বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতার পরিপূর্ণ ও যথাযথ প্রয়োগ, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরী যা একমাত্র একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই সম্ভব।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান তথা চলমান সংকট নিরসনে আজকের এই মতবিনিময় সভায় আমরা স্পষ্টভাবে সরকারের প্রতি অবিলম্বে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আয়োজন করতে কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নেয়ার জোর দাবি জানাই।
আজ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী সুলতান মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী শরাফত হোসাইন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রীস, সহকারী মহাসচিব আলহাজ্ব আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী, মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন মোল্লা, মুফতী ইলিয়াস মাদারীপূরী, মো: মোফাচ্ছির হোসাইন, অ্যাডভোকেট মো: জয়নুল আবেদীন ও মুফতী শিহাবউদ্দীন কাসেমী প্রমূখ।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি নয় বরং দেশের ১৮ কোটি মানুষের অন্তরের দাবি। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য থেকে জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। কেন্দ্র দখল, দিনের ভোট রাতে শেষ করে ফেলা, প্রার্থীদের উপর আক্রমণ হওয়ার পরও যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে দাবি করা হয় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, সমগ্র জাতি এ বিষয়ে একমত যে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কোন বিকল্প নেই।
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন নজীর নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
কাজী আবুল খায়ের বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি কথা দিচ্ছি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, আমার উপর আস্থা রাখুন’ বলে দিনের ভোট রাতে করে ফেলেছিলেন। ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা আজ ভুলুণ্টিত।
মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় ভোটাররা ভোট প্রদানে উৎসাহ হারিয়েছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে বিদেশীরাও আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে।
মাওলানা হামিদী আরো বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো দূরদর্শিতার পরিচয় দিবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনকে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া আছে তার পরিপূর্ণ প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতাব্দীকাল পেরিয়ে গেলেও আমরা আজও একটি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য, পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত শক্তিশালী নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে বারবার জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, একথার উপর আমরা সবাই একমত যে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনভাবেই সম্ভব নয়। ১৪ সালে অবৈধভাবে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। অবৈধ সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আর কোন নির্বাচনে যাবে না।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী,কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয়তা মাওলানা গাজী ইউসুফ প্রমূখ।
এমএম/