গুম হওয়া ছেলের সন্ধান চেয়ে হেফাজত নেতা মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী’র মামলা
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৭:২২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| কাউসার লাবীব ||

১১ বছর আগে ২০১৩ সালে গুম হওয়া ছেলের সন্ধান পেতে মামলা করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী।

আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল চারটার দিকে তিনি রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থানায় তিনি মামলাটি দায়ের করেন।

মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী আওয়ার ইসলামকে বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী  মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তৎকালীন আইজিপি শহিদুল হক, তৎকালীন র‍্যাব মহাপরিচালক, মো: মোখলেছুর রহমান, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমদ, তৎকালীন ডিবি প্রধান মনিরুল হকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।

সন্তান গুমের ১১ বছর বিলম্ব করে মামলা করার কারণ হিসেবে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমরা ইতোপূর্বে গুলশান এবং হাজারীবাগ থানায় একাধিকবার মামলা এবং জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে চেয়েছি। কিন্তু থানার কর্তব্যরত অফিসার তা গ্রহণ করেনি। এমনকি আমাকে তীরস্কার করে বলা হয়েছে, ‘দেখেন খোঁজ নিয়ে আপনার ছেলে জঙ্গী-টঙ্গী হয়ে গেছে কী না!’

হেফাজতের এই নায়েবে আমির বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। এখন পরিবেশ পাল্টেছে। তাই মামলাটি করতে পেরেছি। আমরা আমাদের সন্তানের খোঁজ চাই। আমরা পজেটিভ কোনো সংবাদ পাওয়ার আশায় দিন গুণছি।

হাজারীবাগ থানায় মামলা দায়েরের সময় তার সঙ্গে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সহ-অর্থসম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, অনলইন অ্যাক্টিভিস্ট মাওলানা রুহুল আমি সাদী (সাইমুম সাদী), ঢাকা মহানগরীর হেফাজতের দায়িত্বশীল মাওলানা সানাউল্লাহ খান, হেফাজেতের লালবাগ জোনের দায়িত্বশীল মাওলানা ফরিদ আহমেদ হেলালী, হাজারীবাগ জোনের দায়িত্বশীল মাওলানা হাবিব মাদানী প্রমূখ।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন মামলা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী ১১ বছর ঘরে তার ছেলের কোনো সন্ধান পান না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করবো, যতদ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে যেন সুষ্ঠ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আমরা তার ছেলের সন্ধান চাই।

এদিকে আওয়ার ইসলামের হাতে আসা হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লেখা এজাহার বলা হয়, ‘আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী (৫৬), পিতা- মৃত একরাম হোসেন, স্থায়ী ঠিকানা- বাড়ী নং- ৩৮১/৯/এ-২, ঝাউচর, থানা- হাজারীবাগ, জেলা-ঢাকা, সাবেক ঠিকানা- সাং- ৪০/ডি, নবীপুর, ঝিগাতলা, ঢাকা মোবাইল নং-০১৯৭৫৭১২২৪১, এনআইডি নং-৮৬৮৩৭৯৭৬৭৭ (নায়েবে আমীর, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ) সঙ্গীয় সাক্ষী আমার স্ত্রী শামছুন নাহারসহ ইং ০১/০৯/২০২৪ ইং তারিখ, বিকাল- ১৫.৩০ ঘটিকার সময় আপনার থানায় হাজির হয়ে আসামী ১। মহিউদ্দিন খান আলমগীর (তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী), ২। শহিদুল হক (তৎকালীন আইজিপি), ৩। মো: মোখলেছুর রহমান (তৎকালীন মহাপরিচালক, র‍্যাব), ৪। বেনজির আহমদ (তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার), ৫। মনিরুল হক (তৎকালীন ডিবি প্রধান) সহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন আসামীগণের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করতেছি যে, আমার ছেলে ভিকটিম আবু হানিফা নোমান আলী (২৩), পিতা- মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী মাতা- শামছুন নাহার, সাং- বাড়ী নং- ৩৮১/৯/এ-২, ঝাউচর, থানা- হাজারীবাগ, জেলা-ঢাকা, মোবাইল নং- ০১৭৬০৫৫৭৪০৬, ছাত্র, আলিম, ২য় বর্ষ, মাদরাসায়ে আলীয়া ঢাকা, বিগত ১০/০৮/২০১৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় আমার সাবেক ঠিকানার বাসা হতে তার মামা মাওলানা শরীফুল ইসলাম, পিতা-আছির উদ্দিন, সাং- বাড়ী নং- ৩৪, রোড নং- ১/এ, ব্লক নং- জে, বারিধারা, ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়।’

এজহারে উল্লেখ করা হয়, ‘সে উক্ত তারিখের পূর্বেও উল্লেখিত তার মামার বাসায় অনেকবার যাতায়াত করেছিল এবং মাঝেমধ্যে সেখানে অবস্থান করত। তখন গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তাকে শিবির সন্দেহে হুমকী দেয় বলে গত ২৬/০৭/২০১৩ তারিখ আমাকে জানায়। বাসা থেকে যাওয়ার পরে ঐ দিন অর্থাৎ গত ১০/০৮/২০১৩ ইং তারিখ সে ফোন না করায় আমি সন্ধ্যা ১৯.০০ ঘটিকার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল নং-০১৭৬০৫৫৭৪০৬ এ কল করলে তার মোবাইল ফোনটি বারবার বন্ধ পাওয়া যায়। এতে আমি ও আমার স্ত্রী সঙ্গীয় সাক্ষী শামছুন নাহার বিচলিত হয়ে পড়ি। তৎক্ষণাৎ আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিতে থাকি। অনেক খোঁজাখুজির পরও তার কোনো হদিস না পাওয়ায় আমি উপরোক্ত সাক্ষী শামছুন নাহারকে নিয়ে গুলশান থানায় উপস্থিত হয়ে সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার আরো খোঁজ করার কথা বলে আমার সাধারণ ডায়েরী এন্ট্রি করতে অস্বীকার করেন। তারা আমাকে উক্ত সাধারণ ডায়েরী এন্ট্রি করতে অস্বীকার করার বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নাই।’

মামলার এজহারে লেখা হয়, ‘অতঃপর বিগত ১৫/০৮/২০১৩ ইং তারিখ আমি উপরোক্ত সাক্ষীসহ আমার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনকে নিয়ে তদ্বিষয়ে এজাহার দায়ের করতে হাজারীবাগ ও গুলশান থানাসহ ডিএমপির অফিসে গেলে কেউ আমার এজাহার গ্রহণ করেন নাই এমনকি আমার ইতোপূর্বে লিখিত ডায়েরীও এন্ট্রি করতে সম্মত হন নাই। এতে আমার মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নেয় যে, আমার উপরোক্ত ছেলে ভিকটিম আবু হানিফা নোমান আলীকে উপরোক্ত আসামীগণের নিদের্শে এবং অন্যান্য আসামীগণের সহযোগিতায় ও যোগসাজসে আমার ছেলেকে অপহরণ ও গুম করে হত্যার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। উক্ত গুম ও খুন বাণিজ্যে উপরোক্ত আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে আমার ছেলে আবু হানিফা নোমান আলীকে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বেআইনীভাবে আটক করে খুনের উদ্দেশ্যে গুম ও অপহরণ করায় অপরাধ সংগঠিত করেছেন।’

এজহারে আরো বলা হয়, ‘উক্ত অপরাধের সাথে উল্লেখিত আসামীগণ ছাড়াও তৎকালীন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাসহ গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই এর সদস্যরা জড়িত মর্মে আমার বিশ্বাস। পরবর্তীতে আমার ছেলেকে দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে খুজাখুজি করিয়া এবং আমার আত্নীয় স্বজনদের সাথে পরামর্শ করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হইল ।’

কেএল/