জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও
দেশে চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন। নবাগত জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার উদ্যোগে কৃষক ও ক্রেতাদের মেলবন্ধনের উদ্দেশ্যে চালু হয়েছে মানবতার সওদাপাতি কৃষকের বাজার। যেখানে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারছেন। এতে একদিকে যেমন খুশি হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা, অপরদিকে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষকরা ।
শুক্রবার সকাল ৮টায় ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার মাঠ চত্বরে বসে মানবতার সওদাপাতি কৃষকের বাজার নামে অস্থায়ী এ বাজার। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ বাজার চলবে মধ্য দুপুর পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বাজারে নিজেদের ক্ষেতের উৎপাদিত লাউ, শিম, মূলা, বটবটি, আলু, কাচামরিচসহ অন্যান্য কাচা সবজির পসড়া নিয়ে বসেছেন কৃষকরা। তাতে ক্রেতাদেরও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বাজারের চেয়ে প্রতিটি পণ্যে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পেয়ে খুশি ক্রেতারা। বাজারে পলিথিনমুক্ত কেনাকাটা করতেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে এ বাজারের আরেকটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ভুট্টার আঁশে তৈরি বিশেষ ব্যাগ ও পাটের ব্যাগ। এছাড়াও শুধুমাত্র কাঁচা সবজিই নয়, এ বাজারে পাওয়া যায় মাছ-গোশতসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই।
বাজার করতে আসা ক্রেতা রাসেল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে আশপাশে প্রায় ৩টি বাজার রয়েছে। আমি সবগুলোতেই যাই এবং সব গুলোরই মূল্য তালিকা আমার জানা। এখানে আমি কিছু সবজি ও প্রয়োজনীয় আরো দুই-একটি জিনিস কিনেছি। এ বাজারে আমি প্রতিটি জিনিস স্থানীয় অন্য বাজারগুলোর তুলনায় অনেক কমেই কিনেছি। কোনটাতে তো কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কম পেয়েছি।
জহির হোসেন নামে আরেক ক্রেতা জানান, আমি ব্রয়লার মুরগির মাংস কিনেছি এবং স্থানীয় বাজারের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা কম পেয়েছি। সপ্তাহে সাত দিন না হলেও অন্তত এ বাজারটিকে যেন অস্থায়ীভাবে না রেখে এটিকে স্থায়ীভাবে রাখার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।
বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক হারিস উদ্দিন জানান, আমি আধা মণ বটবটি নিয়ে আসছিলাম। এক ঘণ্টার মধ্যেই সব বিক্রি হয়েছে। বাজারের চেয়েও কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি করেছি, তবুও পাইকারদের চেয়ে বেশি মূল্য পেয়েছি। এর পরের দিন আমি আরো বেশি সবজি নিয়ে আসব।
জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা জানান, কৃষকের বাজার মূলত হলিডে মার্কেটের মতো। ছুটির দিনে সুলভ মূল্যে ক্রেতাদের ক্রয় করা এবং কৃষক সরাসরি নিজেই বিক্রেতা হয়ে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই বাজারটি চালু করা। ভোক্তারা চাইলে আরো বড় পরিসরে এ বাজারকে আমরা করার কথা ভাবতে পারি।