স্মার্টফোন আসক্তি : তরুণ প্রজন্মের জন্য সতর্কতা
প্রকাশ:
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:১১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
||মুহিউদ্দীন মাআয|| স্মার্টফোন। মানবজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। পরস্পরের মাঝে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সহজ একটি মাধ্যম। ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের কাজ করা যায় অনায়াসেই। যেকোনো তথ্য ও যোগাযোগের জন্য একটা ’ক্লিক’ ই বের করে দিচ্ছে হাজারো উপায়। স্মার্টফোনের ভালো দিকগুলো যেমন প্রশংসনীয়, খারাপ দিকগুলোও তেমন অনস্বীকার্য। বর্তমানে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই এখন অনলাইন ও স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। গতি হারিয়ে ফেলছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের। দৈনন্দিন রুটিনে ব্যত্যয় ঘটছে প্রায়শঃ। পড়াশোনা বা কাজের প্রতি অনীহা দিন দিন বেড়েই চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার এখন তরুণদের জন্য নিত্য ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । একটা সময় তরুনরা অবসর পেলে— এলাকার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব থাকতো। বিভিন্ন বই-পুস্তকে ডুবে সময় পার করতো। শরীরচর্চা ও খেলাধুলায় মন ফুরফুরে রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন তাদের অবসর সময়ের সবচেয়ে বড় সঙ্গী স্মার্টফোন। এমনকি বিশেষ ছুটির দিনেও তাদের বেশিরভাগ সময় কাটছে ভার্চুয়াল জগতের গলিঘুপচিতে। ফলে তাদের সামাজিক জীবনের আবেগ-অনুভূতি লোপ পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ,আপনজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করা ও শরীরের প্রতি যত্নবান হওয়া যেন তাদের কাছে এখন বিরক্তির কারণ। এছাড়াও অনলাইন ও ভার্চুয়াল জগতে অধিক সময় ব্যয়ে শারিরীক-মানসিক সমস্যাসহ নানামুখি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। এছাড়াও সাইবার ক্রাইমের সম্মুখীন হয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেও পড়ছে অনেক মানুষ। বিশেষকরে—আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ইবাদাত-বন্দেগিতে স্মার্টফোনের প্রভাব পড়ছে বেশি। যেখানে একজন ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর বিভিন্ন আমল করেন, সূরা ইয়াসীন পড়েন, মাগরীবের পর ওযিফা পাঠ করেন; ফযীলতপূর্ণ দিনে বিশেষ কোনো আমল করেন। সেখানে তার অজান্তেই হাতে উঠে আসছে এই বিধ্বংসী ডিভাইস—স্মার্টফোন। নোটিফিকেশন চেক করার অজুহাতে ঢুকে পড়ছে ফেইসবুক-ইউটিউব বা অন্য কোনো সাইটে। স্ক্রল করতে করতে চোখের পলকেই কেটে যায় গুরুত্বপূর্ণ বহু সময়। এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনের অনেক মূল্যবান সময়। স্মার্টফোন ব্যবহারের এই খারাপ দিকটা মানবজীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছূ তথ্য— স্মার্টফোন ব্যবহারের ইতিবাচক দিক সমূহ : ২. যোগাযোগের সহজ উপায় : মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে পরিবার, বন্ধু বা অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ। প্রবাসে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ খুব সহজলভ্য হয়েছে। ৩. অফিস ও ব্যবসা পরিচালনা : মেইল চেক করা, প্রেজেন্টেশন তৈরি, অনলাইন মিটিং করা এখন স্মার্টফোনেই সম্ভব। ছোট ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ৫. সফর ও ভ্রমণ : গুগল ম্যাপ যেকোনো অজানা স্থানে যেতে গাইডলাইনের কাজে আসে। হোটেল বুকিং, ফ্লাইট চেক করা বা রিভিউ দেখা এখন স্মার্টফোনেই সম্ভব। ১. মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার : অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম অনেকের জীবনকে অগোছালো করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীলতা মানসিক চাপ বাড়ায়। ২. স্বাস্থ্য সমস্যা : দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারে চোখের সমস্যা, ঘাড়ের ব্যথা,মাইগ্রেন এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। রেডিয়েশনের প্রভাব নিয়ে অনেকেই এখন সচেতন। ৩. সময় অপচয় : অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় বিনোদনের অ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান। এতে পড়াশোনা বা কাজের প্রতি মনোযোগ মারাত্মকভাবে কমে যায়। ৪. সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি: স্মার্টফোনের মাধ্যমে হ্যাকিং, ফিশিং বা তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ৫. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা : বাস্তব জীবনে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে মানুষ ভার্চুয়াল জগতে বেশি জড়িত। এর ফলে মানসিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। যেভাবে ব্যবহার করলে ক্ষতির ঝুঁকি কম : • সময় বেঁধে ব্যবহার করা : অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা স্ক্রলিং থেকে বিরত থাকা। • ডিজিটাল ডিটক্স করা : সপ্তাহে অন্তত একদিন ফোন থেকে দূরে থাকা। • স্মার্টফোনকে টুল হিসেবে ব্যবহার করুন : অযথা সময় অপচয় না করে শেখার ও কাজের জন্য এটি ব্যবহার করা। এমএইচ/ |