চা বিক্রির টাকায় মাদ্রাসার জমি কিনে দিলেন রুবেল মিয়া
প্রকাশ: ০৮ মার্চ, ২০২৫, ০৩:৫৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

আল্লাহর পথে দান করতে বিপুল সম্পদ নয়, মানসিকতাই প্রধান—সেটা আবারও প্রমাণ করলেন নারায়ণগঞ্জের রুবেল মিয়া। নিজে জীবিকা নির্বাহ করেন চা বিক্রি করে। সেই চা বিক্রির উপার্জিত অর্থ দিয়েই তিনি নিজ এলাকার একটি মাদ্রাসার জন্য জমি কিনে দিয়েছেন। 
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সাবদি এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া। নিজের পড়ালেখার গণ্ডি বেশিদূর আগাতে না পারলেও তিনি চান না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার মতো থেমে যাক। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষাতেও এগিয়ে থাকে সেটাও তার চাওয়া।
এজন্য রুবেল মিয়া চা বিক্রির উপার্জিত টাকা দিয়ে মাদ্রাসার জন্য প্রায় ৯ শতাংশ জমি কিনে দান করেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এর আগে রুবেল মিয়ার বাবা হাসিব মিয়া ২০০২ সালের দিকে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী হাজরাদী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান গড়ে তুলেন। আর রুবেল মিয়া সপ্তম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় চায়ের দোকানে সময় দিতে থাকেন।
এরপর ২০১৪ সালের দিকে তার বাবা মৃত্যুবরণ করলে পুরো দোকানের হাল ধরেন রুবেল মিয়া। সেই সঙ্গে ভিন্ন স্বাদের মালাই চা বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন। বছর না ঘুরতেই তার মালাই চায়ের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ মালাই চা যেন তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। আর এ চা বিক্রির টাকায় মাদরাসার জন্য জমি ক্রয় করেন। তার নির্মিত জায়গায় মাদরাসা নির্মাণ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাদেরিয়া তাহেরিয়া সাবেরিয়া হাসিবিয়া মাদরাসা’।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মাদরাসাটির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেন। মাদরাসায় ৭ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। রুবেল মিয়ার উদ্দেশ্য এ মাদরাসাটিকে শ্রেষ্ঠতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা।
রুবেল মিয়া বলেন, ২৩ বছর ধরে চা বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে ২০১৫ সাল থেকে আমার বানানো মালাই চা ভাইরাল হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫শ থেকে ৭শ কাপ চা বিক্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে দুধ চা ১৫ টাকা, মালাই চা ৪০ টাকা ও ডাবল মালাই চা ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আমার এখানে আসে। সেই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরে আমার বেশ ভালো আয় হয়। সেই আয় থেকে মাদরাসার জন্য জায়গা কিনেছি।
মাদরাসায় জমি দান করার প্রসঙ্গে রুবেল বলেন, আমি তেমন পড়াশোনা করতে পারি নাই। মাত্র ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছিলাম। পরে এ চায়ের দোকানে মনোযোগ দেই। চায়ের দোকান দেওয়ার আগে থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল উপার্জনের টাকা দিয়ে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার। দীর্ঘদিন পর আমার সে আশা পূরণ হয়।

এমএম/