স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া
গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। ওই গৃহবধূকে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ গ্রেফতারকৃত তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়ার দুঁপচাচিয়া উপজেলা আমলি আদালতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেন বলে জেলা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিহত উম্মে সালমার বাসার চারতলার ভাড়াটিয়া জেলার দুঁপচাচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৫০), তার সহযোগী গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৬) ও একই এলাকার নিখিল রবিদাসের ছেলে ভ্যানচালক সুমন রবি দাস (২৮)।
এর আগে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাবহার করে বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
উম্মে সালমাকে হত্যার অভিযোগে গত ১১ নভেম্বর তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। তখন র্যাব সাংবাদিকদের জানায়, ছেলে সাদ তার মাকে হত্যা করেছে। এরপর তিনি তার মাকে ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সালমা হত্যার দায় তাদের কাছে কখনো স্বীকার করেননি সাদ। ফলে এই হত্যা নিয়ে আরও তদন্ত শুরু হয়। এরপর গ্রেফতার হন মাবিয়া, মোসলেম ও রবি।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং মোবাইলের সূত্র ধরে তারা প্রথমে আটক করেন বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়াকে। তিনি পুলিশকে জানান, চার মাস আগে উম্মে সালমার ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি টের পাবার পর উম্মে সালমা ও তার স্বামী আজিজুর রহমান তাকে (মাবিয়া)এক মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তার কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তার সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র সরকার এবং মোসলেমকে নিয়ে গেল শনিবার উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার সময় মাবিয়া প্রথমে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে পরিকল্পনা মতে, মাবিয়া মোবাইল ফোনে ডেকে নেন দুই সহযোগী সুমন ও মোসলেমকে। তারা দুজন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তার নাক মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, আটকের পর মাবিয়া, সুমন ও মোসলেম উদ্দিন উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছে। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে। বিকেলে তাদের তিনজনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য বগুড়ার আদালতে নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, গত ১১ নভেম্বর গৃহবধূ উম্মে সালমা হত্যা়কান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে (১৯) গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন ১২ নভেম্বর দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিহতের স্বামী আজিজুর রহমান, ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানসহ আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা র্যাব অফিসে ডাকেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। হত্যার কারণ হিসেবে র্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিষয় এবং হাত খরচের টাকার জন্য সাদ তার মাকে হত্যা করেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, সালমা হত্যায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহসহ তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।
ঘটনার সাথে নিহতের ছেলে জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কোনো প্রমাণ এখনও আমাদের কাছে নেই। তিনি র্যাবের কাছে স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এরপরে তাকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিই। তিনি এখনও রিমান্ডেই আছেন।