রমজানে দরূদ শরীফ; ফযীলত ও গুরুত্ব
প্রকাশ: ১২ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৩৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া ||

ইবাদতের বিশেষ মৌসুম পবিত্র রমজান মাস। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসের প্রধান ইবাদত ‘সিয়াম’ বা রোজা পালন করা। একজন মুমিনের উচিত পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের সাথে সাথে নফল এবাদতকেও অধিক বাড়িয়ে দেয়া। যেমন ইস্তেগফার পাঠ, দুরুদ পড়া, অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করা, কুরআন তেলাওয়াত করা ও অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’ -শোয়াবুল ইমান ৩/৩০৫

নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরুদ পাঠ করা।

■ হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক বার ‘সালাত’ প্রেরণ করবে (দরূদ পড়বে), আল্লাহ তার উপর দশ বার ‘সালাত’ প্রেরণ করবেন (বিশেষ রহমত বর্ষণ করবেন)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪০৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৮৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯০৬

■ আবু বুরদাহ বিন নিয়ার রা.-এর হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো অধিক সুসংবাদ দান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-

আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি দিলের ইখলাসের সাথে আমার প্রতি একটি সালাত প্রেরণ করবে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার উপর দশটি রহমত প্রেরণ করবেন। তার মর্তবা দশবার উন্নীত করবেন। তার জন্য দশটি নেকি লিখে দেবেন এবং তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন! -সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৯৮১০; মুজামে কাবীর তবারানী, হাদীস ৫১৩; দাআওয়াতে কাবীর, বাইহাকী, হাদীস ১৭৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৭২৪৫ (সহীহ)

আল্লাহু আকবার! মাত্র একবার দরূদ শরীফ পাঠ করলে এত এত পুরস্কার! এত খায়ের ও বরকত! তাহলে কেউ দশবার দরূদ পাঠ করলে আরো কত বেশি লাভ করবে! আর যদি কোনো বান্দা খুব বেশি নয়, ১০০ বার দরূদ পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ মেহেরবান তাকে কী পরিমাণ দান করবেন? 

■ কাআব বিন উজ্রা রা. ও অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত-

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন। তিনি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন তখন বললেন ‘আমীন’। দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও ‘আমীন’ বললেন এবং তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বললেন, ‘আমীন’! আমরা কারণ জিজ্ঞাসা করলে নবীজী উত্তরে ইরশাদ করলেন-

মিম্বরে আরোহণের সময় আমার কাছে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এলেন (এবং তিনটি বদদুআ করলেন, আর আমি তাঁর প্রত্যেক বদদুআর উপর ‘আমীন’ বললাম) :

আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি কল্যাণপ্রাপ্ত না হোক, যে রমযান মাস পেল। তারপরও তার গোনাহ ক্ষমা করা হল না। আমি বললাম, ‘আমীন’!

যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি কল্যাণপ্রাপ্ত না হোক, যার নিকট আপনার নাম উল্লেখ করা হল। তা সত্ত্বেও সে আপনার প্রতি দরূদ পড়ল না। আমি বললাম, ‘আমীন’!

তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলে তিনি বললেন- ওই ব্যক্তিরও কল্যাণ না হোক, যে পিতা-মাতার উভয়কে বা তাদের একজনকে বার্ধক্যে উপনীত পেল। কিন্তু তারা তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কারণ হল না (অর্থাৎ সে তাদের খেদমত করে জান্নাত কামাই করতে পারল না)। আমি বললাম, ‘আমীন’! -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭২৫৬; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ৬৪৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪০৯; আলকাওলুল বাদী, পৃ. ২৯২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই রমজান মাসে অনন্য ইবাদত সহ বেশি বেশি দূরত পাঠ করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : উস্তাযুল হাদিস ও শিক্ষা-সচিব, জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া কলেজ রোড, বরিশাল

হাআমা/