জুমার দিনে গোসল করা কি আবশ্যক?
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:১৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। বিশেষ এই দিনে বান্দার জন্য রয়েছে অশেষ ফজিলত। এ দিনে ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

জুমার দিন ও নামাজের গুরুত্ব মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, পবিত্র কোরআনুল কারিমে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করেছেন। যেখানে মহান এই দিনের অশেষ ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে, জুমার নামাজ আদায়কে ফরজ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে ৩ জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন’। (তিরমিজী, হাদিস: ৫০০)

জুমার দিনে গোসল, মিসওয়াক, সুগন্ধি ব্যবহারসহ উত্তম কাপড় পরিধান করে মসজিদে যাওয়ার কথা অনেক হাদিসে এসেছে। সালমান ফারসী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত (নামাজ) আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৬৪)

এ ক্ষেত্রে জুমার দিনে গোসল করা প্রপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের জন্য কর্তব্য। আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, জুমার দিন প্রত্যেক বালিগের (প্রাপ্তবয়স্ক) জন্য গোসল করা কর্তব্য (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৩৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৩০)। এ বিষয়ে আরো বেশকিছু হাদিসও পাওয়া যায়।

আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রা. থেকে বর্ণিত- ওমর রা. জুমার দিনে সমবেত লোকদের সামনে খুতবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবিদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। ওমর রা. তাকে জোরে ডেকে বললেন, এটা কোনো সময়? ওই ব্যক্তি বললেন, আমি আজ কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ঘরে ফিরে না যেতেই আজান শুনতে পেলাম, তাই আমি ওজুর অতিরিক্ত কিছুই করতে পারিনি। ওমর রা. বললেন, শুধুমাত্র ওজুই করেছ। অথচ তোমার জানা আছে রাসূলুল্লাহ সা. গোসল করে আসার জন্য আদেশ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২২৮)

আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রা. থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সা. একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কেউ জুমায় এলে সে যেন গোসল করে নেয় (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮২৫)

আবার আওস ইবনু আওস রা. আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করলো এবং গোসল করালো, তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে আছে এক বছরের সিয়াম (রোজা) ও কিয়ামের (সালাতের) সওয়াব। (তিরমিজী, হাদিস: ৪৯৬, ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১০৮৭)

সুতরাং, উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে জুমার দিনে গোসল করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে গোসল করা ছাড়া জুমার নামাজ আদায় হবে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। অধিকাংশ আলেমদের মত, যেহেতু জুমার দিনে গোসল করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাই নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করাই উত্তম। আর অপর পক্ষের মত, রাসূলুল্লাহ সা. যখন মদিনায় ছিলেন সে সময় লোকজন সকাল থেকেই কাজে যেতেন, ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে গোসল করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই কারো গোসল ফরজ না হলে জুমার দিনে সে যদি গোসল নাও করে তবুও তার নামাজ হয়ে যাবে।

এনএ/