ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রামে ঢুকে পড়েছে পানি।
এদিকে নদ-নদীগুলো উত্তাল থাকার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় রয়েছে বিমান চলাচলও বন্ধ।
অপরদিকে গেল মধ্যরাত থেকে বরিশালে প্রবল ঝড়ো হাওয়া বইছে বরিশালজুড়ে। সেইসঙ্গে কখনও মাঝারি আকার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে গাছপালার ঢাল ভেঙে পড়ার পাশাপাশি গাছপালা উপরে পড়ছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সোমবার (২৭ মে) সকাল ৮টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার মধ্যে সকাল পৌনে ৭ টা থেকে ৭ টার মধ্যে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
আর এর আগে ভোররাতে পিরোজপুরের উমেদপুরের কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মালেক মিয়া জানান, ভোররাতের জোয়ারের পানি ঢুকে তাদের এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে ফসলি ক্ষেতের পাশাপাশি মাছের ঘেরও ডুবে গেছে। ক্ষেতে ফসল না থাকলেও মাছের ঘেরগুলোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। আবার মেঘনার প্রচণ্ড ঢেউ আছড়ে পড়ছে নদী তীরে। এতে সেসব এলাকায় ভাঙনও হচ্ছে।
পটুয়াখলীর কলাপাড়ার খেপুপাড়া রাডার স্টেশন কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল জব্বার শরীফ বলেন, সন্ধ্যায় উপকূলে অগ্রভাগ আছড়ে পড়ে। মধ্যরাতে থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে। এখনও বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় ৫ শতাধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। আরও ২০ হাজার বিভিন্ন সংগঠনের লোক আপদকালীন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে। বিভাগে ৪ হাজর ২৩২ টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৬ হাজার ২৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। এছাড়া কুয়াকাটার সব হোটেল ও পাকা স্থাপনা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগদ অর্থ, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লাখের ওপরে মানুষ আশ্রয়ে গিয়েছে।
এনএ/