মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬


বাংলাদেশে শুরু হয়েছে হালাল ট্যুরিজম, বাড়তে পারে বিদেশি পর্যটক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| তানবিরুল হক আবিদ ||

পর্যটন বলতে আমরা বুঝি বিনোদন, অবসর সময়ে আল্লাহর সৃষ্টি দেখে বিমহিত হওয়া। অথবা ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন বর্ণের মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের শিক্ষা- সংস্কৃতি,অভিজ্ঞতা অর্জন করা। বিশ্বকে জানা। সর্বোপরি নিজ‌ দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেওয়া।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: হে নবী আপনি বলুন, পৃথিবী পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে। [সূরা নামল: ৬৯]

বিশ্বের ক্রমবর্ধমান শিল্পের মধ্যে অন্যতম পর্যটন।এটি একদিকে যেমন দেশকে দেয় সমৃদ্ধি। অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।দেশের জিডিপি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতের উন্নয়ন, অবকাঠামো প্রভৃতির মাধ্যমে পর্যটন খাত অর্থনীতিতে একটি বড় অবদান রাখে।

সময়ের পরিবর্তনে পর্যটনশিল্পের শাখা -উপশাখা বিকাশ পাচ্ছে। তার মাঝে হালাল ট্যুরিজম অন্যতম। বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা। প্রতিবছর ১৫ কোটি মুসলিম পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটন করছেন।

হালাল ট্যুরিজম হল: ইসলামের বিধি নিষেধ মেনে ভ্রমণের আয়োজন। নারী পুরুষের আলাদা সুইমিং পুল, অ্যালকোহল মুক্ত হোটেল, ইবাদতের স্থানসহ অশ্লীলতা মুক্ত পরিবেশ।

মুসলিম পর্যটকদের জন্য সব আয়োজন হবে হালাল ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে।

হালাল ট্যুরিজম ইসলামি পর্যটনের একটি শাখা। যার আবির্ভাব ৯/১১-এর পর‌ হয়। তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রথমে হালাল ট্যুরিজম নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী এখন হালাল ট্যুরিজমের  বিকাশ হাতছানি দিচ্ছে বড় বাজারের সম্ভাবনা।

থমসন রয়টার্সের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ভ্রমণের জন্য (হজ ও ওমরাহ বাদে) ১৪২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সেই তুলনায়, চীন থেকে আসা ভ্রমণকারীরা ২০১৪ সালে ভ্রমণে ১৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন, মার্কিন ভ্রমণকারীরা ১৪৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন।

এক গবেষণায় বলছে, পৃথিবীতে যে ১০টি দেশে হালাল ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তার মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। কিন্তু যে ১০টি দেশ হালাল ট্যুরিজমের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তার মাঝে বাংলাদেশের নাম নেই।

আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা ও ভারত যেখানে হালাল ট্যুরিজম নিয়ে ব্যস্ত সেখানে আমাদের দেশে হালাল ট্যুরিজম নিয়ে পদচারণা এতদিন চোখে পড়ার মত না হলেও সম্প্রতি লেখক, দক্ষ সংগঠক ও উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর মাওলানা রোকন রাইয়ান পরিচালিত "সহযাত্রী" শুরু করেছে দেশে হালাল ট্যুরিজম। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৩০০০ মানুষকে দেশ ও দেশের বাইরে সফল ভাবে ভ্রমণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। হালাল ট্যুরিজম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের রয়েছে "কুয়াকাটায় ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্ট। এবং কক্সবাজারে হোটেল সি মোন ও টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি হাউজ বোটে শেয়ার।

যশোর থেকে ঘুরতে আসা ফ্রেন্ড সার্কেল ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস গ্রুপের রায়হান হুসাইন আওয়ার ইসলামকে জানান, সহযাত্রী স্টুডেন্ট এবং স্বল্পআয়ের মানুষদের জন্য ট্যুরিজম সহজ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্যাকেজ ডিজাইন করে থাকে। আমরা তাদের প্যাকেজ নিয়েছি। যাতায়াত, ইকো রিসোর্টে থাকা-খাওয়া সহ বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা স্টুডেন্ট হিসেবে আমাদের বাজেট লিমিটের ভেতরে ছিল।

ইলিশ পার্ক একটি বাগানবাড়ি। যা কুয়াকাটায় আর কোথাও নেই। নান্দনিক পরিবেশ, সবুজের ছোঁয়া, ইলিশ রেস্টুরেন্ট, এবং ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের প্রতিটি কটেজ। শিশুদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা বাগানের অবয়ব। সার্বক্ষণিক শতভাগ নিরাপত্তা। ফ্যামিলি, কাপল, ফ্রেন্ড সার্কেল, সিঙ্গেল সবার জন্য প্রকারভেদে কটেজ ব্যবস্থা। পুরুষ মহিলাদের খাবারের আলাদা ব্যবস্থা। দক্ষ টুর গাইড। সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে বেস্ট মনে হয়েছে সহযাত্রীর প্যাকেজ ডিজাইন ও ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্ট।

সহযাত্রীর স্বপ্ন নিয়ে কওমি উদ্যোক্তার ফাউন্ডার ও সহযাত্রীর পরিচালক মাওলানা রোকন রাইয়ান আওয়ার ইসলামকে জানান, আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে ভ্রমণ করতে বলেছেন, যেন তারা ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং তার নিদর্শন দেখতে পারে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে ভ্রমণকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা গান-বাজনা, ঢাকঢোল, হোটেলে মদ নিয়ে মোজ মাস্তি। যে কারণে ধার্মিকরা কখনো ভ্রমণকে অতটা আপন করে নিতে পারেন না। বলা চলে অনেকটা এড়িয়ে চলেন।

তাই বর্তমান  ভ্রমণ ট্রেন্ডের  বিপরীতে সহযাত্রী একটি ভিন্ন ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে।‌ যেখানে মানুষ সুস্থ ও সুন্দর হালাল পরিবেশে হালাল এনভারমেন্টে ভ্রমণ করতে পারে। আল্লাহ পাকের নিদর্শনাবলী দেখতে পারে এবং তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি মানব জীবনের অবসাধ দূর করণার্থে মূলত ২০২২ সালে আমি “সহযাত্রী” প্রতিষ্ঠা করি।

সহযাত্রী লক্ষ্য হলো দেশে হালাল ট্যুরিজমের প্রচার প্রসার করা। ট্যুরিজম একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প।দেশে হালাল পর্যটন চালু হলে টুরিস্ট বাড়বে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। মধ্যপ্রাচ্যের টুরিস্ট আমাদের দেশে তুলনামূলক অনেক কম আসে। যদি হালাল ট্যুরিজম চালু থাকে তাহলে ঐ সমস্ত টুরিস্টদের আমরা টার্গেট করতে পারব। সাথে সাথে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পারবো।

২০২২ সালে সহযাত্রী প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা প্রতি মাসে অন্তত দুটি করে বাস, বোর্ড ভাড়া করে নিজেরা গাইড করে দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রসমূহে ট্যুরে নিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কাশ্মীর, আগরাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ট্যুর পরিচালনা করে আসছি।

এ পর্যন্ত আমরা তিন হাজার পর্যটককে ভ্রমণ করিয়েছি। যারা ইসলামি শরীয়া মেনে চলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং ট্যুরে এসেও এ সমস্ত বিষয় খেয়াল রাখেন। তারাও আমাদের সাথে ট্যুর করেছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ আমাদের প্রশংসা করেছেন ‌।

এছাড়াও আমরা স্বল্প খরচে ট্যুর ডিজাইন করে থাকি। যারা খরচের ভয়ে ট্যুর করেন না বা স্টুডেন্ট রয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ তারা আমাদের গ্রুপে ট্যুর করার কারণে নামমাত্র খরচে তোর সম্পূর্ণ করতে পারছে। এটা আমাদের বড় একটি অর্জন।

আমরা যখন বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর পরিচালনা করি মেক্সিমাম হোটেলে দেখা যায় হালাল পর্যটনের কোন পরিবেশ নেই। যে কারণে আমাদের হালাল পর্যটনের জন্য রিসোর্ট বা হোটেল নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে "ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্ট" আমরা পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেয়।

"ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্ট" এটি সাগরকন্যা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত। পুরো রিসোর্টে ১২টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির কটেজ ও ইলিশ মাছের আদলে তৈরি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বলা চলে  এই রিসোর্ট একটি বাগান বাড়ির মতো। কারো বাগানবাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকার ইচ্ছে হলে চলে আসতে পারেন ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্টে। শতভাগ নিরাপত্তা ও সবগুলো স্পট ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব সহযাত্রীর।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে মোট ২ লাখ ৬৭ হাজার ২০৯ জন বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ২৪, যা বিদেশ থেকে আসা মোট পর্যটকদের প্রায় ৮৪ শতাংশ। সে বছর দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি পর্যটক আসেন (৭ হাজার ২২৫) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চীন থেকে আসেন ৭ হাজার ৪ জন (তৃতীয় সর্বোচ্চ) এবং জাপান থেকে আসেন ৪ হাজার ১৯৫ জন (চতুর্থ সর্বোচ্চ)। একই বছর যেসব দেশ থেকে অধিকসংখ্যক পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন-এমন শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি ও সৌদি আরব।

আপনার ট্যুরের প্যাকেজ ডিজাইন অথবা সরাসরি গ্রুপ ট্যুরে যোগ দিতে যোগাযোগ করুন: 01869815518

ওয়েব সাইট:  https://www.sahazatri.com

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ