয়াটিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশের শীর্ষ আলেম দৈনিক ইনকিলাবের সহ সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তিনি বলেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আলেমরা সব সময়ই এগুলো বলে আসছেন। এই ফতোয়ার মাধ্যমে আরেকটু জোরালোভাবে বহুবার বলা কথাটাই নতুন করে বলা হলো। তিনি বলেন, এটা মাওলানা মাসউদের মাধ্যমে জমা করা হলেও আসলে এটা বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীর আলেমদের মতামত। তারা এগুলো অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ
[caption id="attachment_2843" align="alignleft" width="236"] মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী[/caption]
সহ আরো বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠান থেকেও একইরকম ফতোয়া এসেছে। মাওলানা নদভী বলেন, ফতোয়াটা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আর জিহাদ এক নয় এই ফতোয়ার মাধ্যমে এটাও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, আলেম ওলামাদের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এরকম একটা বড় ক্যাম্পেইন করা হয়েছে এটা প্রশংসনীয়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ অন্য পেশাজীবীদেরও এরকম ক্যাম্পেইন করা উচিত। মাওলানা নদভী মনে করেন, আলেমদের কাজটি অন্যদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। অন্যদেরও আলেমদের অনুকরণে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা উচিত।
[caption id="attachment_2845" align="alignleft" width="237"] মাওলানা গাজী আতাউর রহমান[/caption]
ফতোয়ার প্রতি আস্থা থাকলেও মাওলানা মাসউদের রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একমত নন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। দেশের অন্যতম বড় ইসলামি রাজনৈতিক দলের এই নেতা আওয়ার ইসলামকে বলেন, জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়ায় দেশের শীর্ষ আলেমদের সাক্ষর রয়েছে। এ সব আলেমর প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে তারা জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করবেন না। তবে যার হাত ধরে ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে, সেই মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদের রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে আমরা একমত নই।
[caption id="attachment_2847" align="alignright" width="258"] মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী[/caption]
মাওলানা মাসউদের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় আছে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর। গণমাধ্যমকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটি তো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া। ইসলামে জঙ্গিবাদের স্থান নেই-এ বিষয়ে সকল আলেম ওলামাও একমত। তবে যদি উনি (ফরিদ উদ্দিন মাসউদ) অন্য উদ্দেশ্যে ফতোয়াটি ব্যবহার করেন বা অন্য কোনও কার্যক্রম করতে চান সেসব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব না।
[caption id="attachment_2846" align="alignleft" width="267"] মুফতি ফয়জুল্লাহ[/caption]
ফতোয়া প্রকাশ করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাওলানা মাসউদের ফতোয়া গ্রহণ করার প্রক্রিয়ার সাথে একমত নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কিন্তু মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ যে প্রক্রিয়ায় এ স্বাক্ষর নিয়েছেন তাতে আমরা একমত নই।’ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় এই নেতা জানান, তাদের প্রবল সন্দেহ মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এই কাজ করেছেন। মাওলানা মাসউদের এই কার্যক্রমকে বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি তার কাছে পাঠানো হলেও তিনি এতে স্বাক্ষর করেননি।
গতকাল প্রকাশিত ফতোয়াটি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে দিনভর আলোচনা চলেছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকেও। এক লক্ষ আলেমের সাক্ষর গ্রহণ করার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই বলছেন সাক্ষরদাতাদের সবাইকে হয়তো আলেম বলা যাবে না।কিন্তু প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ের সমালোচনা করলেও সামগ্রিকভাবে ফতোয়াটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বেশিরভাগ মানুষ।
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ