কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বই লিখলেন মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বই লিখেছেন বিশিষ্ট গবেষক ও আহকামে যিন্দেগী, আহকামুন্ নিছা, ইসলামী মনোবিজ্ঞান, ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন।

বই সম্পর্কে লেখক জানান, আজকের শিশু-কিশোর আগামী দিনের দেশ ও জাতির পরিচালক। আপনারা এই শিশু-কিশোরদের বেসিক শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে দেশ ও জাতির পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলছেন। এটা জাতির এক মহান সেবা। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ।

তিনি জানান, প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর তথা শুরু থেকে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপ্ত করার পর বহুশিশু-কিশোরের আর বেশি লেখাপড়ার সুযোগ হয় না। তাই এ পর্যন্ত শিক্ষার মধ্যে যথাসাধ্য এমন মৌলিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত রাখা চাই, যা শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সহায়ক হয়। আপনারা সিলেবাসে এ পর্যায়ের বৈষয়িক অনেক কিছুই যোগ করে শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আরও কয়েকটি মৌলিক প্রয়োজন পূরণার্থে সিলেবাসে আর একটা সাবজেক্ট যোগ করা অতি প্রয়োজনীয়। সেটা হল- "ইসলাম ও আরবী শিক্ষা"। এর জন্য আপনাদের প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্লাসের সময় থেকে মাত্র ২০/৩০ মিনিটের একটা সময় বের করে নিলেই যথেষ্ট হবে। (প্লে-গ্রুপ, নার্সারি এবং ১ম ও ২য় শ্রেণীর ক্ষেত্রে ২০ মিনিট হলেও চলবে। তার উপরের শ্রেণীসমূহের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট হলে উত্তম হবে।) এই সময়ে থাকবে ‘ইসলাম ও আরবী শিক্ষা’-এর একটি ঘণ্টা। এই একটি মাত্র ঘণ্টাতেই সংক্ষেপে মৌলিক 6টি বিষয় শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে, যেগুলো শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যত জীবনের 6 টি মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। সেগুলো হলো-

(১) মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস শিক্ষা দেওয়া। এই মৌলিক শিক্ষা থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রাইমারির পর আর লেখাপড়া না করলেও সারাজীবন তারা মুসলমান হিসেবে চলতে সক্ষম হবে। শিশু-কিশোর মনে ইসলামের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে থাকলে আশা করা যায় ভবিষ্যতে তারা নাস্তিক বা একেবারে বেদ্বীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

(2) মৌলিক ইবাদত-বন্দেগী ও সেগুলোর জরুরি মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া। যাতে তাদের ভবিষ্যত জীবনের ইবাদত-বন্দেগী শুদ্ধ হতে পারে।

(3) মৌলিক ইসলামী আদর্শ ও কৃষ্টি-কালচার শিক্ষা দেওয়া। যাতে তারা অমুসলিম কৃষ্টি-কালচারের অনুবর্তী হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে।

(4) পুরো কুরআন মাজীদ শুদ্ধভাবে পড়তে শেখানো। তাহলে তাদের সারা জীবনের কুরআনের তেলাওয়াত সঠিক হবে, নামাযের কেরাত শুদ্ধভাবে হওয়ার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামায শুদ্ধ হবে।

(5) বিশেষ উপদেশমূলক চল্লিশটি আয়াত ও চল্লিশটি হাদীছ অর্থসহ মুখস্থ করিয়ে দেওয়া। যা সারা জীবন তাদের মস্তিষ্কে সু-প্রভাব ফেলতে থাকবে।

(6) প্রাথমিক পর্যায়ের আরবি কথোপকথন শিক্ষা দেওয়া। তাহলে দেশের প্রচুর সংখ্যক মানুষ যারা আরব দেশসমূহে কর্মের জন্য যায়, তারা আরবি কথোপকথন জানা থাকার কারণে ভালো অবস্থান করে নিতে পারবে। সেইসঙ্গে আরবী জানা থাকার কারণে ভবিষ্যতে তারা ইসলামিয়াত বিষয়ে ভাল নম্বর করাসহ উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার অনুপ্রেরণাও লাভ করবে এই ভেবে যে, আমি তো আরবী কিছুটা জানিই, আরও একটু জানলেই তো আমি অগ্রসর হতে পারি। এভাবে আরবী ভাষায় কথোপকথন জানা তাদের বৈষয়িক ও ধর্মীয় উভয় দিকের কল্যাণ বয়ে আনবে।

প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনসমূহের পরিচালক ও শিক্ষকবৃন্দের নিকট আমাদের আবেদন- আপনাদের হাতে গড়া শিশু-কিশোরদেরকে নাস্তিকতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাদের মধ্যে সারাজীবন ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী চলার মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে দেওয়ার ও তার ভিত্তি গড়ে দেওয়ার জন্য, তাদের সারা জীবনের নামায ও কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য, তাদেরকে ইসলামী মন-মানস, ইসলামী আদর্শ ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, সর্বোপরি তাদের বৈষয়িক ও ধর্মীয় উভয় দিকের কল্যাণ সাধনের জন্য আপনারা আপনাদের সিলেবাসে ইসলাম ও আরবী শিক্ষার এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা সক্রিয় বিবেচনায় আনবেন। এতে আপনাদের এক মহান দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে ইসলামপ্রীয় লোকদের সন্তানের আগমনও নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আপনারা বৈষয়িকভাবেও লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ! পরকালের প্রাপ্তি তো থাকবেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবূল করুন। আমীন!

উল্লেখ্য- প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীর এই একটি ক্লাসের জন্য আমরা ‘ইসলাম ও আরবী শিক্ষা’ নামে একটি সিরিজ পুস্তক (মোট ৭ শ্রেণীর জন্য ৭ খণ্ডে) তৈরি করেছি। যেগুলোতে উপরোক্ত 6টি বিষয়ের 5টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শুধু কুরআন তেলাওয়াত সহীহভাবে শেখানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উস্তাদ নিজের থেকে করাবেন। সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা পুস্তকটিতে রয়েছে। সিরিজ পুস্তকগুলোর ভাষা, উপস্থাপনা, আলোচ্য বিষয়ের ভারত্বে তারতম্য- সবিকছুই শিশু-কিশোরদের মেধার লেভেল ও মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় রেখে নিষ্পন্ন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পুস্তক পাঠদানের জন্য শিক্ষক-নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই উদ্যোগকে সফল করুন। আমীন!

প্রয়োজনে পুস্তকগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা, বুঝা ও দেখার জন্য আমাদের নিকট আপনাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবেন। অনলাইনে সংক্ষিপ্ত পিডিএফও দেখে নিতে পারেন। লিংক-

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  1. ঢাকার যাত্রাবাড়ি, তেজগাও ও উত্তরা থানার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগামী শিক্ষাবর্ষ (2025) থেকে সিরিজ পুস্তকটি চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য যারা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তারা আগামী ডিসেম্বর (2024)- এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমাদেরকে অবহিত করলে চাহিদা মোতাবেক আমরা পুস্তকগুলো মুদ্রণের উদ্যোগ নিব। আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুস্তকগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
  2. এ পুস্তকসমূহ পাঠদানের জন্য কুরআন শুদ্ধভাবে শেখাতে পারে এবং প্রাথমিক আরবী কথোপকথন জানে এমন শিক্ষক/শিক্ষিকা আবশ্যক। কওমী মাদরাসা ফারেগ শিক্ষক/শিক্ষিকা অধিকতর উপযোগী হবে।

যোগাযোগ: যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসা, ঢাকা। নম্বর: ০১৭১২-৫৮৫৯১৮

(মোবাইলে কথা বলার সময়: আসরের পর থেকে রাত 10টা পর্যন্ত।)

হাআমা/