কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না: চরমোনাই পীর
প্রকাশ:
০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৪৩ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) জুমার নামাজের পরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণবিপ্লবে সংগঠিত গণহত্যার বিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিতে ক্ষমতায় যেতে চায়। কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার অনেক সুযোগ ছিল। বিএনপি কিন্তু আমাদেরকে অফার (প্রস্তাব) কম করেনি। আওয়ামী লীগও আমাদেরকে অনেক লোভনীয় অফার দিয়েছে। কিন্তু আমরা কারো দ্বারা ব্যবহার হইনি।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবে শ্রমিকদের অনেক বড় অবদান রয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বিগত সরকারের কোনো ভূমিকা ছিলো না উল্যেখ করে তিনি বলেন - শেখ হাসিনা সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো দুর্নীতি এবং ১৭ বছর তারা লুটপাট করে পার করা। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে কালো তালিকাভূক্ত করার দাবি জানান তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে চলছে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ। সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম বলেন, আজকের এই শ্রমিক সমাবেশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সুফল। এখনও শ্রমিকদের প্রতি মালিক-শ্রমিক বৈষম্য রয়ে গেছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত এই উপদেষ্টা সরকার শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নিজেকে এখনও প্রধানমন্ত্রী দাবি করে। সে প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশে ফিরে আসুক! আমরা তার বিচার দেখতে চাই। ভারতে বসে এদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করে শেখ হাসিনা দেশের সাথে উপহাস করছে। এদেশের মাটিতে শেখ হাসিনার বিচার হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি । বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গাজী আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে শ্রমিক কমিশন গঠন করা উচিত। তিনি উপদেষ্টা সরকারের কাছে শ্রমিক কমিশন গঠনের দাবি জানান। ৫ আগস্টে অর্জিত অভ্যূত্থানের ফলাফল কোনো এক দলের ঘরে নিতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সমাবেশে ১৫ দফা দাবির পেশ করা হয়। ১. শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. শ্রমিক বান্ধব রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় শ্রমিকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। তাই খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে শ্রমিকের নূন্যতম মজুরী ২৫,০০০/= (পঁচিশ হাজার টাকা) নির্ধারণ করতে হবে। ৪. ভর্তুকিমূল্যে শ্রমিক পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, শিশুখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রি সরবরাহ করতে হবে। ৫. অসুস্থ শ্রমিকদের ভাতা প্রদান করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা ও বীমা সুবিধার আওতায় আনতে হবে। ৬. বাধ্যতামূলকভাবে সকল শ্রমিকের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া ব্যতিত শ্রমিক ছাটাই করা যাবেনা। ৭. কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৮. ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, সিএনজি ও রিক্সার লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৯. পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল প্রকার চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। পণ্য পরিবহনে ওয়েস্কেল সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। ১০. প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি ও টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশগমনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও খরচ কমাতে হবে। ১১. সিএনজি ও অটোরিক্সা থেকে দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিক চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে। অকারণে ট্রাফিক মামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং যাত্রী ওঠানামা ও অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত সিএনজি ও অটোরিক্সা স্ট্যান্ড তৈরি করতে হবে। ১২. নির্মাণখাতে অনুমোদনের জটিলতা ও ভোগান্তির কারণে নির্মানখাতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে ফলে বহু নির্মাণ শ্রমিক বেকারত্ব বরণ করছে। তাই সহজে প্লান অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৩. হকার ও ভ্রাম্যমান হকারদের পুর্নবাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করা যাবেনা। পজিশন ভাড়ার নামে অবৈধ চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ১৪. দোকান কর্মচারী ও হোটেল-রেস্তরা কর্মচারীদের কর্মসময় ৮ ঘন্টা ও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম চালু করতে হরে। ১৫. সকল শিল্প কারখানায় নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এনএ/ |