আজ (২৪ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার, সকাল ৯ টায়, রাজধানী ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইডিইবি) মিলনায়তনে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে- সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদ বাংলাদেশের উদ্যোগে এক ওলামা-মাশায়েখ ও সুধী সম্মেলেন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ এর সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ।
আমীরে হেফাজতের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত মুমিন, মুসলমানদের ঈমানের অপরিহার্য অংশ। পূর্বাপর সকল মত-পথ মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে সুষ্পষ্টভাষায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “মুহাম্মাদ সা. তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” এ ব্যাপারেন রাসূল সা. থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া খতমে নবুওয়তের পক্ষে কুরআন মাজীদে প্রায় শতাধিক আয়াত রয়েছে, রয়েছে দুই শতাধিক হাদীস।
আজকে বড় আফসোস আর পরিতাপের সাথে বলতে হয়, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আমাদের সমাজের অনেক মুসলমান মনে করে, ‘তারাও মনে হয় ইসলামেরই একটি দল। অথচ কাদিয়ানীদের সাথে মুসলমানদের বিরোধিতা কোন শাখাগত বিরোধিতা নয়। এটি সরাসরি ইসলাম এবং কুফুরের বিরোধ। সকল মত-পথ মাযহাবের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত, কাদিয়ানীরা কাফের, কাদিয়ানীদেরকে যারা কাফের মনে করবে না তারাও কাফের।
কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে খতীব আল্লামা ওবায়দুল হক রহ. আমৃত্যু এ সংগ্রাম করে গেছেন। সংগ্রাম করে গেছেন আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ., শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ., মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ., আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ., আল্লামদ নূর হুসাইন কাসেমী রহ. আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী রহ.। তাছাড়া শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমাদ শফী রহ. এরও জীবনের সর্বশেষ স্বপ্ন, সংগ্রাম ও দাবি ছিল, এদেশে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের ঘোষণা করতে হবে।
সুতরাং আমাদের এক দাবি, অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানীরা এদেশে হিন্দু-খৃস্টান-বৈদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরমতো সংখ্যালঘু অমুসলিম পরিচয়ে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে বসবাস করে সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকাবাজী করা মেনে নেওয়া হবে না। তাদের ধর্মপরিচয় হবে, তারা কাদিয়ানী। মুসলিম নাম নিয়ে তাদের এদেশে থাকতে দেয়া হবে না। তাদের উপাসনালয়গুলোকে মসজিদ পরিচয় দেয়া যাবে না। তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। ইসলামের নামে রচিত তাদের সকল ধর্মগ্রন্থ অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তথাকথিত আহমাদিয়া সম্প্রদায় নামে তাদের সকল অপতৎপরতা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, শুধু ইনডোর প্রোগ্রাম করলে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায় হবে না। শাইখুল ইসলাম আল্লাম আহমাদ শফী রহ. এরমতো সারাদেশে বিভাগীয় সম্মেলন করে রাজধানী ঢাকায় লক্ষ লক্ষ নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতাকে জমায়েত করে মহাসম্মেলন করার মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া খতমে নবুওয়ত কেন্দ্রীক দাওয়াতি কাজে জোর দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৫ জন কাদিয়ানী দাওয়াতি মেহনতের ফলে নতুনভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।
আজকের সম্মেলন থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তকালীন সরকারের কাছে সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী ৭ টি দাবি পেশ করেন। ১. অনতিবিলম্বে সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। ২. কাদিয়ানীদের সঙ্গে মুসলমান ছেলে-মেয়ের বিবাহ ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সম্পূর্ণ হারাম। কাদিয়ানীরা মুসলিম পরিচয় আড়ালে মুসলমানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে। অনতিবিলম্বে মুসলিম ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কাদিয়ানীদের বিবাহ নিষিদ্ধ করে আইন পাস করতে হবে। ৩. দেশব্যাপী কাদিয়ানীদের মসজিদ নামে উপাসনালয় নির্মাণের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ৪. কাদিয়ানীদের জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় পরিভাষা যথা- নবী-রাসুল, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, আজান, মুয়াজ্জিন, মসজিদ, ইমাম ইত্যাদি ধর্মীয় পরিভাষার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫. পঞ্চগড় বা দেশের যেকোনো স্থানে কাদিয়ানীদের তথাকথিত জলসা সালানা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ৬. কাদিয়ানীদের যাবতীয় প্রচারণামূলক অপতৎপরতা বই-পুস্তক মাসিক/পাক্ষিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, লিফলেট, ইত্যকার যাবতীয় প্রকাশনা, মুদ্রণ, প্রচার, সংরক্ষণ ও বিতরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৭. কাদিয়ানীদের পৃষ্ঠপোষক ও অর্থ যোগানদাতা শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ, আরএফএলসহ সকল কোম্পানির পণ্য ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল স্তরেই বয়কট করতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি প্রদান করবে। ২. পর্যায়ক্রমে দেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় শহরে খতমে নবুওয়াত সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। ৩. কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সরকারিবাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায় করার জন্য আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আয়োজন করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আব্দুল হামীদ পীর সাহেব মধুপুর বলেন, ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের অপরিহার্য আরও অনেকগুলো বিষয় কাদিয়ানিরা অস্বীকার করে। বরং তারা তাদের মনগড়া মতবাদকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই ওআইসি এবং রাবেতা আলমে ইসলামীসহ বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম সংস্থা ও একাধিক মুসলিম দেশে কাদিয়ানিরা রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় সুস্পষ্ট থাকা অপরিহার্য। তা না হলে সংখ্যালঘু কাদিয়ানিরা যেমন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, উপরন্তু সংখ্যাগুরু মুসলিমরাও তাদের ধর্মের সুরক্ষা পাচ্ছে না। ফলে মাঝে মধ্যেই অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা কখনই কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, একজন মুসলমান মুসলিম হওয়ার কারণেই খতমে নবুওয়ত আন্দোলন করতে বাধ্য। যতদিন মুসলমান থাকবে ততদিন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন করতে হবে। কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায়ে প্রতিটা পাড়া-মহল্লা, মসজিদ মাদরাসাকে একেকটি কাদিয়ানী বিরোধী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা ঢাকায় একটি বড় মহাসম্মেলন করে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাবো, ইনশা-আল্লাহ।
উক্ত সম্মেলনে মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী ও মুফতী শুআইব ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য পেশ করবেন- মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, সাবেক ধর্মমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন আল আজাদ, মাওলানা শাহ্ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, ড. এ টি এম ফখরুদ্দীন, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা হাসান জামিল, মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মুফতী বশিরুল্লাহ, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মুফতী মুসা বিন ইজহার, মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশীদ, মুফতী ইমাদুদ্দীন, মাওলানা রশীদ আহমাদ, মুফতী নূর হুসাইন নূরানী, মুফতী জাকির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা শিব্বির আহমাদ কাসেমী, মুফতী আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতী শামসুল ইসলাম জিলানী, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মাওলানা আশেকুল্লাহ, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা গাজী ইয়াকুব উসমানী, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ কাসেমী, মুফতী আল আমিন ফয়জী, মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতী ফয়জুল্লাহ আশরাফী, মাওলানা ফয়জুল্লাহ ফাহাদ, মাওলানা আব্দুল লতিফ ফারুকী, মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, মুফতী সা'দ আহমাদ আমীন বর্ণাভী, মাওলানা এনামুল হক আজাদী, মাওলানা আলী আকবর কাসেমী, মাওলানা হুসাইন আহমাদ ইসহাকী, মুফতী জাফর বিন আলী, মাওলানা আহসানুল্লাহ, মাওলানা যুবায়ের রশীদ, মাওলানা সুলতান আহমাদ জাফরী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান নবাবগঞ্জী, মাওলানা শাহেদ জাহেরী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা আহসানুল্লাহসহ দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও সুধীবৃন্দ।
হাআমা/