বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩১ ।। ২০ রবিউস সানি ১৪৪৬


ফেনীতে সুবিধাবঞ্চিত তিন হাজার দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল আজিজ সায়েম 
ফেনী প্রতিনিধি 

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের কথা বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে এলেও এখনো পিছিয়ে ফেনীর তিন হাজার দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠী। নানা প্রতিবন্ধকতায় দৃষ্টিহীনরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় থাকছে অবহেলিত। প্রযুক্তিগত বিষয়েও নেই তাদের কোনো ধারনা। মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে দেখা যায়নি কোন উদ্যোগ। প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে নিজেরা স্বাবলম্বী হবে ও ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ফেনীতে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫০৮ জন। তবে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি তথ্যে দেখা গেছে, জেলায় মোট প্রতিবন্ধী ভাতা পান ২৩ হাজার ১৩৯ জন। যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৩০ জন। অনেকে মনে করছেন এ সংখ্যা আরো বেশি। এ দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ পরিবার ও সমাজ থেকে অবহেলা আর উপেক্ষার শিকার হচ্ছেন।

জানা যায়, ফেনীতে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোট জনগোষ্ঠীর ৭৩ দশমিক ৬১ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আবার ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবে এখানেও দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ, সহজে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিতে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড ও সাদাছড়ি প্রদান করা হয়। তবে এসবের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। দৃষ্টিহীনরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় অবহেলিত। রাস্তায় বের হলেও বেশিরভাগ সময় চালকরা গাড়িতে নিতে চান না।

দৃষ্টিহীন জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে ফেনীর বিজয় সিং এলাকার চল্লিশোর্ধ্ব রেজিয়া আক্তার জানান, ‘বাইরে বের হলে সাদা ছড়িই আমার একমাত্র ভরসা। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। ফুটপাতে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্যবসায় পরিচালনা করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। আবার কিছু জায়গায় ফুটপাত থাকার পর কোনও বাড়ি বা ভবনের গেটের সামনে সেটা নিচু হয়ে যায়। সবমিলিয়ে এখন ফুটপাত দিয়ে চলাচল করাও আমাদের জন্য অনিরাপদ।’

সদর উপজেলার মাথিয়ারা এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হামিদুল্লাহ বলেন, পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছে থাকলেও চোখে দেখি না বলে সেটি থেকে বঞ্চিত। এখন আশপাশের সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেও আমি পারছি না।

রেহানা আক্তার নামে আরেক দৃষ্টিহীন নারী বলেন, ছেলে-মেয়েরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। সংকেত দেওয়া সাদাছড়ির কথা শুনেছি। তবে কখনো এ বিষয়ে কেউ বুঝিয়ে বলেনি। সেজন্য লাঠিতে ভর করেই একা একা জীবন কাটাতে হচ্ছে।

পরশুরামের বৃদ্ধ জাফর আহম্মদ বলেন, অন্ধ জীবনে অন্যের ওপর নির্ভর করেই চলতে হচ্ছে। কত প্রযুক্তির কথা শুনি, কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছু করে না। এসব অক্ষমতায় কখনো পড়াশোনা করারও সুযোগ পাইনি। আগে ভাতার টাকা পেলেও তা এখন বন্ধ। শেষ বয়সে এসে খুব কষ্টে দিন পার করছি।

জেলা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ক্ষুধা নিবারণ সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া সবুজ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে আইন বা নানা সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও তা শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে এ জনগোষ্ঠীকে সমাজ থেকেই একপ্রকার আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।

এফবিএম ফাউন্ডেশন উপদেষ্টা একরামুল হক বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের যদি হাতে কলমে কোনো ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তারা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কিছু একটা করতে পারবে। অনেকে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে। সবমিলিয়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিশ্চিত করা গেলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। 

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। কোন আবেদন বা তথ্য পেলে বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের সাদাছড়ি প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধিদের ভাতাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা চলমান রয়েছে।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ