রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ১৯ মাঘ ১৪৩১ ।। ৩ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল সারাদেশে কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ৪৮তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নির্বাচন নিয়ে দুই ইসলামী দলের মতবিনিময় সংস্কারের আলাপ যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে দেশ ততবেশি সংকটে পড়বে: তারেক রহমান অনুমতি ব্যতীত ইজতেমা ময়দানে ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ, চলছে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি দাওয়াত ও তালিমের কাজ ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব মানবজীবনে আদব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: বায়তুল মোকাররমের খতিব ‘খুনিদের এভাবে সেফ এক্সিট দিলে চরম মূল্য দিতে হবে’ বিশ্ব ইজতেমায় হাফেজ্জী চ্যারিটেবলের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প প্রতিষ্ঠাতার উসুলের ওপর থাকলেই তাবলিগ হবে ফেতনামুক্ত: মুফতি মুবারকুল্লাহ

দাওয়াত ও তালিমের কাজ ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা আকবর শরীফ, ভারত

আল্লাহ তাআলা আমাদের দীনের যে জ্ঞান দিয়েছেন তার দাবি কী? এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা কীভাবে আদায় হবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের যে জ্ঞান দিয়েছেন তা মূলত হুকুকাতের পরিচয় জানার জন্যই দিয়েছেন। এই দুনিয়া হুকুকাত আদায়ের স্থান। সর্বপ্রথম হক আল্লাহ তাআলার। আল্লাহর হক হলো একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে শিরক না করা। ইবাদতই তাঁর হক। দ্বিতীয় হক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর। রাসুলের হক হলো তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসুল হিসেবে স্বীকার করা, নিজে সুন্নাতের অনুসরণ করা, অন্যদের মধ্যে সুন্নাতের প্রচার-প্রসার করা। তৃতীয় হক আশপাশের লোকজনের। আশপাশের লোকজনের তিনটি হক- ইনসাফ, ইহসান ও ইসার। কোরআন মাজিদে আছেÑ ‘আমাকে তোমাদর মধ্যে ইনসাফ করতে আদেশ করা হয়েছে।’ (সুরা শূরা : ১৫) ইহসান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ইনসাফ ও দয়ার আদেশ করেছেন। (সুরা নাহ্ল : ৯০) তৃতীয় হলো ইসার। ইসার বলা হয় নিজের হক ছেড়ে দেওয়া, নিজের হক অন্যকে দিয়ে দেওয়া। আনসারি সাহাবায়ে কেরাম মুহাজির সাহাবিদের সঙ্গে ইসার করেছিলেন। নিজের হক মুজাহির ভাইকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তো ইলমের দাবি হলো আল্লাহ তাআলার হক, রাসুলের হক ও আশপাশের মানুষের হক যথাযথভাবে আদায় করা।

ইলমের আরেকটি দাবি হলো ইলমের ওপর অবিচল থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন : সুতরাং হে নবী! তোমাকে যেভাবে হুকুম করা হয়েছে সে অনুযায়ী তুমি নিজেও সরল পথে স্থির থাকো এবং যারা তাওবা করে তোমার সঙ্গে আছে তারাও। (সুরা হুদ : ১১২) ইলমের ওপর অবিচল থাকার অর্থ হলো নিজেকে ইলমের অনুসারী বানানো, ইলম অনুযায়ী আমল করা। যে ইলমের অনুসারী না হয়ে খাহেশাতের অনুসারী হয় সে ফাসেক।

আল্লাহ তাআলা ইলমকে পানির মতো বানিয়েছেন। নবীজি (সা.) ইলমকে পানির সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তাআলা আমাকে যে হেদায়েত ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হলো জমিনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। (বুখারি শরিফ : ৭৯) মানুষ পানি ব্যতীত বেঁচে থাকতে পারে না। পানির অপর নাম জীবন। মানুষের স্তর চারটি : শাসক, ব্যবসায়ী, জমিদার, পেশাজীবী। পানির ওপর এই চার স্তরের মানুষের জীবনই নির্ভরশীল। তদ্রুপ চার স্তরের মানুষের সফলতা ইলম তথা জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। ইলম না থাকলে তাদের উপকারিতা ও কল্যাণকামিতা শেষ হয়ে যাবে। মাওলানা ইউসুফ (রহ.) বলেন, আমাদের শরিয়তে এই চার স্তর মানুষের বিধান আছে, ফজিলতও বর্ণিত আছে। ফাজায়েলের দ্বারা আমলের প্রতি আগ্রহ ও ইয়াকিন বাড়ে। ফাজায়েলের ইলম দ্বারা আমলের ফজিলত জানা যায়। মাসায়েলের ইলম দ্বারা আমলের তরিকা জানা যায়। শরিয়তে দুটিই বর্ণিত আছে। কেননা নবীজি (সা.) আখেরি নবী। তাঁর শরিয়ত আখেরি শরিয়ত ও পরিপূর্ণ শরিয়ত। এই শরিয়ত কেয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এই শরিয়তকে হেফাজত করেন। এ জন্য ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব বেশি, তাঁদের সম্মানও অনেক বেশি। ইলম একত্রিত হয় তাকওয়ার সঙ্গে। হজরত উমর (রা.) তাকওয়া অর্জনেরও দোয়া করতেন। সুতরাং তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া ইলম হাসিল হয় না। 

ইলমের আরেকটি হক হলো ইলমের প্রচার-প্রসার করা। ইলম তো আল্লাহ সবার জন্যই পাঠিয়েছেন। বুঝমানে জন্যও পাঠিয়েছেন, অবুঝের জন্যও পাঠিয়েছেন। সবার মধ্যেই এই ইলম ছড়িয়ে দিতে হবে। বুঝমান ও অবুঝ সবার মধ্যে। এই ইলমকে ব্যাপক করার দুটি রাস্তা। একটি হলো দাওয়াত, আরেকটি হলো তালিম। দাওয়াতের রাস্তা তাদের জন্য যারা অবুঝ বা যাদের মধ্যে বুঝবুদ্ধি কম। ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হলো তাদের কাছে দীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়া। তাদেরকে উপকার ও ক্ষতি বুঝানো। শেষ পরিণতির ভয় দেখানো। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বুঝানো। সফলতা ও ব্যর্থতা বুঝানো। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা। আরেক শ্রেণির লোক আছে যাদের অনুভূতি আছে, যারা বুঝমান। তারা বুঝে আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, কিছু দায়-দায়িত্বও দিয়েছেন। একে বলে তলব বা জ্ঞান-অন্বেষা। তাদেরকে তাদের অন্বেষা অনুযায়ী ইলম শিখানোও ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে প্রথমে দাওয়াতের কাজ করেছেন। দাওয়াতের মাধ্যমেই তাদের মধ্যে তলব বা জ্ঞান-অন্বেষা সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং ওলামায়ে কেরামের জিম্মাদারি, তারা অবুঝ লোকদের মধ্যে দাওয়াতের কাজ করবে এবং দাওয়াতের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জ্ঞানের অন্বেষা সৃষ্টি করবে এবং জ্ঞান অন্বেষীদেরকে জ্ঞান শিখাবে।

অনুবাদ : শামসুদ্দীন সাদী

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ