নুর আলম সিদ্দিকী, ঝিনাইদহ থেকে ফিরে
ঝিনাইদহের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের ঘ্রাণ। শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। দলবদ্ধভাবে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ ধান কেটে জমি খালি করছেন, আবার কেউ মাড়াই শেষে ধান বস্তায় ভরে বাড়িতে তুলছেন। বাম্পার ফলনের আনন্দে চাষিরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
জেলার ঝিনাইদহ সদর, কালিগঞ্জ, মহেশপুর, কোর্টচাদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডসহ উপজেলার বিভিন্ন জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে আগাম জাতের রোপা আমন ধান। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ভরে আছে মাঠ। সব জায়গায় চলছে ধান কাটার উৎসব।
এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা কৃষকদের মনে বাড়তি উৎসাহ যোগাচ্ছে।
কৃষকেরা বলছেন, তাদের বিঘা প্রতি জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির খরচ কিছুটা বেশি হলেও ফলন আশানুরূপ হচ্ছে। প্রতিটি বিঘায় ২২ মণের বেশি ধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এ সফলতার পেছনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, কৃষি বিভাগের সঠিক নির্দেশনা, এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাঝেও কৃষকদের প্রচেষ্টা ও ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার মহেশপুর, কোর্টচাদপুর, শৈলকুপা উপজেলায় ধান কাটার চিত্র বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা তাদের ফসল কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কেউ মাঠের পাশেই মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
ধান মাড়াইয়ের সময়ও স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সহযোগিতার এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা কৃষি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা যায়। কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে বাজারে ধানের ভালো দাম পেয়েছিলেন তারা।
উপজেলার বালিনগর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের প্রথমদিকে আবহাওয়ার অনিয়মিত পরিস্থিতি ও খরার কারণে আমন উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির অনুকূলতায় সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠলেও আমার ফসল আশানুরুপ হয়নি।
জেলার ধানের হাট গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিধান ৫১ প্রতিমন সাড়ে ১৪০০ থেকে ১৪৭০ টাকা, বাশমতি (ব্রিধান ৫০) প্রতিমন ২ হাজার থেকে ২১৫০ টাকা, স্বর্ণাধান ১৩৫০ থেকে ১৩৭৫ টাকা, ব্রিধান ৪৯ প্রতিমন ১৪৫০ টাকা, ধানিগোল্ড ১৪০০ টাকাসহ ধানের মানভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষক সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (সংযুক্ত) উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, আমন ধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৮ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩ হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি জমিতে ধরা হয় ৩ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন সুলতানা জানান, এবছর উপজেলায় ১৮ হাজার ১ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ায় আশা করছি যে, এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।
এনএ/