বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন।এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বুয়েটের শহীদ মিনার থেকে মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি পলাশী মোড়, ভিসি চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিলিত হয়। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে আবরার ফাহাদের ভাই ও বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ বলেন, হাইকোর্টে যখন ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখ থেকে আপিলের শুনানি চলছিল, সেখানে সোমবার শেষ শুনানি ছিল। সেখানে ২০ জন আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। যেহেতু ৫ আসামির মধ্যে ৩ জন পলাতক ছিল, ১ জনের আইনজীবী দেওয়া হয়নি, তখন বিচারকের পক্ষ থেকে ১ জনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি ৫ আগস্টের পর পালিয়েছেন।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, আমার ভাইয়ের খুনির পলায়নের জন্য রাষ্ট্র দায়ী। বর্তমান সরকারও এই দায় এড়াতে পারবে না। সরকারের ঊর্ধ্বতনরা এটা জানতে পেরেছিল কিন্তু তারা সেটা লুকিয়ে রেখেছিল। আমরা এর স্পষ্ট কোনো জবাব পাইনি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক বিষয়।
তিনি বলেন, কোনো টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা সরকার ও কারা বিভাগ থেকে স্পষ্ট জবাব চাই। তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হোক এবং পলায়নের সাথে জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
এদিকে পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, আপাতত তারা কোনো আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে না। সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, তা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেবেন। তারা চাইছেন, পলাতক জেমিসহ বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের রায় কার্যকর করা হোক।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসির দড়ি ঝুলাই দে, সব খুনীদের গর্দানে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনীদের ফাঁসি চাই’, ‘আবরার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জুলাই/২৪-এর অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘জুলাই-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ - ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত বছরের ৭ আগস্ট মোট ২০৯ জন বন্দী পালানোর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা করে। সেই মামলায় নাম উল্লেখ থাকা আসামিদের একজন মুনতাসির আল জেমি।
এমএইচ/