রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বুধবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। রাতে শনির আখড়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেখানে টায়ার ও কাঠ জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায়ও আগুন দেওয়া হয়।
বুধবার বিকাল ৫টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ। রাত ১টার দিকেও সেখানে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোঁড়ার শব্দ শোনা যায়।
বিক্ষোভকারীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাসহ যেসব জায়গায় বিক্ষুব্ধরা আগুন ধরিয়েছিল সেগুলোও নেভাতে যেতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। সব জ্বলে পুড়ে নিজেই নিভে গেছে আগুন। বিকালে সংঘাত শুরুর পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
রাত ১২টার দিকেও যাত্রাবাড়ী থেকে চট্গ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীগামী সব সড়ক বন্ধ ছিল। সড়কে র্যারিকেড দেওয়া। যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় দুই বছরের একটি শিশুসহ ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইমরান (২৭) নামে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণকে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এছাড়া সিয়াম নামে গলায় গুলিবিদ্ধ আরও এক তরুণকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায় কিছু লোক। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জরুরি বিভাগের দরজায় এসে তারা ‘সিয়াম মারা গেছে’ বলতে বলতে আহত ব্যক্তিকে না নামিয়েই তারা গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যান।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, একজন আহত ব্যক্তিকে নিয়ে কিছু লোক এসেছিল। তারা আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে না নামিয়েই চলে গেছেন। ওই ব্যক্তি মারা গেছেন কী না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের পোস্তাগোলা ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার শাহীন আলম বলেন, “তারা টোল প্লাজাসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়েছে। আমরা তো কাছেই যেতে পারছি না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের এডিসি মো. আলাউদ্দীন বলেন, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শনির আখড়া এলাকায় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে হঠাৎ করে কিছু ‘উচ্ছৃঙ্খল লোক’ এসে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পর শনির আখড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ গেলে ‘হামলাকারী’দের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘাত চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘাতে পুলিশ ও হামলাকারী ছাড়াও কয়েকজন পথচারী আহত হয়েছেন বলে শুনেছেন এডিসি আলাউদ্দীন।
এনএ/