বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বইমেলায় ‘সঠিক নিয়মে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ বাংলা’-এর মোড়ক উম্মোচন সিলেটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সমাবেশ শনিবার সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আলেম রাজনীতিবিদরা খালেদা জিয়াকে পেয়ে সেনাকুঞ্জ গর্বিত: প্রধান উপদেষ্টা লক্ষ্মীপুর মারকাযুন নূরে ১১ মাসে হাফেজ হল ১১ বছরের শিশু আফসার যেসব অভ্যাস নীরবে মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে বৈষম্য ও অন্যায় নির্মূলে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই: মজলিস আমীর আওয়ামীলীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান খেলাফত মজলিসের দেশে ফিরে যে স্বপ্নের কথা বললেন বিশ্বজয়ী হাফেজ আনাস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী : আপোষহীন এক মহিরুহের বিদায়ের ৩ বছর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ.

|| হাসান আল মাহমুদ ||

আজ ১৯ আগস্ট।  ২০২১ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছিল আপোষহীন এক মহিরুহ। তাঁর নাম আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি ছিলেন, দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর। এর আগে তিনি আল্লামা আহমদ শফী জীবিত থাকাবস্থায় এ সংগঠনটির মহাসচিব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ শিক্ষক, মুহাদ্দিস, লেখক ও আল্লাহভীরু আপোষহীন এক জাতীয় নেতা।

জন্ম :

আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন। হারুন বাবুনগরী তার নানা। মায়ের দিক দিয়ে তার বংশধারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. এর সাথে মিলিত হয়।

শিক্ষাজীবন:

৫ বছর বয়সে তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কুরআনের হেফজ শেষ করার পর আজহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর কাছে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ শুনিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

হাটহাজারী মাদরাসায় তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল কাইয়ুম, আহমদুল হক (মুফতি), আবুল হাসান, আব্দুল আজিজ, শাহ আহমদ শফীসহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ।

তারপর উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি পাকিস্তান যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। ২ বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করে তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।

জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরী, ইদ্রিস মিরাঠী, আব্দুল্লাহ ইউসুফ নোমানীসহ প্রমুখ। পাশাপাশি তিনি ওয়ালী হাসান টুঙ্কির কাছে সুনান আত-তিরমিজী ও মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর কাছে সহীহ বুখারী দ্বিতীয় বারের মত অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবন:

১৯৭৮ সালের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদরাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদরাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তার স্থলে মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস এবং শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০ সালে তাঁকে মহাসচিব করে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র ইন্তেকালের পর ১৫ নভেম্বর সংগঠনের একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি আমীর নির্বাচিত হন।

এছাড়া, তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

তাসাউফ:

শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে তিনি আব্দুল কাদের রায়পুরীর উত্তরসূরী আব্দুল আজিজ রায়পুরীর নিকট বায়’আত গ্রহণ করেন। রমযান মাসে তিনি রায়পুরীর খানকায় অবস্থান করে কিছুকাল তার সান্নিধ্যে ছিলেন।

বাংলাদেশে তিনি যাদের কাছে খেলাফত পেয়েছেন: হুসাইন আহমদ মাদানির দুই শিষ্য- আব্দুস সাত্তার, ফতেয়াবাদ, শাহ আহমদ শফী, রাঙ্গুনিয়া। আবুল হাসান আলী নদভীর শিষ্য সুলতান যওক নদভী

পরিবার:

তিনি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। ছেলের নাম মুহাম্মদ সালমান।

লেখালেখি ও রচিত গ্রন্থাবলী :

আরবি, উর্দু ও বাংলায় তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ী, দারুল উলুম হাটহাজারীর মাসিক আল মুঈনসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো-

  • সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী (১৯৭৮)
  • বিশ্ববরেণ্যে মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানিফা রহ.
  • তালিমুল ইসলাম (আরবি)
  • বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত
  • ইসলামে দাড়ির বিধান
  • তাওহীদ ও শিরক: প্রকার ও প্রকৃতি
  • মুকাদ্দিমাতুল ইলম : তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ, ফতোয়া
  • দারুল উলুম হাটহাজারীর কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
  • আকাবিরে দেওবন্দের সিলসিলায়ে সনদ
  • জুনায়েদ বাবুনগরীর রচনাসমগ্র
  • ইলমে হাদীসের ভূমিকা
  • খুতবার ভাষা
  • মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স.)
  • ইসলাম আওর সায়েন্স
  • নাস্তিক মুরতাদের শরয়ী বিধান
  • জাল হাদীস
  • সূরা ফাতিহা
  • মুকাদ্দামায়ে তানযীমুল আশতাত
  • খতমে নবুয়ত ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়
  • সিয়াম সাধনা ইতেকাফ ও ঈদ মোবারক
  • মিলাদ কিয়াম ও সুন্নাত বিদআত
  • বক্তৃতা সংকলন
  • হক বাতিলের লড়াই
  • সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড
  • ইলমে দ্বীনের গুরুত্ব ও ফজীলত ইত্যাদি

ইন্তেকাল ও মাকবারা :

প্রাজ্ঞ এই আলেমে দ্বীন ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট ৬৭ বছর বয়সে চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁকে আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ