কওমি সনদ বাস্তবায়ন করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব: ধর্ম উপদেষ্টা
প্রকাশ:
১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:৫৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ধর্ম উপদেষ্টা আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, কওমি সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তবে আমি এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টাসহ সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। এখন আমাদের দেখতে হবে কওমির সনদ ও সুবিধা যারা নিতে চান, তারা নিতে কতটা প্রস্তুত। তারা নিতে চাইলে আমরা দিতে প্রস্তুত আছি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ধুলিয়া মাদরাসা মাঠে আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়ার ‘জীবন ও কর্ম’ নামে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা এবং তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান মেহমানের বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ড. আ ফ ম খালিদ হুসাইন বলেন, ‘চাকরি ও কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে আলেম-ওলামাদের মাঝে একটি ফিলসফি কাজ করে, সেটি হলো— দারুল উলুম দেওবন্দের আটটি নীতির একটি হলো সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকা। মনে রাখতে হবে, মাদরাসা হলো আল্লাহর রহমত। এই মাদরাসা লোকজনের কলিজার ভেতর আল্লাহর ভয় পয়দা করে। মানুষের মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি নিশ্চিত করে। আল্লাহর ভয় থাকলে মানুষের মর্যাদা বেড়ে যাবে। সমাজে দু-একজন আলেমের জন্য ফুল জামাতকে দোষী সাব্যস্থ করা যাবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে যায়। প্রয়োজনে লক্ষ লোককে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু পাগলামি কমে যায় যখন মাথার ওপর ডাণ্ডা পড়ে। রোমানিয়ার চসেস্কুর ক্ষমতার লোভের পরিণতি ছিল তাকে ৫০টি গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়। লোভী মানুষরা যেখানে টাকা ও জমি দেখে, সেখানে হামলা করে। টাকার জন্য এই পাগলামি বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে- চোর, ডাকাত ও ঘুষখোরদের হজও আল্লাহ কবুল করেন না।’ বর্তমান সরকার আট মাস দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার হজের খরচ এক লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারি টাকায় এখন কেউ হজে যেতে পারবে না। এবার আমরা হাজীদের সেবার জন্য ২০০ সরকারি ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়ে যাব। সেখানে আমরা চারটি হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছি- যেখানে ডায়ালিসিস ও হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হবে। হজসেবার জন্য আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। ২০ এপ্রিল সেটির উদ্বোধন হবে। হাজীরা মোবাইলে টিপ দিয়ে তার লাগেজ কোথায় তা জানতে পারবেন অ্যাপসের মাধ্যমে। হজে দিনের কী কী আমল ও কর্মসূচি তা-ও জানা যাবে। হজ সিস্টেমকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সব হাজীকে ইসলামী ব্যাংক থেকে কার্ড দেওয়া হবে। এতে কারো সঙ্গে করে টাকা নিতে হবে না। এই কার্ড দিয়ে সৌদি আরবের যেকোনো এটিএম বুথ থেকে রিয়াল উঠানো যাবে। মার্কেটে কেনাকাটা করা যাবে। দেশের ব্যবহৃত মোবাইল সিমকে রুমিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বল্প ব্যয়ে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় দেশি সিম ব্যবহার করা যাবে। হাজীদের সেবার জন্য সৌদিতে অধ্যয়নরত ছাত্রসহ লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন স্থানে যাদের নিয়োগ দিয়েছি, তারা সবাই আল্লাহওয়ালা। তারা কোনো ঘুষ খায় না। আমরা মসজিদ পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করেছি। এখানে কেউ চাইলেই কোনো ইমামকে বহিষ্কার করতে পারবে না। ইমাম নিয়োগেরও নীতিমালা হবে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনের জন্য ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন কাঠামো করা হবে। ইমাম ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিবছর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৪ জেলার সেরা ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করব।’ ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের সুদ ও জামানত ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই ঋণের কোনো খেলাপি নেই। একজন থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মধ্যে চার কোটি ৪১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অসুস্থ ইমামদের জন্য এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে।’ এ সময় তিনি শায়খে ধুলিয়ার কর্মজীবন ও মানুষের কল্যাণে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সহসভাপতি স্যায়িদ আসজাদ মাদানি। তিনি বলেন, ‘রাসুলের আদর্শ আমাদের মানতে হবে। রাসুলের আদর্শই আমাদের মুক্তির পথ। আমাদের চারটি বিষয়ে আমল করতে হবে। সেসব হলো- ইখলাছ, কোনো কাজে দৃঢ় থাকা, সৃষ্টির সেবা করা এবং সুন্নাহর অনুসরণ করা।’ আর-রাহমান ফাউন্ডেশন ধুলিয়া ঘাটুয়া, আমিরপুর বানিয়াচংয়ের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধুলিয়া (রহ.)-এর সাহেবজাদা মাওলানা হাবিবুর রহমান। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আলী মুকিব, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপপরিচালক শাহ নজরুল ইসলাম, মাওলানা জুনাইদ আহমেদ কাটখালীসহ দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মিম সুফিয়ান। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ধুলিয়া গ্রামের আলোকিত ব্যক্তিত্ব ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়া বহু মসজিদ ও মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই দেশবরেণ্য আলেম ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানি স্যায়িদ হোসাইন আহমেদ মাদানির ছাত্র ও খলিফা। মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, আব্দুর রব ইউসুফি, নুরুল ইসলাম ওলিপুরী ও নুরুল ইসলাম খানের মতো দেশবরেণ্য ওলামাদের সৃষ্টি করেছেন শিক্ষক হিসেবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনবার অংশ নিয়েছেন তিনি। তিনি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির। |