সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ।। ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬


ভিমরুলের কামড়ে ছেলে-মেয়েসহ ইমামের মৃত্যু, জানাযা শেষে পাশাপাশি দাফন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ভিমরুলের কামড়ে মারা গেছেন এক ইমাম, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। জানাযা শেষে পাশাপাশি কবরে শায়িত হলেন তারা। এসময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়েন স্থানীয়রাও।

রোববার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়নের দুধনই গ্রামে একসঙ্গে তিনজনের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

পোড়াকান্দলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জরুল হক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আর দেখিনি। একইসঙ্গে এক পরিবারের তিনজনকে দাফনের দৃশ্য আসলেই অসহনীয়।’

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার দুধনই গ্রামের বাসিন্দা ও দুধনই বাজার জামে মসজিদে ইমাম মাওলানা আবুল কাশেম (৫৫), ছেলে সিফাত উল্লাহ (৬) ও মেয়ে লাবিবা (৮)। তার মেয়ে লাবিবা ইদারাতুল কোরআন মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় লাকড়ি আনার জন্য মেয়ে লাবিবা ও ছেলে সিফাতকে নিয়ে বন্যার পানিতে নৌকা দিয়ে বাজারে যাচ্চিলেন আবুল কাশেম। বাড়ির পাশেই একটি বাঁশঝাড়ে নৌকা আটকে যায়। তখন বাসা ভেঙে যাওয়ায় তাদের ওপর আক্রমণ করে ভিমরুল। এসময় তিনজনই গুরুতর আহত হন।

পরে তাদের উদ্ধার করে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয়রা। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আবুল কাশেম ও ছেলে সিফাতকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুপুর ১টায় আবুল কাশেম মারা যান।

এরপর বিকেল ৩টায় ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যায় মেয়ে লাবিবা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছেলে সিফাতউল্লাহকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায় সে।

বতর্মানে মাওলানা আবুল কাশেমের সংসারে স্ত্রী ছাড়াও আরও দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

মৃত আবুল কাশেমের ভাতিজা মোকসেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইবোনের মাঝে সবার বড় হেদায়েতুল্লাহ। সে হাফেজ হয়ে একটি মাদরাসা শিক্ষকতা করে সংসারে বাবার সঙ্গে হাল ধরেছিল। তার ছোট ভাই এহসানুল্লাহ হাফেজি শেষ করে বতর্মানে মাওলানা লাইনে লেখাপড়া করছে। আর বোনদের মধ্যে বড়জনের এরইমধ্যে বিয়ে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার কিছুক্ষণ আগে চাচা আমার দোকানে বসেছিলেন। কথা ছিল বাড়ি যাওয়ার আগে আমার ঘরে খেয়ে যাবেন। তখন চাচা একটি নৌকায় তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ির পাশে একটু দূর থেকে রান্নার লাকড়ি আনতে যান। সেখানে বাঁশঝাড়ে থাকা একটি ভিমরুলের চাকে হঠাৎ আঘাত লাগে নৌকার লগিতে। এতে ভিমরুল আক্রমণ করলে মারাত্মকভাবে আহত হন তারা।’

মোকসেদুল ইসলাম বলেন, ‘এসময় আমার চাচা তার শিশু সন্তানদের বাঁচাতে নিজের পিঠ পেতে দিয়ে ওদের বুকের নিচে জাপটে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরে আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে একে একে সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।’

খবর পেয়ে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন। এসময় তিনি দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার এবং ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ