প্রভাব খাটিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি হওয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
প্রকাশ:
০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৪৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
নোয়াখালী প্রতিনিধি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদারের বিরুদ্ধে দলের প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসিস্ট কায়দায় বসুরহাট কেন্দ্রীয় মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে এমন অভিযোগ করেন খোদ নবঘোষিত কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মো.রফিক উল্যাহ। এর আগে, গত সোমবার ২৮ অক্টোবর বিকেলে এই মসজিদ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে একই দিন রাত পোনে ৮টার দিকে জেলা বিএনপির সদস্য মো. রফিক উল্যাহ তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ঘোষিত কমিটিকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে লিখেন, এই কমিটিতে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নই। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপি নেতার এমন স্ট্যাটাসে এলাকা জুড়ে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। বিষয়টি টক অব দ্যা কোম্পানীগঞ্জ-এ পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতা রফিক ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেন, বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুসুল্লীদের মতামতকে উপেক্ষা করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূরুল আলম শিকদার মসজিদ কমিটির সভাপতি হয়। একই সাথে ফ্যাসিস্ট মির্জার দোসর জসীম উদ্দিনকে সেক্রেটারি করে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন গত সোমবার ২৮ অক্টোবর বাদ আছর বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এই কমিটি ঘোষণা করে। কমিটিতে আমাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে। ফ্যাসিস্ট কায়দায় গঠিত কমিটিতে আমি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নই। আমি সম্মানিত মুসুল্লিদের সাথে থেকে মসজিদের সার্বিক কার্যক্রমে আগ্রহী। যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য মো. রফিক উল্যাহ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাজার হাজার মসুল্লির মতামতকে উপেক্ষা করে বল প্রয়োগ করে যে কমিটি দেয় তা অবশ্যই ফ্যাসিস্ট। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন প্রভাব খাটিয়ে এই কমিটি দেন। এই মসজিদে শুক্রবারে জুমার নামাজে ১৫-২০ হাজার মুসল্লি হয়। নতুন কমিটির সভাপতি বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুসল্লি নয়। বিএনপি নেতা রফিক অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার পোস্ট যদি মিথ্যা হয়। আমি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছি দল আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনী ব্যবস্থা নিবে। আপনারা তদন্ত করে দেখেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সিকদারের বাড়ি এই মসজিদ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। উনাকে ওখান থেকে এসে এখানে কেন মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে হবে। বসুরহাট পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এখানে হাজার হাজার লোক আছে। কেন তাদেরকে বাদ দিয়ে আমাদের জোরপূর্বক করতে হবে। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটা তাদের এলাকা। এখানে গত ১৭-১৮ বছর তৃণমূলের কর্মিরা অনেক নিগৃহীত নির্যাতিত হয়েছে। আমরা বসুরহাট এলাকায় ব্যবসা করি। আমরা কত রকমের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কায়দায় যদি আমরাও দখল করি। কেন মানব? তারা দলের নাম বিক্রি করতেছে। দলের দায়িত্বশীল হিসেবে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করে নাই। বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা এবং মুসল্লিরা এটা মনে করে। অন্যায়টা বড় হওয়ায় প্রতিবাদটা আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করতে হয়েছে। তারা উপজেলার শীর্ষ নেতা অন্যরা ভয়ে প্রতিবাদ করবেনা। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের পদ পদবীর ভয় আছে। আমার দলীয় পদ তাদের কাছে নেই। তারা চাইলেও আমার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবেনা। আমার জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আর আমি দোষী সাব্যস্ত হলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা নেক। এতে আমার কোনো আপত্তি থাকবেনা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, সকলের অনুরোধে উপজেলা বিএনপি, জামায়াত ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ওনার মনঃপূত হয়নি এজন্য তিনি পদত্যাগ করছে। এটা তার ব্যাপার। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিকদার বলেন, দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে কোন কমিটি করা হয়নি। আমাকে যে সভাপতি করবে এটা আমি জানতাম না। এর আগে, আওয়ামী লীগের লোকজন ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা জীবনে কোন দিন মসজিদে বসে কমিটি করে নাই। মির্জার অফিস থেকে একটি কমিটি করে পাঠানো হতো, ইমাম সাহেব নামাজ শেষে কমিটি পড়ে শুনিয়ে দিতেন। গত তিন মাস যাবত মসজিদের কার্যক্রম অনেকটা চলছে না। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেনা। পরে এখানে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, জামায়াতের পৌর আমির ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ও মুসল্লিদের সাথে পরামর্শ করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, আমাকে বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে এখানে সভাপতি করা হয়নি। আমি এই মসজিদের নিজে একজন মুসল্লি। যেহেতু আমরা বাজারের ওপর থাকি, এই মসজিদেই আমরা নামাজ পড়ি। আছরের নামাজের পরে ৩০০-৪০০ লোকের উপস্থিতিতে কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেহেতু রফিক বিরোধীতা করতে পারছে সেহেতু এটি ফ্যাসিস্ট আকার হয় না। আমি নিজে তার স্ট্যাটাসে লাইক দিয়েছি। এনএ/ |