|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||
প্রকাশিত হতে যাচ্ছে দরসে নিজামীর কাফিয়া জামাতের পাঠ্যপুস্তক ‘কাফিয়া’ কিতাবের একটি অনবদ্য শরাহ ‘মিনহাতুল ওয়াহিব ফি শরহে কাফিয়া ইবনে হাজিব’ (منحة الواهب في شرح كافية ابن الحاجب)। শরাহটি লিখেছেন দারুল উলুম দেওবন্দের ফাযেল ও মাদানীনগর মাদরাসার শিক্ষক, মাওলানা সাঈদ আহমদ বিন সফিউল্লাহ।
কিতাবটি সম্পর্কে মাওলানা সাঈদ আহমদ বিন সফিউল্লাহ বলেন, “আমাদের নুসখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা কিতাবের তাহকীকুন নুসুস-এর কাজ করেছি। আমাদের দেশে কাফিয়ার হিন্দুস্তানী নুসখা প্রচলিত। তবে তাতে বেশ কিছু ভুল ও মুদ্রণ জনিত প্রমোদ রয়েছে। আমরা সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করেছি। এতে আমরা কাফিয়ার দুটি প্রাচীনলিপি ও আরবের দুটি যাচাইকৃত নুসখা সামনে রেখে কাজ করেছি।
ডক্টর নাজম তারেক আব্দুল্লাহ রাহ.-এর তাহকীককৃত কাফিয়ার নুসখাকে প্রথম ও সবচে নির্ভুল নুসখা বিবেচনা করা হয়। কারণ তিনি কাফিয়ার মাখতুত ও মাতবু নয়টি নুসখা সামনে রেখে কিতাবের তাহকিক করেছেন। এরপর মিশরের মাকতাবাতুল আদাব থেকে প্রকাশিত ডক্টর আব্দুল আজিম শায়ের রাহ.-এর তাহকীককৃত কাফিয়ায় তিনি ড. নাজমের নয়টি উৎস ছাড়াও আরো দুটি নুসখা যুক্ত করে কিতাবের তাহকীক করেছেন। উল্লেখিত দুই সংস্করণের মাখতুতগুলো ছাড়াও আমরা আরো দুইটি পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেছি এবং সবগুলোকে সামনে রেখে তাহকীকুন নুসুস করেছি।
পাশাপাশি ইবনে হাজেব রাহ.-এর শরাহ শরহু মুকাদ্দিমাতিল কাফিয়া ফি ইলমিল ই’রাবসহ কিতাবের প্রাচীনতম শরাহগুলোর মধ্যে যে মতন রয়েছে, তা থেকেও তাহকীকুন নুসুসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহযোগিতা গ্রহণ করছি। ফলে আমাদের কাফিয়ার নুসখা ও হিন্দুস্তানি নুসখার (চাই সেগুলো কম্পোজকৃত হোক বা হাতে লিখিত) ইবারতের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যার কিছু নমুনা ভূমিকায় পেশ করা হয়েছে।
প্রাথমিক গণনা মতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক জায়গায় এমন পরিবর্তন এসেছে। এসব সংশোধনের কিছু স্থান এমন রয়েছে, যার মাধ্যমে মাসআলার সূরত বা ইখতিলাফের বিবরণ পুরোপুরিই বদলে গেছে। পুনশ্চ: আমরা খোদ মুসান্নিফের হাতে লিখিত কাফিয়ার কোন মাখতুত পাইনি। তবে ফাহারিসুল মাখতুতাত এর মধ্যে কাফিয়ার মাখতুত নিয়ে কিছু বিভ্রাটও রয়েছে, ভূমিকার মধ্যে আমরা এ বিষয় নিয়ে একটি জরুরী তানবিহ উল্লেখ করেছি।”
শরাহটির কিছু বৈশিষ্ট্য:
১. কাফিয়ার মুসান্নিফ ইবনে হাজিব রহ. নিজেই কাফিয়ার দুইটি শরাহ লিখেছেন, (যার বিস্তারিত বিবরণ ভূমিকায় এসেছে) সে শরাহগুলোর আলোকেই উক্ত শরাহটি তৈরি করা হয়েছে। ২. ইবনে হাজিব রহ.-এর তাকরির সংকলন ‘আমালী ইবনুল হাজিব’ এর একটা অংশ কাফিয়া কিতাবের তাকরির। সেগুলো সহ ইবনে হাজিব রহ.-এর নাহুশাস্ত্রে লিখিত অন্যান্য কিতাব থেকে উক্ত শরাহটি সংকলন করা হয়েছে। ৩. কাফিয়া কিতাবের মুসান্নিফের সমকালীন ও পরবর্তী অনেক শরুহাতের মাজামিন বা বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে একত্রিত করা হয়েছে। (সে শরাহগুলোর বিস্তারিত বিবরণ ভূমিকায় পেশ করা হয়েছে) ৪. খুবই সংক্ষেপে সহজ ইবারতে মাসআলার সারসংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ৫. কঠিন ইবারতে সুবিস্তার ও সুন্দরভাবে হল পেশ করা হয়েছে। ৬. কিতাবের ইবারতকে আপন জায়গায় ঠিক রেখে নবরূপে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে, ফলে কিতাবটি পড়লে যেকেউ সহজেই কাফিয়া হল করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। ৭. গুরুত্বপূর্ণ মাসআলার দলীলসহ আলোচনা করা হয়েছে। ৮. আমাদের শরাহের মধ্যে কাফিয়ার প্রচলিত নুসখায় বিদ্যমান ভুলভ্রান্তিগুলো একাধিক পাণ্ডুলিপি ও মুহাক্কাক নুসখার সাথে মুকাবালা করে সংশোধন করা হয়েছে। ৯. কিতাবের শেষে কাফিয়া কিতাবে উল্লেখিত ইমামদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে । ১০. কিতাবের শেষে কাফিয়ায় উল্লেখিত شواهد قرآنية وشعرية এর তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে কোনটা কিসের মেছাল তা উল্লেখ করা হয়েছে। ১১. কিতাবের শেষে সম্পূর্ণ শরাহের বিস্তারিত সূচিপত্র উল্লেখ করা হয়েছে। ১২. مختلف فيه মাসআলাগুলোর মাযাহিব বর্ণনা করা হয়েছে, যা মুসান্নিফও বলেননি। ১৩.;فائدة শিরোনামে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৪. কিছু শিক্ষণীয় ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা জানা নাহু শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক। ১৫. প্রতিটি أشعار এর সঠিক কায়েল ও মানসূব উল্লেখ করেছেন। ১৬. কিছু জায়গায় ইবনে হাজিব রহ.-এর বিভিন্ন তাসামুহও উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭. مختلف فيه মাসআলার ترجيح ও وجوه الترجيح বর্ণনা করা হয়েছে। ১৮. প্রতিটি মাসআলায় কুরআন ও হাদীস থেকে প্রচুর পরিমাণে মেছাল পেশ করা হয়েছে। ১৯. মুশকিল ইবারতের নাহবি তারকিব উল্লেখ করা হয়েছে। ২০. প্রতিটি মাসআলার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে।
শরাহটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে লাজনা প্রকাশনা ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি রমজানের মাঝামাঝি সময়েই মুদ্রিত হয়ে বাজারে আসবে। বাংলাদেশের সকল অভিজাত লাইব্রেরিতে বইটি পাওয়া যাবে। তবে বাংলাবাজারের মাকতাবাতুল আসলাফে এটি সহজলভ্য হবে। ধারণামতে কিতাবটির মূল্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
এমএইচ/