পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে দোয়া করা যাবে?
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৩৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

দোয়া মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সূরা মুমিন: ৬০)।

নবীজি সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অত্যন্ত লাজুক ও দয়ালু; যখন কোনো বান্দা তাঁর নিকট দুহাত উঠিয়ে দোয়া করে, তিনি তার দুহাত শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (তিরমিজি: ৩৫৫৬)

তবে, কবুল হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে ৩টি শর্ত মেনে দোয়া করতে হয়। শর্তগুলো হচ্ছে- ১. যে কাজে গুনাহ হবে, এমন কোনো কাজের উদ্দেশ্যে দোয়া করা যাবে না। ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে দোয়া করা যাবে না। ৩. দোয়া করে তার ফলাফল পেতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। (বুখারি: ৬৩৪০; মুসলিম: ৬৮২৯)

উপরোক্ত শর্ত তিনটি মানলে যেকোনো বিষয়ে দোয়া করার অবকাশ আছে। এমনকি খুব ছোট বিষয়েও তাঁর কাছে দোয়া করা যায়। তবে, এক্ষেত্রে আদব মানা জরুরি। চিন্তা করতে হবে, যার কাছে দোয়া করছেন তিনি কেমন প্রতাপশালী ও ক্ষমতাবান? তাঁর কাছে তাঁরই অপছন্দের বিষয় নিয়ে হাজির হলে আদবের বরখেলাফ তো হবেই, দোয়াও কবুল না হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই নির্দিষ্ট কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে কামনা করার পরিবর্তে আল্লাহর কাছে যোগ্য ও কল্যাণময় স্ত্রী কামনা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। কেননা, মহান প্রভু আপনার ধারণার চেয়েও উত্তম জীবনসঙ্গী দিতে পারেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়ত কোনো একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তবা কোনো একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না।’(সুরা বাকারা: ২১৬)

অতএব, আল্লাহর ইচ্ছার কাছেই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উচিত। এরপরও নির্দিষ্ট কাউকে বিয়ে করতে এভাবে দোয়া করা যাবে— ‘হে আল্লাহ! যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তাকে আমার জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করুন।’ প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইবনুল জাওজি রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে চাওয়া থেকে বিরত থাকবে। তবে (কোনো কিছু নির্দিষ্ট করে চাইলে) কল্যাণের দোয়া যুক্ত থাকলেই ভালো। কেননা, অনেক সময় বহু পার্থিব কাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জন, ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (সায়দুল খাতির: ৩৫২)

উত্তম ও কল্যাণকর স্ত্রী পাওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মুসা আ.-এর দোয়াটি পাঠ করা যায়। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন; পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গিনীও দান করেছেন। দোয়াটি হলো— ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ

উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।’

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সুরা কাসাস: ২৪)

উত্তম জীবনসঙ্গিনী পেতে কুরআনে বর্ণিত আরও একটি দোয়া করা যায়। সেটি হলো—

ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ ‘

উচ্চারণ: রাব্বানা-হাবলানা-মিন আজওয়া-জিনা- ওয়া যুররিইয়া-তিনা, কুররাতা আ‘ইউনিওঁ, ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকিনা ইমা-মা-।’

অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করুন।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪)

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের উত্তম সঙ্গী দান করুন, মনের কল্যাণকর আশা পূরণ করুন। আমিন।

এনএ/