আল্লামা কমারুদ্দীন আহমদ গৌরখপুরী রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৫ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

আল্লামা কমারুদ্দীন আহমেদ গৌরখপুরী রহ. ছিলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, বিজ্ঞ মুহাদ্দিস ও দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খে ছানী। ১৯৬৬ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি দার উলুম দেওবন্দে শিক্ষকতা চালিয়ে যান। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রহ.-এর একজন সুযোগ্য খলিফা।

জন্ম: শায়েখে ছানী আল্লামা কমারুদ্দীন আহমেদ বিন বশিরুদ্দিন গৌরখপুরী রহ. উত্তরপ্রদেশের গৌরখপুর জেলার বারহালগঞ্জে নামক গ্রামে ১৯৩৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষা অর্জন: তিনি ইহইয়াউল উলূম মুবারকপুর এবং দারুল উলুম মৌতে ​​প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর ১৯৫৪ (১৩৭৭ হিজরি) সালে দার উলুম দেওবন্দে ভর্তি হয়ে ১৯৫৭ সালে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন।

তিনি মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. ও ফখরুদ্দিন আহমদ মুরাদাবাদী রহ.-এর কাছে সহিহ বোখারী, শায়েখ ইবরাহীম বালইয়াভী রহ.-এর কাছে সহীহ মুসলিম ও জামে তিরমিযী, আল্লামা  বশীর আহমাদ খান বুলন্দশহরী রহ.-এর কাছে সুনানে নাসাঈ, মাওলানা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রহ.-এর কাছে সুনানে আবু দাউদ, মাওলানা আবদুল আহাদ দেওবন্দী রহ.-এর কাছে শামায়েলে তিরমিযী, মাওলানা সাইয়্যেদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর কাছে  শারহু মাআনিল আছার, মাওলানা জুহুর আহমদ দেওবন্দী রহ.-এর কাছে সুনানে ইবনে মাজাহ এবং মুওয়াত্বা ইমাম মালেক এবং মাওলানা জলীল আহমাদ কিরানবী রহ.-এর কাছে মুওয়াত্বা ইমাম মুহাম্মাদ পড়েন।

তিনি যে বছর হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ.-এর কাছে বুখারী শরীফ পড়ছিলেন সেবছরই বছরের মাঝে মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. ইন্তেকাল করেন। ফলে বুখারীর বাকী অংশ সে বছর  ফখরুদ্দিন আহমদ মুরাদাবাদী রহ. পড়ান।

তাসাউফ ও সুলুক: তিনি প্রথমে তাসাউফ ও সুলুকের ময়দানে শাহ ওয়াসিউল্লাহ ইলাহাবাদী রহ.-এর সাথে একটি ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপন করেন। তারপর তার মৃত্যুর পর আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রহ.-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন বাইয়াতে থাকার পরে তিনি তার থেকে খেলাফতও লাভ করেন।

তাদরীস: শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি নিজ মুরুব্বি ও উস্তাদ মাওলানা ইবরাহীম বালইয়াভী রহ.-এর দিকনির্দেশনায় মাদরাসায়ে আবদুর রব দিল্লিতে প্রায় আট বছর পাঠদানে নিয়োজিত থাকেন। সেখানে তিনি সহিহ বোখারী পাঠদান করেন। চেরাগে দিল্লির একটি জামে মসজিদে তখন তিনি নিয়মিত কুরআনের তাফসীরও করতেন।

এরপর মাওলানা  ইবরাহীম বালিইয়াভী রহ.-এর মাধ্যমেই ১৩৮৬ হিজরি মোতাবেক ১৯৬৬ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৩৯৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৯ সন থেকে  ধীরে ধীরে উচ্চ পদমর্যাদায় আসীন হতে থাকেন। এক পর্যায়ে মুহাদ্দিসের পদমর্যাদায় উন্নীত হয়ে সহীহ মুসলিম ও সুনানে নাসায়ী কিতাব পাঠদান করেন। এরপর সর্বশেষ তিনি দাওরায়ে হাদীসে সহিহ বোখারী ২য় খন্ড এবং তাফসীর বিভাগে তাফসীরে ইবনে কাসীরের সূরায়ে সফফাতের তাফসীর পাঠদানে করেন।

দেওবন্দের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন: তিনি দুইবার দারুল উলুম দেওবন্দের নাযেমে দারুল একামা এবং একবার নাযেমে মজলিসে তালীমীর দায়িত্ব পালন করেন। নাযেমে দারুল একামার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রথম মেয়াদে ১৩৯০ হিজরি মোতাবেক ১৯৭০ সনে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ১৩৯৪ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৪ সন থেকে ১৪০১ হিজরি মোতাবেক ১৯৮০ সন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

 

আর আল্লামা নাসির আহমাদ খান বুলন্দশহরী রহ. সদরুল মুদাররিসীন থাকাকালীন ১৪১০ হিজরি মোতাবেক ১৯৮৯ সন থেকে ১৪১৬ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৫ সন পর্যন্ত নাযেমে মজলিসে তালীমীর দায়িত্ব পালন করেন।

লেখালেখি: লেখালেখির ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৌলিক কোনো রচনা বের না হলেও তামিলনাড়ুর জামে মসজিদে হাশেমে কৃত তার মাওয়ায়েজের একত্রিত সংকলন জাওয়াহারাতে ক্বমার নামে এক খণ্ডে  প্রকাশিত হয়েছে।

ওফাত: ১৯ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৬ হিজরি  মোতাবেক ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ঈসায়ী রোজ রবিবার ফজরের পূর্বে মেরাটের আনন্দ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।

এনএ/