যশোর জেলাজুড়ে এক কোটি খেজুরের বীজ বপন করবে জেলা প্রশাসন। জেলাজুড়ে বড় পরিসরে বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস ও গুড় শিল্পের টেকসই সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে এই বীজ বপন করা হবে। এক কোটি খেজুর বীজ বপনের পাশাপাশি জেলায় প্রায় ১৫ হাজার খেজুর গাছের চারা রোপণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ শনিবার ব্যতিক্রমী এই বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু হবে।
শুক্রবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই খেজুর বীজ বপন ও চারা রোপণের কর্মসূচি ঘোষণা করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন, অভয়নগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ, ঝিকরগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী প্রমুখ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান জানান, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং রস সংগ্রহ ও গুড় শিল্পে গাছিদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এক সময় যশোরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য খেজুর গুড়ের শিল্প হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু যশোরের জেলা প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগে এরই মধ্যে শিল্পটির সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড়ের জিআই সনদ লাভের প্রেক্ষিতে খেজুর গুড়ের যথার্থ গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং খেজুর গাছের চারা আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে দায়বদ্ধতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জেলা প্রশাসন মনে করে।
এই দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এ বছর বর্ষা মোৗসুমে জেলাজুড়ে এক কোটি খেজুরের বীজ বপন ও ১৫ হাজার চারা রোপণ করা হবে। গৃহীত এই কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে সকল উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় এক কোটি খেজুর বীজ ও উপজেলাওয়ারি নির্ধারিত সংখ্যক চারা সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। যশোরের ৮টি উপজেলার মধ্যে অভয়নগরে ৩০ লাখ এবং বাকি ৭টি উপজেলার প্রতিটিতে ১০ লাখ করে বীজ বপন করা হবে।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মোট ৭৩ একর খাস জমি পুনরুদ্ধার করে ২৫০০ খেজুর গাছের ২টি খেজুর বাগান তৈরি করা হয়। এ ছাড়া গত বছর এই উপজেলায় বিভিন্ন পতিত জমিতে ৫০ লক্ষাধিক বীজ বপন করা হয়। চৌগাছায় গৃহীত কর্মসূচির সাফল্যের পর যশোরের অভয়নগর উপজেলাতেও খেজুর গুড়ের উৎপাদনকে পুনরুজ্জীবিত করতে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম খেজুর গুড় ও পিঠা উৎসব আয়োজন, উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক গাছিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, তাদের অনলাইন ডেটাবেজ তৈরি, উৎপাদিত গুড়ের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে সারাদেশে যশোরের খাঁটি খেজুর গুড় ছড়িয়ে দেওয়ার বিভিন্ন উদ্যোগ। যথাযথ ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে জাতীয় পর্যায়েও যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি গুড় মেলা ও অনলাইনে বিক্রির সুযোগ তৈরি হওয়ায় স্থানীয় গাছিদের আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে স্থানীয় গ্রাম্য বাজারে প্রতি কেজি পাটালি মানভেদে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতো বলে গাছিরা জানিয়েছেন। চৌগাছা ও অভয়নগরে গুড় মেলা আয়োজনের পর থেকে কেজিপ্রতি উন্নতমানের ভেজালমুক্ত গুড়ের দাম মানভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর পাশাপাশি উন্নতমানের খেজুর জাত ও রস উদ্ভাবন এবং রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির উদ্ভাবন ও প্রসারের লক্ষ্যেও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, শনিবার (৬ জুলাই) বেলা ১১টায় অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে উদ্ধারকৃত সাড়ে চার একর খাস জমিতে খেজুর বীজ বপনের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে। অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৩০ দিনে ৩০ লাখ খেজুর বীজ বপনের পাশাপাশি তিন হাজার খেজুর চারাও রোপণ করা হবে। চলতি আষাঢ় মাসেই পর্যায়ক্রমে বাকি উপজেলাগুলোতেও খেজুর বীজ বপনের উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
এনএ/